আমি যখনই বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বহিরাগত’ এবং হকারদের প্রতি আক্রমণাত্মক আ্যটিটিউড নিয়ে লিখি, আমার ওয়ালে এসে এক দল লিখে যায় বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে এগুলো নেই, তাহলে আপনি এসব লিখছেন কেন। এতদিন এসব ইগনোর করেছি। আজকে ভাবছি লেখা দরকার। আমি ইউরোপ (সেন্ট্রাল ইউরোপীয়ান ইউনিভার্সিটি), আমেরিকা (নর্থইস্টার্ন, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি) ক্যানাডা (ডালহৌসী), ও তুরস্কে (মিডেল ইস্ট টেকনিকাল ইউনিভার্সিটি- চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি। ক্যামব্রিজে দুই সপ্তাহ একটা শর্ট কোর্স করতে গিয়েছি। অর্থাৎ উন্নত বিশ্বের বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ দেখার সুযোগ আমার হয়েছে। এখন এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তফাত কী? ঢাকা একটি ঘনবসতিপূর্ণ রাজধানী। ঢাকার প্রতি বর্গ কিলোমিটারে বাস করে ৩৪,০০০ মানুষ। ভিয়েনায় ৪৯০০ জন, ম্যাসাচুসেটস ক্যামিব্রিজে ৭১১৭ জন, বুডাপেস্টে ৩২০৯ জন, যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ শহরে ২১৭০ জন, আংকারায় ২৩৬ জন, হ্যালিফ্যাক্সে ৮০ জন।
এর মধ্যে সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহর হলো ম্যাসাচুসেটসের ক্যামব্রিজ। ঢাকার ঘণত্ব ক্যামিব্রিজের প্রায় ৪.৭ গুণ। এমআইটিতে কোথায় খেতাম? দুপুরে লাঞ্চের সময় ফুডট্রাক আসত। লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থেকে সস্তায় খাবার কিনতাম। ৩ ডলারের এই খাবার কেনার জন্য দুপুরে আসতাম। যেদিন দুপুরে খাওয়ার সময় পেতাম না, গ্রোসারির দোকান ছিল, সেখান থেকে স্যান্ডউইচ কিনে খেতাম সস্তায়। ফুডট্রাক কিন্তু এক ধরনের হকারই। তফাত হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা আসে তাদের পুঁজি কম, তাই ট্রাক নিয়ে আসতে পারে না। ট্রাক নিয়ে আসলে সঙ্গে দামটাও বেড়ে যেত। এমআইটিতে একটা মজার বিষয় ছিল। দুপুরের ঠিক আগে একটা না একটা সেমিনার থাকত। সেখানে ফ্রি ফুড দিত। সেমিনারে কথা শোনা হতো, সঙ্গে লাঞ্চও ফ্রি। বিভিন্ন ক্লাব ছিল। ক্লাবের জন্য বরাদ্দ অর্থ থাকত। তারাও ফ্রি ফুড দিত। এই ক্লাবগুলো রাজনৈতিক না। ফ্রি ফুড খাইয়ে ভোট চাইত না। চাইত এংগেজমেন্ট। সপ্তাহে তিন দিন অন্তত ফ্রি ফুড খাওয়া হতো। রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি। বারবিকিউর গন্ধ আসছে। একটা প্লেট নিয়ে দাঁড়িয়ে যেতাম। কথা বলতে বলতে লাঞ্চ সাড়া হয়ে গেল। এদেশে। মানুষ ভাববে, কী বলবে লোকে ফ্রি ফুড খাই। সেখানে লজ্জা নেই, কারণ সবাই জানে শিক্ষার্থীরা গরীব। আ্যজ ইফ খাবার জিনিসটা আল্লাহর দান। খাওয়া নিয়ে কোনো খোটা কেউ দেয় না।
২০১৪-তে এমআইটিতে আবার গেলাম। দেখি খাবারের জায়গাগুলোতে কমিউনিটি টেবিল। অর্থাৎ একটা বড় টেবিলে কেউ যদি গিয়ে বসে বুঝতে হবে সে চায় অন্যরা তার সঙ্গে গল্প করবে। আমি গিয়ে বসলাম। দেখি লিংগুইস্টিক ডিপার্টমেন্টের একটা ছেলে নিজে থেকেই গল্প করতে এলো। বুঝলাম এখানে মানুষ সবাই যোগাযোগের চেষ্টা করে। উদ্দেশ্য খারাপ কিছু না। ইন্টেলেকচুয়াল ডিসকাশন। দেশি-বিদেশি মানুষের মতবিনিময়।
এবার আসি মিডেল ইস্ট ট্যাকনিকাল ইউনিভার্সিটিতে। আংকারার তুলনায় ঢাকার ঘনত্ব ১৪৪ গুণ বেশি। মেটু ছিল শহর থেকে দূরে, একটা পাহাড় আর বন দিয়ে ঘেরা জায়গায়। সেখানে এক মাথা থেকে অন্য মাথায় হেঁটে যেতে ১ ঘণ্টা লাগবে হয়তো। সেখানে রিং সার্ভিস ছিল। একটা নীল রঙের বাস চারিদিক ঘুরতো। ফ্রি বাস। দশ মিনিট পরপর চক্কর দিতো ক্যম্পাস। সেখানে ক্যাফেটারিয়ার খাবারের প্রসঙ্গে আসি। ক্যফেটারিয়ার খাবার ছিল দারুণ। গরম ভাত, রুটি, একটা বিশাল বড় মুরগীর টুকরা, গরু, মাছ, কীমা দিয়ে রান্না করা শীমের বীচি, ডালের স্যুপ, ব্রকলি গাজর দিয়ে সব্জিী টমেটো স্যুপ, ফুলকপির স্যুপ। কখনো কখনো মিষ্টি আইটেম থাকত। কখনো ভাতটা বাদাম কিচমিচ দিয়ে রাধা হতো। কখনো বেগুন কীমা দিয়ে দারুণ পাতলিজান দিতো। কখনো দিতো পাস্তা। খাবার পর থাকতো টক দই বা ইউগার্ট। ভাতের বদলে কখনো দিত বুলগুর। বোরড হবার কোনো উপায় নাই। পর পর দুই দিন এক খাবার দিতো না। দাম ছিল সস্তা। উদাহরণ দিই কত সস্তা। একটা রুটির ভেতর পনির দিয়ে বাইরে যেই দামে বিক্রি করত তার সমান। সেই হিসাবে ৩০ টাকা ধরা যায়। কিন্তু আইটেম চারটা। সাবসিডাইজড। এবং খেয়েও তৃপ্তি। স্যুপ, ভাত, প্রোটিন, সব্জি, সঙ্গে আবার টক দই। সেখানে রাস্তায় খাবার বিক্রি হতো না একটা জায়গা ছাড়া। সেখানে তাজা মাছ বাইরে গ্রীল করা হতো। মাছটা দিত একটা রুটির ভেতর। পেঁয়াজ আর লেবু দিয়ে। এত ভালো খাবার থাকলে রাস্তায় কে খাবে? কখনো ক্লাসের চাপে দুপুরের খাবার মিস হলে গ্রোসারি স্টোর থেকে একটা চকলেট বার কিনে খেতাম। চকলেট বারের দাম আর ক্যাফেটারিয়ার খাবারের দাম প্রায় সমান। এগুলো বলছি- কারণ খাবারটা কত সস্তা তা বুঝাতে।
এখন আসি ইউরোপে। ইউরোপ ভিন্ন জায়গা। এখানে সব ডিপার্টমেন্টে কিচেন থাকে। সেখানে ইচ্ছা মতো পানি গরম করে কফি খাওয়া যায়। একটা ওপেন জায়গায় একটা সিংক, একটা মাইক্রোওয়েভ। চা কফি খেয়ে ডিশ ওয়াশারে ঢুকিয়ে রাখতে হয়। যার যার লকার আছে। সেখানে খাবার রাখে। বাসা থেকে অনেক শিক্ষার্থীর খাবার নিয়ে আসে। সেটা নিয়ে সারাদিন রাস্তায় ঘুরতে হয় না। প্রতিটা ডর্মে রান্না করার পর্যাপ্ত জায়গা। ক্যান্টিনের খাবারের দামও কম। তিন থেকে ৫ ইউরোতে তৃপ্তির সঙ্গে দুই-তিনটা আইটেম অন্তত খাওয়া যায়। ইনকামের তুলনায় সেই খাবার যথেষ্ট সস্তা। এছাড়া ক্যাম্পাসের কাছেই সস্তা রেস্টুরেন্ট থাকে। তবে ক্যান্টিনের খাবারের বৈচিত্র্যের কারণে লোকজন খুব একটা দূরে যায় না।
এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তাঘাট সিটি কর্পোরেশনের। অর্থাৎ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব সম্পদ না। এখানে মেট্রোরেলের স্টেশন আছে। বাইরের মানুষ যাওয়া-আসা করে। মেট্রোরেল হবার সময় যখন কেউ কেউ এটা নিয়ে বিরোধিতা করেছিল, তাদেরকে উন্নয়নবিরোধী-বাম ইত্যাদি বলা হয়েছিল। এখন কিছু শিক্ষার্থী নিজেদের স্বার্থে বাইরের মানুষকে ঢুকতে দিতে নারাজ। আবার তারাই মেয়েদের বাজে ভিডিও করে, স্লাট শেমিং করে। হাসিনা সরকারের সময় পহেলা বৈশাখের দিনে বিজনেস করার জন্য একবার এ রকম হকার উচ্ছেদ করা হয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল কিছু মানুষকে সেদিন দোকান দিয়ে বিজনেস করার সুযোগ করে দেওয়া। মাটির পুতুল বিক্রেতা ফেরিওয়ালাদের ঢুকতে না দিয়ে ক্রাফটের দোকান খোলা হয়েছিল, ডাবওয়ালাদের বের করে দিয়ে জুস সফট ড্রিংক্স বিক্রীর বন্দোবস্ত হয়েছিল। সারা বছর যারা কয়টা ফুল বিক্রির জন্য, কয়টা পতাকা, বেলুন, বাচ্চাদের খেলনা বিক্রি করার আশায় দিন কাটাত, তাদের সরিয়ে সেই স্টল দেওয়া হয়েছিল। খাবারও বিক্রি করা হয়েছিল বেশি দামে। সেই বছর মানুষের উপস্থিতিও ছিল কম।
এখন আসি গত ২৫ অক্টোবরের ঘটনায়। বাকবিতণ্ডা শুরু, হঠাৎ এসে একজন হকারের গাড়ির সামনে হাজির, পরবর্তীতে পিটিয়ে পালাতে বাধ্য করার মধ্য দিয়ে, এই ঘটনায় মানুষের রাগ ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ রকম ঘটনা যে এবারই প্রথম ঘটছে তা না। আগেও হঠাৎ হঠাৎ হকার বের করে দেওয়ার পেছনে উদ্দেশ্য ছিল, হয় চাদার পরিমাণ বাড়ান, অথবা নিজেদের কোনো লোক বসান। তো, এসব করতে গিয়ে একটা সমাজ দরদী ভাব দেখাতে হতো সেইসব শিক্ষার্থীদের। তাদেরও সিলেক্টিভ কিছু মানুষের সমর্থন দরকার ছিল। সেই সিলেক্টিভ মানুষেরা ছিল তৎকালীন ছাত্রলীগের কর্মীরা। এ রকম ঘটে কিছুদিন সবাই চা না খেয়ে মুড়ি না খেয়ে কাটায়। এক দিন ক্লাবে একজন শিক্ষকের সঙ্গে দেখা। বলছেন, আপার মেয়ে ফুচকা খেতে চাইছে। ক্যাম্পাসে সব ফুচকার দোকান উঠিয়ে দিয়েছে। বাধ্য হয়ে নিউমার্কেটে গেলাম। সেই সময়ের কথা বলছি। তখন এই অবস্থা চলছিল।
এখানে আমাদের কমিউনিটি টেবিল নাই। তার সাবস্টিটিউট আছে কিছু নিচু দেয়াল, ঘাস, গ্রিলের পাশে একটু কনক্রিট, কিছু প্লাস্টিকের চেয়ার। এখানে আছে কমিউনিটির জন্য সস্তা রাস্তার খাবার। একটা দেশের সংস্কৃতি এর আর্থ সামাজিক বাস্তবতার প্রেক্ষিতে গড়ে ওঠে। সেটাকে ভাঙতে গেলে সাবস্টিটিউট দিতে হয়। সুযোগ সুবিধা দিতে হয়। না হলে আজকে ভাঙলে কালকেই আবার গড়ে উঠবে এগুলো।
আমার দেশের জনসংখ্যা বেশি, তাই কি মানুষ মেরে ফেলব? আমার দেশের মানুষের আয় কম, তাই কি তাকে ঢ্যালঢ্যালা ডাল খাওয়াব? আমার দেশের মানুষের জন্য যথেষ্ট পার্ক উদ্যান নেই। তাই কী তাদের খেদিয়ে বের করে দিব? আমার দেশের মানুষের শ্রমটাই আছে বিক্রি করার মতো। তাদের মজুরি তো দিতেই পারি না আমরা, সেজন্য কি ভ্যান উল্টো করে দিব? রিকশা ভেঙে দিব?
এতটুকু সহনশীলতা যাদের নাই, এতটুকু ন্যূনতম দায় বোধ যাদের নাই তারা সমাজের কি উপকারে আসবে? কিছু বললেই বলে, পাগলকে নিজের বাসায় নিয়ে যান। অদ্ভুত মানুষের বুঝ। কারো সমস্যা বুঝতে চায় না। নিজেরটা ছাড়া। এক দিন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম, রাত নয়টায় রিকশা পাচ্ছি না ক্যাম্পাসে, কারণ বাইরের রিকশা ঢোকা নিষেধ। একজন প্রবাসী শিক্ষার্থী এসে সাজেশন দিয়েছে, হেটে চলাফেরা করা শেখেন। বিদেশে তো হেটেই চলি। এ রকম ছাত্ররা যখন বিদেশ যায়, ভুলে যায় হেটে যাওয়ার মতো ফুটপাথ নেই। রাতের বেলা হাটা নিরাপদ না। আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি, যারা দেশের সঙ্গে বিদেশ তুলনা করে তারা সিলেক্টিভ কিছু জিনিস দেখে। রাস্তা খালি দেখে, নিরাপত্তাটা ইচ্ছা করে দেখে না। ক্যাম্পাসে বেশি মানুষের আনাগোনা দেখে, জনসংখ্যার ঘণত্ব বা খোলা জায়গার অভাব দেখে না। তারা শুধু বিদেশ দেখতে চায়, বিদেশ কেন এবং কোন জনকল্যাণমুখী নীতির কারণে বিদেশ তা দেখতে চায় না। তারা উন্নত বিশ্বের ক্যম্পাসের মতো ক্যাম্পাস দেখতে চায়, ক্যাম্পাস যে সংবেদনশীলতার মধ্য দিয়ে মানবিক হয়ে ওঠে তা দেখতে চায় না। তারা চায়, তারা মানুষ পেটাবে, কিন্তু কেউ পাল্টা জবাব দেবে না। একটু রাগও দেখাতে পারবে না। বিড়ালের মতো মিউ মিউ করে হেটে চলে যাবে।
যাদের বিদেশ নিয়ে প্রশ্ন, তাদের জানিয়ে রাখি, পুরো ছাত্রজীবন গরীবত্বের মধ্যে কাটিয়েছি। এমন দিন গেছে দুপুরে না খেয়ে কাটিয়েছি, হেটে চলাফেরা করেছি। পেস্ট্রির দোকানে বাইরে দিয়ে কেকের দিকে তাকিয়ে থেকেছি। মা যখন ফোন করে বলত, জন্মদিনে একটা কেক কিনে খা, দোকানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ভেবেছি, যেদিন টাকা হবে কেক খাব। আমি জানি আমাদের ক্যাম্পাসে এ রকম অনেক ছাত্রছাত্রী আছে। তারা গরিবের কষ্ট ভালো মতোই বুঝে। নির্যাতিতের পক্ষে এমনি এমনি দাঁড়াই না আমরা। নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা দিনরাত পরিশ্রম করে। বিদেশ গিয়ে আমরাও তাদের মতোই চলেছি। বাড়তি কষ্ট ছিল ভাষার। সমাজবিচ্ছিন্ন থাকতে হয়েছে যেমন, ভালোবাসাও পেয়েছি অগাধ। ভালোবাসা, সহনশীলতা আমাদেরকে অনেক কিছু বুঝতে দেয়। যারা বুঝতে চায় না তারা মনে করে দুনিয়াটা যুদ্ধের ময়দান, সবকিছু জোর করে হাসিল করতে হয়। এখন অনেক টাকা খরচ করে খাবার খাবে, চিকিৎসা নেবে, শিক্ষা নেবে, নাকি সকলের জন্য মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করবে এই সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের নিজেদের। এক দিক দিয়ে হকার পিটিয়ে, অন্যদিক থেকে মাদকাসক্তি নির্মূল করার কথা বলে। কিছুর সঙ্গে কিছুর মিল নেই। এই মিল না থাকার মানে শাক দিয়ে মাছ ঢাকা। দেশের কনটেক্সট না বুঝে, ইতিহাস না দেখে, দেশকে বিদেশ বানানোর কথা বলে প্রকল্প নিলে বদহজমই হবে। এর বেশি কিছু হবে না।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
কেকে/এজে