বিদ্যুৎ ছাড়া শিল্প অচল, পানি ছাড়া কৃষি ও জীবন অচল। এই দুই খাতের টেকসই উন্নয়ন মানেই বাংলাদেশের টেকসই অগ্রযাত্রা। দক্ষ প্রকৌশলীরা থাকলে প্রকল্প ব্যয় কমে, বাস্তবায়নের গতি বাড়ে এবং সেবার মান উন্নত হয়—অর্থাৎ প্রকৌশলীদের যথাযথ মূল্যায়ন মানেই জাতীয় লাভজনক বিনিয়োগ—এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ পানি ও বিদ্যুৎ প্রকৌশলী সমিতির মহাসচিব শাহেদুল আজিম সজল।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) রাজধানীর পানি ভবনে বাংলাদেশ পানি ও বিদ্যুৎ প্রকৌশলী সমিতি (বিডাব্লিউপিইএ) আয়োজিত “পানি ও বিদ্যুৎ খাতে টেকসই অবকাঠামো ও কৌশলগত পরিকল্পনা: ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে প্রকৌশলীদের ভূমিকা” শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের মহাসচিব প্রকৌশলী মো. শাহেদুল আজিম সজল এবং প্রচার সম্পাদক প্রকৌশলী ড. মো. সাইফ উদ্দিন। অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং পানি সম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান উপস্থিত ছিলেন।
শাহেদুল আজিম সজল বলেন, “বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য পানি ও বিদ্যুৎ খাতের টেকসই অগ্রগতি অপরিহার্য। আর এই উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি হচ্ছেন প্রকৌশলীরা, যারা মাঠপর্যায়ে, প্রকল্পে এবং কার্যালয়ে নিরলস পরিশ্রম করে দেশের উন্নয়নচক্র সচল রাখছেন।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ, যেখানে পানি ও বিদ্যুৎ খাত সরাসরি দেশের অর্থনীতি, কৃষি, শিল্প ও জনজীবনের সঙ্গে যুক্ত। বিদ্যুৎ ছাড়া শিল্প অচল, পানি ছাড়া কৃষি ও জীবন অচল। তাই এই দুই খাতের টেকসই উন্নয়ন মানেই বাংলাদেশের টেকসই অগ্রযাত্রা।”
মহাসচিব বলেন, “স্বাধীনতা-পরবর্তী অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং প্রকৌশলীদের অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ পানি ও বিদ্যুৎ প্রকৌশলী সমিতি এক ঐতিহ্যবাহী ভূমিকা রেখে চলেছে। বাংলাদেশ এখন এসডিজি-২০৩০ এবং টেকসই উন্নয়নের ২০৫০ লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের পথে দ্রুত এগিয়ে চলছে। এই অভিযাত্রায় অনেক ক্ষেত্রেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রকৌশলীরা ২৪ ঘণ্টা মাঠ পর্যায়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে বলতে হয়, এই প্রকৌশলীরাই নানা সীমাবদ্ধতার মুখে পড়েছেন—বেতন বৈষম্য, ধীর পদোন্নতি, গবেষণা ও প্রশিক্ষণে সীমিত সুযোগ তাদের কর্মপ্রেরণাকে বাধাগ্রস্ত করছে।”
শাহেদুল আজিম সজল বলেন, “প্রকৌশলীদের জন্য একটি সমন্বিত উন্নয়ন কৌশল প্রণয়নের আহ্বান জানিয়ে পাঁচটি সুপারিশ তুলে ধরেন—প্রকৌশলীদের ন্যায্য বেতন ও পদোন্নতি কাঠামো প্রণয়ন করা; দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে নিয়মিত প্রশিক্ষণ, বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার সুযোগ বৃদ্ধি; উদ্ভাবনী ধারণা বাস্তবায়নে প্রশাসনিক ও আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করা; মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালনকারী প্রকৌশলীদের জন্য নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও প্রণোদনামূলক পরিবেশ সৃষ্টি; সরকারের নীতি প্রণয়ন পর্যায়ে প্রকৌশলীদের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা।”
তিনি বলেন, “প্রকৌশলীদের সঠিক মূল্যায়ন শুধু মানবিক নয়, এটি অর্থনৈতিক ও কৌশলগত দিক থেকেও অপরিহার্য। দক্ষ প্রকৌশলীরা থাকলে প্রকল্প ব্যয় কমে, বাস্তবায়ন গতি বাড়ে, সেবার মান উন্নত হয় এবং বিদ্যুৎ ও পানি খাত লাভজনক হয়ে ওঠে।”
মহাসচিব আরও বলেন, “আমরা এখন উন্নয়ন অভিযাত্রার এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি। এই যাত্রায় টেকসই অবকাঠামো ও কৌশলগত পরিকল্পনার নেতৃত্ব দিতে হবে প্রকৌশলীদের। দক্ষ প্রকৌশলী গঠনই টেকসই অবকাঠামোর মূলভিত্তি, আর প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও প্রণোদনাই হবে আগামী দিনের সর্বোত্তম ‘কৌশলগত বিনিয়োগ’।”
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, “সরকারের সদয় বিবেচনায় প্রকৌশলীদের জন্য একটি ন্যায্য, নিরাপদ ও সম্মানজনক কর্মপরিবেশ নিশ্চিত হবে।”
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পানি ও বিদ্যুৎ প্রকৌশলী সমিতির সভাপতি প্রকৌশলী মো. শাহজাহান সিরাজের সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মো. এনায়েত উল্লাহ, বিডব্লিউপিইএ’র সদস্যবৃন্দ, আইইবির নেতৃবৃন্দসহ পানি ও বিদ্যুৎ খাতের ৯০০ এর বেশি প্রকৌশলী উপস্থিত ছিলেন।
কেকে/এজে