একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, গত দুই সপ্তাহ ধরে নাসিরুদ্দীন দলীয় কার্যক্রমে তেমন সক্রিয় নন। এমনকি গত ১৭ অক্টোবর গঠিত দলের নতুন অঙ্গসংগঠন ‘জাতীয় শ্রমিক শক্তি’-এর আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেননি তিনি। যেখানে তারই উদ্যোগে গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল।
বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয় বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে। কিন্তু বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে যোগাযোগ করা হলেও দীর্ঘসময় কোনো মন্তব্য করেননি নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তার এই নিরবতায় পদত্যাগের বিষয়টি আরো বেশি বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠে। ইমেজ সংকটে পরে এনসিপি। তারা বিভিন্ন প্লাটফর্মে আলোচনা করে নিজেদের মধ্যে। বিষয়টি অস্বীকার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও পোস্ট করেন একাধিক নেতা।
সর্বশেষ গতকাল রাতে পদত্যাগ প্রসঙ্গে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যে সংবাদটি প্রকাশ পেয়েছে তা সত্য নয়। আমি এনসিপির সঙ্গে আছি, এনসিপির সঙ্গেই সরকার গঠন পর্যন্ত থাকব।’
অন্যদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এনসিপির এই অভ্যন্তরীণ সংকট নতুন নয়; কিন্তু এবার এটি নেতৃত্ব রূপান্তরের সংঘাতে পরিণত হয়েছে। তাদের ভাষ্য, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া গণঅভ্যুত্থানের সাবেক সমন্বয়ক ও অন্তবর্তী সরকারের একজন প্রভাবশালী উপদেষ্টা। তার মতো ব্যক্তির যোগদান দলকে এনসিপিকে নতুন প্রাণ দিতে পারে। কিন্তু পুরোনো নেতৃত্ব যদি জায়গা না ছাড়ে, তবে দলটি দ্রুত ভাঙনের মুখে পড়তে পারে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, এনসিপি এখন এমন এক অবস্থানে আছে যেখানে নতুন নেতৃত্বের প্রয়োজন। তবে পরিবর্তনের প্রক্রিয়াটি যদি অন্তর্ভুক্তিমূলক না হয়, তবে ‘গৃহদাহ’-ই দলের প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব মীর আরশাদুল হক খোলা কাগজকে বলেন, দলের মধ্যে মতভেদ থাকে। এ নিয়ে কখনো কখনো মান-অভিমান দেখা দেয়। হয়তো এমন কিছু হতে পারে। যেটা চাওয়া-পাওয়া কিংবা মতপার্থক্যের বিষয়। যা নিয়ে তিনি অব্যাহতি করবেন- এমনটা কোথাও বলতে পারেন। যেটা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম খবর প্রকাশ করেছে। তবে তিনি এখনো পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা বা অব্যাহতিপত্র দেয়নি। এটা আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়ার এনসিপিতে সম্ভাব্য যোগদান সঙ্গে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর পদত্যাগের সম্পর্ক আছে কিনা জানতে চাইলে মীর আরশাদুল হক জানান, দলীয় ফোরামে এখনো পর্যন্ত কোনো ব্যক্তি বা উপদেষ্টা এনসিপিতে যোগ দিলে তাকে কিভাবে রাখা হবে কিংবা কোন পদ দেওয়া হতে পারে- এমন কোনো আলোচনা-ই হয়নি। তিনি (আসিফ মাহমুদ) আদৌ এনসিপিতে যোগ দেবেন কিনা সেটাও নিশ্চিত নয়। আর যদিও যোগদান করে, তাহলে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর পদে তাকে রাখতে হবে- বিষয়টি এমনও নয়। প্রয়োজনে নতুন পদ সৃষ্টিও করা হতে পারে। সুতরাং একজনের পদ আরেকজনকে বসানো নিয়ে যে আলাপ হচ্ছে; এটি সঠিক নয়।
এ ছাড়া জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন খোলা কাগজকে বলেন, নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর যে পদত্যাগ বিষয়টি ছড়ানো হচ্ছে- সেটা সঠিক নয় এবং এটা কীভাবে ছড়াল সেটাও আমরা জানি না।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়ার এনসিপিতে সম্ভাব্য যোগদান করবেন এমন কোনো আলোচনা হচ্ছে কিনা জানতে সামান্তা শারমিন বলেন, উনি (আসিফ মাহমুদ) একজন উপদেষ্টা। উনি স্বাধীনভাবে ওনার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে আপনার যা শুনছেন তা একেবারেই সত্য নয়।
কেকে/এআর