ক্ষমতা হারানোর এক বছর পরও নিজের কৃতকর্মের জন্য কোনো অনুশোচনা নেই শেখ হাসিনার ও তার দোসরদের। বরং রাষ্ট্রে বিভিন্ন সংস্থাকে উসকে দিয়ে দেশে গৃহযুদ্ধ বাধানোর চেষ্টা করেছে হাসিনা। তবে তার সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এ কথাগুলো বলেন। শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে মামলায় আজ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে।
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘রাষ্ট্রের মধ্যে শেখ হাসিনা একটা সিভিল ওয়ার (গৃহযুদ্ধ) লাগানোর চেষ্টা করেছেন। সেনাবাহিনীকে বলার চেষ্টা করেছেন, তোমাদের অফিসারদের বিচার হয়, তোমরা কেন রুখে দাঁড়াচ্ছ না?’
শেখ হাসিনার পাশাপাশি এ মামলার অপর দুই আসামি হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এর মধ্যে মামুন নিজের দোষ স্বীকার করে ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হয়েছেন।
ট্রাইব্যুনালে গতকাল চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, যারা এখানে আসামি হয়েছেন, তাদের (শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান) মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই। এত বড় অপরাধ করেছেন, দুনিয়ার সবাই জানে এই অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তিনিও জানেন; কিন্তু কখনোই তার মধ্যে কোনো ধরনের অনুশোচনা পরিলক্ষিত হয়নি। উল্টো যারা-তার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন, সাক্ষ্য দিচ্ছেন, তাদের হত্যা করার হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের বাড়িঘর ধ্বংস করে দেওয়ার কথা বলছেন। তাদের লাশগুলো বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেওয়ার কথা বলছেন।
তাজুল ইসলাম বলেন, সর্বশেষ তিনি (শেখ হাসিনা) রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে গণ্ডগোল লাগানোর চেষ্টা করেছেন। তিনি সেনাবাহিনীকে উসকে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। সেনাবাহিনীকে বলার চেষ্টা করেছেন, তোমাদের অফিসারদের বিচার হয়, তোমরা কেন রুখে দাঁড়াচ্ছ না? রাষ্ট্রের মধ্যে একটা সিভিল ওয়ার (গৃহযুদ্ধ) লাগানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী সেই পাতা ফাঁদে পা দেয়নি। বাংলাদেশের জনগণ সেই পাতা ফাঁদে পা দেয়নি। যারা পারপিট্রেটর (অপরাধী) ছিল, তাদের বিচারের মুখোমুখি করার জন্য তাদের অঙ্গীকারের প্রতি দৃঢ় আছেন। আদালতে তাদের নিয়ে এসেছেন। বিচারের প্রক্রিয়া স্মুথলি সামনে পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কোনো উসকানিতে কেউ পা দেয়নি।
চিফ প্রসিকিউটর আরো বলেন, এ রকম নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ, পুরো প্রজন্মকে হত্যা করে ফেলার চেষ্টা, ৩৫ হাজার মানুষকে আহত করা, অঙ্গহানি করা, এরপরও সামান্যতম রিমোর্স (অনুশোচনা) না থাকা। এখানে শিশু ছিল, নারী ছিল, মজুর ছিল, ছাত্র ছিল, তাদের হত্যা করতে তার বুক কাঁপেনি। এখন পর্যন্ত তার মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই। সুতরাং সর্বোচ্চ শাস্তিটা তার অবশ্যই প্রাপ্য।
মামলার রায় কবে, জানা যাবে ১৩ নভেম্বর
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিচারকাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ১৩ নভেম্বর এ মামলার রায়ের দিন নির্ধারণ করবেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া ১২টায় ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ দিন ধার্য করেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
এর আগে গত বুধবার বিকালে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেছেন, এ মামলায় পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত (স্টেট ডিফেন্স) এবং উপস্থিত রাজসাক্ষী (আসামি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়েছে। প্রসিকিউশনের পক্ষে আমরা জবাব দেব। তবে কিছু অংশ আমরা উপস্থাপন করে জবাব দিয়েছি। চিফ প্রসিকিউটর ও অ্যাটর্নি জেনারেল সমাপনী বক্তব্য রাখবেন। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে এ মামলার রায়ের জন্য দিন ধার্য হবে।
কেকে/ এমএস