রোববার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫,
১০ কার্তিক ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

রোববার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: ‘শিগগিরই’ জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ দেবে ঐকমত্য কমিশন      বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হবে : তারেক রহমান      রাউজানে প্রতিপক্ষের গুলিতে যুবদল নেতা খুন      জরিপে জানা গেল ঢাকাবাসীর মাথাপিছু বার্ষিক আয়      স্ত্রীর মৃত্যুর ১১ ঘণ্টা পর প্রাণ গেল স্বামীর      সবাই সংঘাতের জন্য মুখিয়ে আছে : তথ্য উপদেষ্টা      নদী বাঁচলে পরিবেশও টিকে থাকবে : রিজওয়ানা হাসান      
খোলাকাগজ স্পেশাল
সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে কঠোর বিএনপি
মনোনয়ন ঘিরে বিশৃঙ্খলা করলেই কঠোর ব্যবস্থা
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশ: শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৫, ৯:৪৫ পিএম
ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে কূটনৈতিক, সাংগঠনিকসহ বিভিন্ন বিষয় সামনে রেখে কৌশলে অগ্রসর হচ্ছে বিএনপি। বিশেষ করে প্রার্থী বাছাই ও দলীয় শৃঙ্খলার রক্ষা দলটির সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। 

এমন অবস্থায় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিচ্ছে বিএনপির হাইকমান্ড। এগুলো হচ্ছে—নিজেদের ঐক্য ধরে রাখা, বিশৃঙ্খলা না করা এবং যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে তার পক্ষে এক হয়ে কাজ করা। তা না হলে কেউ বিশৃঙ্খলা করলে আরো কঠোর হবে বিএনপি। ইতোমধ্যে দ্বন্দ্ব মেটাতে সবার মাঝ্যে ঐক্য ধরে রাখার বার্তা দিচ্ছেন বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা। 

সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ডেকে গুলশান কার্যালয়ে কথা বলে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। অবশ্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের ডাকার ক্ষেত্রে কেউ কেউ পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করেছেন। কয়েকজন মনোনয়নপ্রত্যাশী জানান, সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পছন্দের না হলেই তাকে ডাকা হয় না। আবার কেউ পেশাগত কারণে দেশের বাইরে থাকলেও তাকে অবহিত করা হয়নি।

জানা গেছে, সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কঠোর বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থীকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। তবে হাইকমান্ডের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির পরও দেশের বিভিন্ন স্থানে কিছু নেতাকর্মীর চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা, দখলবাজি এবং দলীয় বিভেদ সৃষ্টির অভিযোগ নিয়মিত কেন্দ্রে জমা হচ্ছে। এসব ঘটনায় একদিকে যেমন দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে, তেমনি যোগ্য ও ত্যাগী নেতাকর্মীরা কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন। ইতোমধ্যে সাত হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে বহিষ্কার, শোকজ ও পদাবনতিসহ বিভিন্ন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অনেকের বহিষ্কারাদেশ তুলে নিলেও নিজেকে শোধরাতে পারেননি। তারা আগের মতো অপকর্মে নিজেদের জড়িয়ে দলকে বিব্রত করছে বলে বিএনপির সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।

জানা যায়, গত ১৯ অক্টোবর সিলেট বিভাগের নির্বাচনি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বৈঠকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বার্তা মনোনয়ন প্রত্যাশীদের জানিয়ে দেন। 

মির্জা ফখরুল বলেন, একাধিক জরিপের মাধ্যমে দল সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রার্থীকেই বাছাই করবে। সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য নেতাকেই দল মনোনয়ন দেবে। কেউ যদি দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করেন, তার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মোট কথা, সবাইকে ধানের শীষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। অবশ্য বিভিন্ন আসনে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী আলাদা আলাদা কর্মসূচি করায় স্থানীয় পর্যায়ে দলের ভেতরে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব-বিভেদ তৈরি হয়েছে। এ বিভেদ মেটাতেই সংশ্লিষ্টদের ডেকে দলের হাইকমান্ডের বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা চেষ্টা করছি সম্ভাব্য প্রার্থীদের মনোভাব বোঝার। তাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বার্তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। কেননা, সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রার্থীকেই দল বাছাই করবে। দল যখন একক প্রার্থী ঘোষণা দেবে, তখন সব মনোনয়নপ্রত্যাশীকে মনোমালিন্য ভুলে গিয়ে ধানের শীষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলীয় প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে কাজ করতে হবে।

জানা গেছে, আসন্ন সংসদ নির্বাচন ঘিরে দলীয় নেতাকর্মীদের অভ্যন্তরীণ বিরোধ নিরসন বিএনপির অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা ও কোন্দলের অভিযোগ বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিসে নিয়মিত জমা হচ্ছে। সম্প্রতি কুমিল্লা, চাঁদপুর, নরসিংদী, চট্টগ্রাম, সুনামগঞ্জ, বরিশালসহ বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় নেতারা বিভিন্ন বিষয়ে কেন্দ্রে অভিযোগ জমা দিয়েছেন। কেন্দ্র এবং স্থানীয় বিএনপি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থাও নিচ্ছে। তবুও দ্বন্দ্ব নিরসন হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন। 

গত ১৮ অক্টোবর নরসিংদী জেলা যুবদলের সভাপতি ও জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহসিন হোসাইন বিদ্যুতকে শোকজ করেছে কেন্দ্রীয় ও নরসিংদী জেলা বিএনপি। মূলত গত ১১ ও ১৩ অক্টোবর রায়পুরায় রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা নিয়ে অনুষ্ঠিত সভায় দলীয় আলোচনা না করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অন্যদের নামে অপ্রীতিকর মন্তব্য করেন বিদ্যুত। এ ছাড়া তার আশ্রয়ে স্থানীয় কিছু নেতাকর্মী দখল-চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগ ইতোমধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় জমা হয়েছে। জেলা যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি শাহান শাহ শানু বলেন, রিকশাওয়ালাদের কাছ থেকে চাঁদা তোলা থেকে শুরু করে নানা রকম অন্যায় কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছেন বিদ্যুত ও তার লোকজন। বিদ্যুতের বড় ভাই আলমগীর হোসেন যেন চাঁদাবাজির ইজারাদার নিয়েছেন। সাবেক এমপি শামস উদ্দিন এছাক এর ছেলে মাসুদকে হত্যা মামলার আসামি বিদ্যুতের সাজা হয়েছিল। তিনি নরসিংদী সরকারি কলেজ সংসদের জিএস বিল্লাল হোসেন রনি হত্যারও আসামি। 

এসব মামালায় ৪ বছর কারাবরণ করেছেন। নরসিংদী জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি সাদেকুর রহমান সাদেক ও আশরাফুল খুনের মামলার আসামিও বিদ্যুৎ। তাকেই সর্ব প্রথম পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। সর্বশেষ গত ৪ অক্টোবর নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল শামীম আনোয়ারের ওপর তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে বর্বর হামলা করেছে। বিদ্যুৎ নিজ দলের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা খুনি ও চাঁদাবাজ। তিনি নিজ দলের নেতাকর্মীদেরকে খুন করে বিএনপিকে কলংকিত করেছেন বলে জানান শাহান শাহ শানু।

জানা যায়, বিদ্যুৎ ২০১২ সালে নরসিংদী জেলা যুবদলের সভাপতি ও ২০১৫ সালে আহ্বায়ক এবং ২০২২ সালে আবারো সভাপতি হন। পরে এ বছরই তাকে জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। একসঙ্গে দুই পদের অপব্যবহার করে চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজিতে জড়িয়েছেন। নিজে একাধিক পদে থাকলেও জেলা যুবদলের ৭২টি ইউনিটের একটিরও কমিটি দিতে পারেননি। তা ছাড়া দলীয় বিভাজন ও নানা কারণে রায়পুরা উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করেছে নরসিংদী জেলা বিএনপি। পাশাপাশি জেলা বিএনপির সহসভাপতি জামাল আহমেদ চৌধুরীকেও শোকজ করেছে বিএনপি। বিষয়টি নিশ্চিত করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও নরসিংদী জেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুল কবির খোকন বলেন, অন্যায়কারী কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। 

জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত নোটিসে উল্লেখ করা হয়, রায়পুরা উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত সভায় ৩১ দফা কর্মসূচি নিয়ে কোনো আলোচনা না হয়ে বরং দলীয় বিভাজন, বিভ্রান্তি সৃষ্টি, ব্যক্তিগত আক্রমণ ও হুমকিমূলক বক্তব্য দেওয়া হয়—যা দলীয় শৃঙ্খলা ও বিএনপির গঠনতন্ত্রবিরোধী কার্যক্রম। দলীয় ব্যানার ও কর্মসূচির নামে এমন বক্তব্য কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে দলের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে। এজন্য পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত রায়পুরা উপজেলা বিএনপির সব সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে মহসিন হোসাইন বিদ্যুৎ বলেন, তিনি শোকজের জবাব দিয়েছেন। তবে তিনি কারও নাম ধরে বা কারোর বিরুদ্ধে বক্তব্য দেননি। তা ছাড়া তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণসহ অন্যান্য অভিযোগ ভিত্তিহীন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতর সূত্র জানায়, নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন আসনে বেশকিছু সমস্যাসংক্রান্ত অভিযোগ সম্প্রতি তাদের কাছে নিয়মিত আসছে। যেমন চাঁদপুর-২ আসনে ৩ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী। এরা হলেন অধ্যাপক ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম, তানভীর হুদা ও ড. জালাল উদ্দিন। তার মধ্যে তানভীর ও জালালের অনুসারীরা একে অপরের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছেন। এই দুই নেতার অনুসারীরা আধিপত্য বিস্তারে বিভিন্ন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়েছে। মতলব উত্তরের একসময়ের বিএনপির সহসভাপতি সরোয়ার মজুমদারকে কুপিয়ে জখম করে জালালের অনুসারীরা। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর প্রকাশ্যে দিবালোকে মতলব উত্তর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মামুন সরকারের (জালালের অনুসারী) চোখ উপরে ফেলে বিজয়োল্লাস করে তানভীর হুদার অনুসারীরা। ওই ঘটনার জেরে মতলব উত্তর থানার মামলায় তানভীর হুদার অনুসারীরা জেলও খেটেছেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে তানভীর হুদা ও জালাল উদ্দিন এর অনুসারীরা মাদক, চাঁদাবাজি, অবৈধ বালু উত্তোলনসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছে। এতে স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ। 

সম্প্রতি ড. জালালের অনুসারী নারায়ণপুর ইউনিয়নের সভাপতি আনোয়ার ভূঁইয়া, মতলব দক্ষিণ উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি মিরাজ মাহমুদ জিসান, যুবদলের আহ্বায়ক খায়রুল হাসান বেনুকে সংগঠন থেকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব প্রকার পদ থেকে বহিষ্কার করার পাশাপাশি তাদের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সম্পর্ক না রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়। তাদের বিরুদ্ধে কিশোর গ্যাং ও চিহ্নিত অপরাধীদের দিয়ে মাদক বিক্রি ও সরবরাহের অভিযোগও রয়েছে। এমনকি সংগঠন খায়রুল হাসান বেনুর বিরুদ্ধে মতলব উত্তর থানায় জিডি করেছে। অথচ সাংগঠনিক নির্দেশনা উপেক্ষা করে ড. জালাল উদ্দিন বহিষ্কৃত বেনুকে তার রাজনৈতিক সচিব হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন। অপরদিকে তানভীর হুদার অনুসারী চাঁদপুর জেলা বিএনপির সদস্য মান্নান লস্করকে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে প্রাথমিক সদস্য পদসহ দল থেকে বহিষ্কার করা হয় এবং তিনি কারাবরণ করেন। অন্যদিকে ডা. শামীমের অনুসারীরা কোনো গ্রুপের সঙ্গে বিবাদে না জড়িয়ে সামাজিক ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের অনেকেই মনে করেন আগামী নির্বাচনে ক্লিন ইমেজ, মার্জিত ও উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিকে মনোনয়ন না দিলে এরুপ অন্তর্কোন্দলে নেতাকর্মীদের মনে চরম অসন্তোষ তৈরি হবে এবং আগামী নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

এদিকে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেনের অনুসারী এবং মাইটভাঙ্গা ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য মোহাম্মদ হাসানকে গত ১৪ অক্টোবর ২৪ বোতল বিদেশি মদসহ গ্রেফতার করেছে পুলিশ। স্থানীয়দের অভিযোগ, গ্রেফতারকৃত হাসান দীর্ঘদিন ধরে বেলায়েত হোসেনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে এলাকায় মাদক ব্যবসা ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। তার সহযোগী হিসেবে রয়েছেন মো. হাসান প্রকাশ (দানা হাসান) ও সাব্বির মাহমুদসহ পাঁচ-ছয়জন। মাস তিনেক ধরে তারা প্রকাশ্যেই সব করছেন। স্থানীয়রা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেনের সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন।

সম্প্রতি বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তরে একটি লিখিত অভিযোগে বলা হয়—গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর এস আলম গ্রুপের ১৪টি বিলাসবহুল গাড়ি সরিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ওই সময়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এসএম মামুন মিয়াকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তবে কিছুদিনের মধ্যেই কেন্দ্রীয় বিএনপি বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করলে স্থানীয় নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হন। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভে বক্তারা এনামের স্থায়ী বহিষ্কার দাবি করে বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে আঁতাত করে ব্যবসা করেছেন এনাম, যার কারণে বিএনপির তৃণমূল কর্মীরা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তার চাঁদাবাজি, শিল্প প্রতিষ্ঠান দখল, রাজনৈতিক আঁতাত ও অডিও ফাঁসÑ স্থানীয় নেতাকর্মীদের ক্ষোভে দলের ভাবমূর্তি এখন প্রশ্নের মুখে। তাকে নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, কোলাগাঁও এলাকার অন্তত সাতটি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানে এনামের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এনামের অনুসারী আবছার ও কালুর নেতৃত্বে গাছ কেটে বিক্রি করে ২ থেকে ৪ কোটি টাকার সম্পদ লুটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাহাড়ি এলাকায় চোলাই মদের ব্যবসাও নিয়ন্ত্রণ করছেন এনাম।

এনামকে ঘিরে বিতর্ক আরও ঘণীভূত হয় দুটি অডিও ফাঁস প্রকাশ্যে আসায়। প্রথম অডিও (৪ মিনিট ২৭ সেকেন্ড) : বিএনপির সদস্য সচিব খোরশেদ আলম এবং উপজেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি সামশুল ইসলামের কথোপকথন। এতে খোরশেদকে সামশুলকে আশ্বস্ত করতে শোনা যায়Ñ তিনি গ্রেফতার হবেন না, ভবিষ্যতেও কোনো মামলায় নাম আসবে না। খোরশেদ বলেন, এনাম ভাই বলেছে এটা টেকনিক্যালি কভার করবেন। দ্বিতীয় অডিও (৬ মিনিট ৪ সেকেন্ড) : সামশুল ইসলাম ও সৌদি প্রবাসী জিয়াউল হকের কথোপকথনে উঠে আসে গাড়ির দাবি, তেলের ব্যবসায় ভাগ চাওয়ার প্রসঙ্গ এবং শিল্পের লাভের অঙ্ক ভাগাভাগি নিয়ে আলোচনা। সেখানে খোরশেদ আলম ও এনামের নামও আসে।

উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব খোরশেদ আলম দাবি করেন, তাকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন এসেছিল, শুভেচ্ছা বিনিময় ছাড়া আপত্তিকর কিছু হয়নি। গাড়ি বা ব্যবসা ভাগ চাওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। এ বিষয়ে এনামুল হক এনাম বলেন, তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। 

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীর বালু লুটের ডন হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে তাহিরপুর উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতা ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কামরুল ইসলাম ও আনিসুল হক। বিগত ১৬ বছর আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে নির্বিঘ্নে ব্যবসা করায় তাদের বিরুদ্ধে কখনো কোনো মামলা পর্যন্ত হয়নি। ৫ আগস্টের পরে যাদুকাটা নদীর বালুখেকো সিন্ডিকেটের প্রধান ছাত্রলীগ নেতা শাহ রুবেল আহমদকে কব্জা করে বালুমহাল নিজের হাতে তুলে নেন কামরুল ও আনিসুল বাহিনী। রুবেল ডিবি হারুনের ব্যবসায়িক পার্টনারও ছিলেন। ৫ আগস্টের পরে অবৈধ বাণিজ্য টিকিয়ে রাখতে সুনামগঞ্জে কামরুল ও আনিসুল গ্রুপের ওপর ভর করে রুবেল। এর মাধ্যমে বালুমহালের ব্যবসার পাশাপাশি মেঘালয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ নেন রুবেল। এ ছাড়া বিভিন্ন ঘাট ও বাজার থেকে কামরুল ও আনিসুল গ্রুপের নামে কোটি টাকা চাঁদা তোলা হয়। কৃষকদল নেতা লিংকন জানান, তাহিরপুরের যাদুকাটা নদীর কোটি কোটি টাকার বালু লুটপাটের তথ্য সেনাবাহিনীকে জানানোর কারণে কামরুল গ্রুপের সদস্যরা আমাকে আক্রমণের হুমকি দিয়েছে।

কেকে/এজে
আরও সংবাদ   বিষয়:  কঠোর বিএনপি   মনোনয়ন ঘিরে বিশৃঙ্খলা   কঠোর ব্যবস্থা   সম্ভাব্য প্রার্থী  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

বানারীপাড়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাঠের সাঁকো দিয়ে চলাচল
‘শিগগিরই’ জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ দেবে ঐকমত্য কমিশন
নীলফামারীতে সাংবাদিকদের প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত
একটি মৌলবাদী দল ছলনা ও বিভ্রান্তি করে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করছে
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে বৃদ্ধ নিহত, আহত ৩০

সর্বাধিক পঠিত

১৭ বছর আন্দোলন করে তারেক রহমান ভোটের অধিকার ফিরিয়ে এনেছেন
শ্রীমঙ্গলে অপহৃত কিশোরী সিলেট থেকে উদ্ধার, গ্রেফতার দুই
বাগাতিপাড়ায় অপপ্রচারের প্রতিবাদ সাংবাদিক নেতা কামরুল ইসলামের
চরম সংকটে লবণ শিল্প, আতঙ্কে চাষিরা
মোংলা থানায় আধুনিক ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট উদ্বোধন

খোলাকাগজ স্পেশাল- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close