রোববার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫,
১০ কার্তিক ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

রোববার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: ‘শিগগিরই’ জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ দেবে ঐকমত্য কমিশন      বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হবে : তারেক রহমান      রাউজানে প্রতিপক্ষের গুলিতে যুবদল নেতা খুন      জরিপে জানা গেল ঢাকাবাসীর মাথাপিছু বার্ষিক আয়      স্ত্রীর মৃত্যুর ১১ ঘণ্টা পর প্রাণ গেল স্বামীর      সবাই সংঘাতের জন্য মুখিয়ে আছে : তথ্য উপদেষ্টা      নদী বাঁচলে পরিবেশও টিকে থাকবে : রিজওয়ানা হাসান      
অর্থনীতি
চরম সংকটে লবণ শিল্প, আতঙ্কে চাষিরা
মো. নেজাম উদ্দিন, কক্সবাজার
প্রকাশ: শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৫, ৮:০২ পিএম আপডেট: ২৫.১০.২০২৫ ৮:০৭ পিএম
ছবি: প্রতিনিধি

ছবি: প্রতিনিধি

কক্সবাজারে স্বনির্ভর লবণ শিল্প চরম সংকটে পড়েছে। গত মৌসুমে মজুদ থাকার পরেও বাহির থেকে লবণ আমদানির গুঞ্জনে স্থানীয় লবণ চাষীরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। তারা মনে করছেন, বাহির থেকে লবণ আমদানি হলে তাদের মজুদকৃত লবণ বিক্রি হবে না এবং তাদের লবণের দাম কমে যাবে। যার কারণে প্রতিনিয়িত চাষীরা আতঙ্কে রয়েছেন। 

এখন শুরু হয়েছে নতুন মৌসুমে লবণ চাষের প্রস্তুতি। সূর্যের তাপে নোনাজল শুকিয়ে ‘সাদা সোনা’ উৎপাদনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহের আশায় মাঠে নামছেন কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকার প্রায় অর্ধলাখ চাষি। কিন্তু গত মৌসুমে উৎপাদিত লবণের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় এখনও মাঠ ও গুদামে মজুদ রয়েছে প্রায় ৫-৮ লাখ মেট্রিক টন লবণ। এরই মধ্যে নতুন মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই এক শ্রেণির ব্যবসায়ী বিদেশ থেকে লবণ আমদানির উদ্যোগ নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম বাংলাদেশের একমাত্র দেশীয় লবণ উৎপাদন কেন্দ্র। দেশের প্রায় ৯৫ শতাংশ লবণ উৎপাদন হয় কক্সবাজারের। তার মধ্যে টেকনাফ ও মহেশখালীতে অন্যতম। এছাড়াও কক্সবাজার সদর, ঈদাগাঁও, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া এবং অবশিষ্ট ৫ শতাংশ লবণ উৎপাদন হয় চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায়। গত মৌসুমে প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকায় দেশীয় উৎপাদিত লবণ দেশের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়েছে।

কক্সবাজারে ৬৮ হাজার ৫০৫ একর জমিতে লবণের চাষ হয়েছে। গত ১৭ মে পর্যন্ত ওই পরিমাণ জমিতে ২২ লাখ ৫১ হাজার ৬৫১ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদিত হয়েছে বলে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) দাবি করলেও লবণ চাষী ও লবণ ব্যবসায়ীদের দাবি, প্রায় ২৬ লক্ষ মেট্রিক টনের বেশি লবণ উৎপাদন হয়েছে। লবণের ব্যবসায় করে কক্সবাজারের ৬০ শতাংশ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে।

বিসিক দাবি করছে, সরকার চাষিদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করছে। তবে চাষিরা বলছেন, ‘আমদানির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে উপকূলীয় অঞ্চলের লবণ শিল্প চরম সংকটে পড়বে।’

রেকর্ড উৎপাদন, তবু লোকসান: 

বিসিকের তথ্যমতে, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের কয়েকটি উপজেলায় মোট ৬৯ হাজার একর জমিতে ৪১ হাজারের বেশি চাষি লবণ উৎপাদনে জড়িত। ২০২৪-২৫ মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন, অর্জন হয় ২২ লাখ ৫১ হাজার টন, যা ৬৫ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উৎপাদন। 

তবে চাষিরা বলছেন, ‘বাজারে ন্যায্যমূল্য না থাকায় তারা লোকসানে পড়েছেন।’

ঈদগাঁওয়ের লবণচাষি রিদুয়ানুল হক জানান, বর্তমানে প্রতি মণ লবণের দাম ১৮০-২০০ টাকা, অথচ উৎপাদন খরচ পড়ছে ৩৫০ টাকার বেশি। বিক্রির আয় দিয়ে খরচও উঠছে না।

চাষিদের আন্দোলন ও দাবি: 

সম্প্রতি ‘লবণ উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদ’ মানববন্ধন করে এবং প্রতীকীভাবে উৎপাদিত লবণ সড়কে ফেলে প্রতিবাদ জানায়।
 
বিদেশি লবণ আমদানি বন্ধ করতে হবে, লবণের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ করতে হবে, দ্রæত জাতীয় লবণ বোর্ড গঠন করে শিল্পকে রক্ষা করতে হবে।

সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেন, ‘দেশে রেকর্ড পরিমাণ লবণ উৎপাদন হলেও চাষিরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত। ব্যাংক ঋণের অভাব ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যে আমরা দিশেহারা।’

বাংলাদেশ সল্টেড অ্যান্ড ডিহাইড্রেটেড ফিশ এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল শুক্কুর বলেন, ‘নভেম্বরেই শুরু হবে নতুন মৌসুমের লবণ উৎপাদন। অথচ এ অবস্থায় এখনও মাঠ পর্যায়ে গর্ত ও গুদামে চাষিদের কাছে ৮-১০ লাখ মেট্রিক টন লবণ মজুদ রয়েছে। বাজারে দাম অত্যন্ত কম হওয়ায় চাষিরা লবণ বিক্রি করতে পারছেন না। এ পরিস্থিতিতে যদি সরকার ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে লবণ আমদানির অনুমতি দেয়, তাহলে দেশের লবণ শিল্প ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।’

আব্দুল শুক্কুরের অভিযোগ, ঢাকায় কিছু অসাধু লবণ আমদানিকারক রয়েছেন, যারা কক্সবাজারের কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে বিসিককে ভুল তথ্য দিচ্ছেন। এসব ভুল তথ্যের ভিত্তিতে সচিবালয়ে বিভ্রান্তিকর জরিপ উপস্থাপন করে লবণ আমদানির অনুমতি নেওয়ার চেষ্টা চলছে।

বিসিক যা বলেছে:

বিসিক কক্সবাজার কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া বলেন, ‘বর্তমানে মাঠে প্রায় চার লাখ মেট্রিক টন লবণ মজুদ আছে। আমদানির সিদ্ধান্ত জাতীয় পর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের হাতে। আমাদানি হলেও আমাদের প্রান্তিক চাষীদের যেন ক্ষতি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা হবে। তবে, মূল বিষয় হচ্ছে—এখনও সরকার লবণ আমদানির ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেননি। সরকার চাষিদের স্বার্থ রক্ষায় সচেষ্ট।’

শিল্পের টিকে থাকার প্রশ্ন:

কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, ‘লবণ শিল্প শুধু একটি অর্থনৈতিক খাত নয়, এটি উপকূলীয় মানুষের জীবিকার মূল ভিত্তি। এই শিল্প টিকিয়ে না রাখতে পারলে উপকূলের হাজারো পরিবার বিপদে পড়বে।’

দেশে পর্যাপ্ত মজুদ থাকা সত্ত্বেও লবণ আমদানির উদ্যোগ প্রশ্ন তুলেছে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। চাষিদের আশঙ্কা, যদি সরকারের ভুল সিদ্ধান্তে বিদেশি লবণ আসে, তবে দেশের শতভাগ স্বনির্ভর এই শিল্প চরম সংকটে পড়বে।

কেকে/ এমএ
আরও সংবাদ   বিষয়:  সংকটে লবণ শিল্প   আতঙ্কে চাষিরা  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

বানারীপাড়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাঠের সাঁকো দিয়ে চলাচল
‘শিগগিরই’ জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ দেবে ঐকমত্য কমিশন
নীলফামারীতে সাংবাদিকদের প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত
একটি মৌলবাদী দল ছলনা ও বিভ্রান্তি করে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করছে
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে বৃদ্ধ নিহত, আহত ৩০

সর্বাধিক পঠিত

১৭ বছর আন্দোলন করে তারেক রহমান ভোটের অধিকার ফিরিয়ে এনেছেন
শ্রীমঙ্গলে অপহৃত কিশোরী সিলেট থেকে উদ্ধার, গ্রেফতার দুই
বাগাতিপাড়ায় অপপ্রচারের প্রতিবাদ সাংবাদিক নেতা কামরুল ইসলামের
চরম সংকটে লবণ শিল্প, আতঙ্কে চাষিরা
বেনাপোল বন্ধন ব্লাড ফাউন্ডেশনের পঞ্চম বর্ষে পদার্পণ

অর্থনীতি- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close