৮ বছর আগে মিয়ানমার জান্তার নির্যাতন থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা এখন উখিয়া ও টেকনাফের স্থানীয়দের কাছে গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিনিয়ত সীমান্ত এলাকায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ও মিয়ানমারের গোলাগুলিতে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন স্থানীয়রা।
সম্প্রতি আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘর্ষ এবং মিয়ানমার সেনাদের গোলাগুলির কারণে সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী অনেক পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে শহরমুখী হচ্ছে। স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, সীমান্তে সশস্ত্র গোষ্ঠীর গুলিবর্ষণের কারণে তারা জমিতে ফসল ফলাতেও যেতে পারছেন না। কাজ করতে গেলে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয় বলেও অভিযোগ তাদের।
ফেসবুকের বিভিন্ন পোস্টে দেখা গেছে, সম্প্রতি মিয়ানমারের একটি বিদ্রোহী দল বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করলে বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) তাদের বুঝিয়ে ফেরত পাঠায়।
স্থানীয়রা বলছেন, সীমান্ত অরক্ষিত হয়ে পড়ায় তারা প্রাণনাশের আশঙ্কায় রয়েছেন। ইতিমধ্যে নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকায় টহল দিতে গিয়ে এক বিজিবি সদস্য মাইন বিস্ফোরণে আহত হয়ে ঢাকায় চিকিৎসাধীন আছেন।
স্থানীয়দের দাবি, সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত মানুষদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
এদিকে টেকনাফ সীমান্তে আবারও মিয়ানমার সেনাদের ছোড়া গুলি এসে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে পড়েছে। শনিবার (২৫ অক্টোবর) বিকেলে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড তেচ্ছিব্রিজ সীমান্তঘেঁষা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বিকেল ৫টার দিকে মিয়ানমারের ভেতরে কয়েকশ ফায়ারিংয়ের শব্দ শোনা যায়। একপর্যায়ে ওপার থেকে ছোড়া দুই রাউন্ড গুলি এসে এপারের একটি বসতঘর ও একটি কম্পিউটার দোকানে লাগে। এতে ঘরের টিন ও দেয়ালে গুলির ছিদ্র তৈরি হয়। এ ঘটনায় ছেনুয়ারা নামে এক নারী আহত হন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। যদিও কোনো প্রাণহানি ঘটেনি, তবুও এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নুর আহমেদ আনোয়ারী বলেন, মিয়ানমারের দিক থেকে ছোড়া গুলি এপারে এসে পড়ায় এতে একজন আহত হন। সীমান্ত এলাকায় সাধারণ মানুষ ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। আমি প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি এবিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হোক। সীমান্তবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।
তিনি আরও বলেন, যদি দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তবে সীমান্ত এলাকায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ অত্যন্ত প্রয়োজন।
এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন খোলা কাগজকে জানান, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে গোলাগুলির শব্দ প্রায় প্রতিদিনই শোনা যায়। তবে আজ গুলি এপারে এসে পড়েছে এতে জনগণের মধ্যে চরম ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। হোয়াইক্যং তেচ্ছিব্রিজ এলাকায় মায়ানমার থেকে ছোড়া গুলি এসে বসতঘরে পড়ে এক নারী আহত হয়েছে বলে শুনেছি। এ বিষয়ে বিস্তারিত খবর নেওয়া হচ্ছে।
কেকে/ আরআই