চলতি বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে জামায়াতে ইসলামীর নতুন আমির নির্বাচন। সারা দেশের এক লাখের বেশি রুকন সদস্য অংশ নেবেন গোপন-প্রত্যক্ষ ভোটে। দলের একটি সূত্র জানিয়েছে, এর মধ্যে আমির নির্বাচনের দুটি সম্ভাব্য প্যানেল নিয়ে আলোচনা চলছে দলটির মধ্যে। যেটির একটিতে বর্তমান আমির ডা. শফিকুর রহমান, নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান এবং সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি এটিএম আজহারুল ইসলামের নাম শোনা যাচ্ছে। অন্য প্যানেলটিতে এটিএম আজহারের পরিবর্তে আছেন বর্তমান আরেক নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহেরের নাম।দলটির গঠনতন্ত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আমির নির্বাচনের জন্য বিদায়ী কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্যরা তিনজনের একটি প্যানেল নির্বাচন করেন। সাধারণত এই প্যানেল থেকে সারা দেশের রুকন সদস্যরা গোপন ভোটে একজনকে তিন বছরের জন্য দলটির আমির হিসেবে নির্বাচিত করেন। তিনিই পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্যদের পরামর্শক্রমে নায়েবে আমির, সেক্রেটারি জেনারেল, সহকারী সেক্রেটারিসহ নির্বাহী দায়িত্বশীল পদগুলোতে দলের নেতাদের দায়িত্ব দিয়ে থাকেন। তবে প্যানেলের বাইরেও যে কাউকে আমির হিসেবে ভোট দিতে পারেন ভোটাররা।
তথ্যমতে, বর্তমানে আমির পদে দ্বিতীয়বারের মতো দায়িত্ব পালন করা ডা. শফিকুর রহমানের মেয়াদ শেষ হবে ডিসেম্বরে। তিনি ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো দায়িত্ব পান জামায়াতের আমিরের। ২০২২ সালের নভেম্বরে নির্বাচিত হন দ্বিতীয়বারের মতো। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছরের মধ্যে আমির নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও একজন ব্যক্তি কতবার আমির হতে পারবেন সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা নেই।
এদিকে দলটির নতুন আমির নির্বাচন নিয়ে যেনো আলোচনার শেষ নেই। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ এবং আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সমানে রেখে কে হচ্ছেন দলটির নতুন কাণ্ডারি- এই আলোচনা এখন সর্বত্র। কারণ, জাতীয় নির্বাচনের চ্যালেঞ্জও থাকবে নতুন আমিরের কাঁধে।
জামায়াতের আমির কে হলে দলের জন্য কল্যাণকর হবে? এ প্রশ্নে ব্যক্তিগত মতামত জানতে চাইলে দলটির একাধিক দায়িত্বশীলরা জানান, সারা দেশ থেকে ভোটের মাধ্যমে আমাদের আমির নির্বাচিত হবে। তবে দলের বৃহৎ স্বার্থে ডা. শফিকুর রহমান আবারো আমির হিসেবে আসলে দলের জন্য অনেক ভালো হবে। তাদের ভাষ্য, উনার (ডা. শফিকুর রহমান) নেতৃত্বে দলের অনেক অর্জন হয়েছে। এ ছাড়া সংশ্লিষ্টদের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে যিনি আসবেন তাকেই সাদরে গ্রহণ করবেন বলেও জানান। অন্যদিকে প্রান্তিক পর্যায়ের জামায়াত নেতাকর্মীদের সঙ্গেও কথা বলে তাদের মাঝে ডা. শফিকুর রহমানকেই নেতা হিসেবে চাওয়ার আকাক্সক্ষা পরিলক্ষিত হয়েছে।
আমির নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, আমির নির্বাচনের সময়সীমা এ বছরের ডিসেম্বর। ডিসেম্বরেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।
কারা প্রার্থী প্যানেলে আসতে পারেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়টি আগাম বলা যাচ্ছে না। কারণ, ভোটের মাধ্যমে কে আসবেন সেটা আগেই কখনো বলা যায় না। এসব বিষয়ে বা সব অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে সবসময় গঠনতন্ত্র মেনে কাজ করি আমরা।
তিনি আরো বলেন, মজলিশে শুরার সদস্যরা ভোটের মাধ্যমে প্রথমে তিনজনের একটি প্যানেল ঘোষণা করেন। এরপর নির্বাচনে তিনজনের যেকোনো একজনকে সদস্যরা ভোট দিতে পারবেন। এই তিনজনের বাইরেও যেকোনো ব্যক্তিকে যোগ্য মনে করলে ভোট দিতে পারবেন। তিনজনের প্যানেল একটা প্রস্তাবনামাত্র। প্যানেল ঘোষণার পর সেই নামগুলো সব শাখায় পৌঁছিয়ে দেওয়া হয়।
৭০ বছরে ৬ আমির পেয়েছে জামায়াত : ইতিহাস ঘেঁটে দেখা গেছে, ব্রিটিশ উপনিবেশকালে ভারতের লাহোরে (বর্তমানে পাকিস্তান) মাওলানা মওদুদীর হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয় জামায়াতে ইসলামী। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ও বর্তমান বাংলাদেশে আমির নির্বাচিত হয়েছেন ৬ জন নেতা। তাদের মধ্যে ১৯৫৬ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত মাওলানা আবদুর রহিম, ১৯৬০ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত এবং ১৯৯২ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত অধ্যাপক গোলাম আযম, ১৯৭৯ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত আব্বাস আলী খান (ভারপ্রাপ্ত), ২০০০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মতিউর রহমান নিজামী, ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মকবুল আহমদ এবং সর্বশেষ ডা. শফিকুর রহমান ২০১৯ ও ২০২২ সালে টানা দুইবারের মতো নির্বাচিত হয়ে এখন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করছেন।
কেকে/এআর