সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫,
২৮ আশ্বিন ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: ১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার      জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ      রোমে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা      ২০০ তালেবান সৈন্যকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের      বাতিল হওয়ার শঙ্কায় বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনার ভারত সফর      বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করে দেশে স্বৈরশাসন পাকাপোক্ত হয়েছিল      প্রেসক্লাবে শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গে সাউন্ড গ্রেনেড-লাঠিচার্জ      
খোলাকাগজ স্পেশাল
সরকারি অর্থে উপদেষ্টাদের ঘনঘন বিদেশ সফর
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশ: শুক্রবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৫, ৮:৪৮ এএম আপডেট: ০৩.১০.২০২৫ ২:৩৩ পিএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সফর করে মাত্রই দেশে ফিরেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এ সফরে তার সঙ্গী হয়েছিলেন সরকারের বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা, সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক দলের কয়েকজন প্রতিনিধিও। 

সরকারি একটি নথিতে দেখা গেছে, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এ সফরে অন্তত ১০০ জন তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন। যদিও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গেল সপ্তাহে একটি ফেসবুক পোস্টে দাবি করেছেন, প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী ছিলেন ৬২ জন। 

বিশাল বহর নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার যুক্তরাষ্ট্র সফরের বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা সমালোচনাও দেখা দেয়। পরে গত মাসের শেষে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) জনগণের করের টাকায় বিদেশ সফরে এত বড় প্রতিনিধি দল পাঠানোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিবৃতিও দেয়। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম গত বছরের চেয়ে এবার প্রতিনিধি দলের সংখ্যা আরো কমবে। কিন্তু সেটা আরো বেড়েছে।’

গত বছরের ডিসেম্বরে উপদেষ্টা কিংবা সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ যাত্রা নিয়ে বিশেষ নির্দেশনা জারি করা হলেও তার কিছুই মানা হচ্ছে না বলেও দাবি করছেন বিশ্লেষকরা। সরকারের অর্থ ব্যয় করে উপদেষ্টা কিংবা কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর এবং এতে বাংলাদেশের অর্জন কতখানি তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

এ ছাড়া সরকারি নথি ও গণমাধ্যমে খবর বলছে, দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রায় ১৪ মাসে ১৩ বার বিদেশ সফর করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। এ ছাড়া সরকারের অন্য উপদেষ্টারাও নিয়মিত বিদেশ সফর করছেন। এর মধ্যে কোনো কোনো উপদেষ্টাকে ‘গুরুত্বহীন’ নানা অনুষ্ঠানেও অংশ নিতে দেখা গেছে বলেও সমালোচনা রয়েছে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিশাল বহর নিয়ে বিদেশ সফর কিংবা আমলাদের বিদেশ সফর নিয়ে নানা সমালোচনা হয়েছিল। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন সরকার কেন একই পথে হাঁটছে সেই প্রশ্নও তুলছেন বিশ্লেষক ও সাবেক আমলাদের কেউ কেউ।

গত ২২ সেপ্টেম্বর রাতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে যান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সফরসংক্রান্ত একটি সরকারি নথিতে দেখা যায়, এ সফরে তার সঙ্গী হয়েছিলেন কয়েকজন উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী, সচিব, রাজনীতিবিদ, নিরাপত্তা দল ও কর্মকর্তাসহ অন্তত ১০০ জন।

বিশাল বহর নিয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে টিআইবির বিবৃতির পর গত ২৬ সেপ্টেম্বর নিজের ভেরিফাইড পেজে একটি পোস্ট দেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি লিখেন, ৮০তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে সদস্য সংখ্যা শেখ হাসিনা আমলের তুলনায় কম তো বটেই, বরং অনেক বেশি লক্ষ্যনির্ভর ও পরিশ্রমীও। সেখানে তিনি দাবি করেন, গত বছর এ জাতিসংঘ সম্মেলনে ৫৭ জন অংশ নিয়েছিলেন। এবার এ সংখ্যা ৬২ জন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতিসংঘ অধিবেশনে বাংলাদেশের সরকারপ্রধানের নির্ধারিত বক্তৃতার সময় সফরসঙ্গীদের মধ্যে মাত্র কয়েকজনের উপস্থিতির সুযোগ থাকে। যে কারণে এত বিশালসংখ্যক সফরসঙ্গী নিয়ে জাতিসংঘ অধিবেশন যোগ দেওয়ার বিষয়টির যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা।

সাবেক সচিব আব্দুল আউয়াল মজুমদার বলেন, ‘এই সরকারের কাছে আমাদের অনেক প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু তারা প্রত্যাশার ধারে কাছেও যেতে পারেননি। এখন কোনো কোনো ঘটনায় তিন চারজন একসঙ্গে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে পিকনিকে যাচ্ছে।’

যদিও এই প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, এ বছরের প্রতিনিধি দলের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই নিরাপত্তা কর্মী, যারা প্রধান উপদেষ্টাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়োজিত রয়েছে। এ ছাড়া তিনি জানিয়েছিলেন, এ বছরের প্রতিনিধি দলের মধ্যে বেশ কয়েকজন ব্যক্তি রয়েছেন যারা ৩০ সেপ্টেম্বরের রোহিঙ্গা সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন। 

তবে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান প্রশ্ন তুলে বলেছেন, ‘এই যে একশোর ওপরে মানুষ গেল। যদি এত মানুষ যেতে হয় তার যৌক্তিক ভিত্তি থাকতে হবে। তারা রাষ্ট্রীয় স্বার্থকে বিবেচনায় নিয়ে পুরো রাষ্ট্রের স্বার্থ প্রমোট করার জন্য যাচ্ছে তাদের সুনির্দিষ্ট কার কী ভূমিকা, কীভাবে ভূমিকা পালন করছে?’

গত জুনে যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা। সে সফরে বিএনপি নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকও করেন অধ্যাপক ইউনূস। সেবারও তিনি বড় প্রতিনিধি দল নিয়ে গিয়েছিলেন বলে আলোচনা হয়েছিল। ওই সফরে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সম্ভাব্য বৈঠকের কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত তা না হওয়ায় এ নিয়ে নানা সমালোচনাও দেখা যায়।

বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে প্রায় ১৪ মাস হলো। এ সময় সরকারের উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর নিয়ে সমালোচনা হয়েছে। এ বছরের আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে দুই দফায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর করেছেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। এসব জায়গায় বেশিরভাগই ছিল বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত অনুষ্ঠান।

আরেক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদকেও গত এক বছরে অন্তত তিন বার বিদেশ সফর করতে দেখা গেছে। গত বছরের অক্টোবরে সংযুক্ত আরব আমিরাত, নভেম্বরে সুইজারল্যান্ড, চলতি বছরের জুনে মরক্কো সফরে যান। এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য দুই উপদেষ্টার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের উদাহরণ টেনে বলেন, ‘এই সংস্কৃতি ছিল বিগত সরকারের আমলে। আগে আওয়ামী লীগের সময়ে যা হয়েছে এখনো কেন সেই ধারাবাহিকতা দেখা যাবে?’

সরকারি নথিপত্রে দেখা গেছে, উপদেষ্টা কিংবা আমলারা গত এক বছরে বিভিন্ন সময়ে যে বিদেশ সফর করছেন তার মধ্যে অনেক সফরের গুরুত্ব কতখানি তা নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে। সাবেক সচিব আব্দুল আউয়াল মজুমদার বলেন, ‘বিদেশ সফরের নামে আমাদের দেশে নৈরাজ্য চলছে। এখানে কোনো নিয়মনীতি নেই। বিবেকের দায় নেই। সুযোগ পেলেই বিদেশ যায়, অর্থের অপচয় হয়, কাজের ক্ষতি হয়। এটা একটা নেশার মতো হয়ে যায়।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার অতীতের নিয়মের পরিবর্তন আনতে পারেনি। বরং তাদের সেই পথেই হাঁটছে।’

গত বছরের আগস্টে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ডিসেম্বরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে বিদেশ ভ্রমণ সংক্রান্ত ১৩ দফা বিশেষ নির্দেশনা জারি করা হয়। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়ার স্বাক্ষরকৃত এ নির্দেশনায় বিদেশ সফরে নিরুৎসাহিত করাসহ একই অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা ও সচিবের বিদেশ ভ্রমণ পরিহার করতেও বলা হয়েছিল। কিন্তু সে সব নির্দেশনা কতটুকুই বা মানা হচ্ছে?

ওই ১৩ দফা নির্দেশনায় সাধারণভাবে বিদেশ ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করা, বছরের সম্ভাব্য বিদেশ ভ্রমণের একটি তালিকা জানিয়ে রাখা, বিদেশ ভ্রমণের জন্য মন্ত্রণালয়ভিত্তিক ডেটাবেজ তৈরি করা (প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এর কাঠামো তৈরি করে দেবে এবং এর তথ্য সংরক্ষণ করবে), সব স্তরের সরকারি কর্মকর্তাদের একাধারে বিদেশ ভ্রমণ পরিহার করা, মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ও সচিব একসঙ্গে বিদেশ ভ্রমণ সাধারণভাবে পরিহার করতে হবে।

এ ছাড়া জাতীয় স্বার্থে অনুরূপ ভ্রমণ একান্ত অপরিহার্য হলে তেমন অপরিহার্যতার বিষয় সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা, মন্ত্রণালয়ের সচিব ও অধীন অধিদপ্তর বা সংস্থা প্রধানেরা একান্ত অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থ ছাড়া একসঙ্গে বিদেশ ভ্রমণে যাবে না বলেও নির্দেশনায় বলা হয়েছিল।

অন্যদিকে, বিদেশে অনুষ্ঠেয় সেমিনার বা কর্মশালা ইত্যাদিতে অংশগ্রহণের জন্য উপদেষ্টা ও সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণের প্রস্তাবের ক্ষেত্রে আমন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ থেকে কোন পর্যায়ের কর্মকর্তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এবং অপরাপর অংশগ্রহণকারী দেশ থেকে কোন পর্যায়ের কর্মকর্তারা তাতে অংশ নিচ্ছেন, সেই তথ্যও যুক্ত করতে বলা হয়েছিল সরকারের নির্দেশনায়। কিন্তু এ নির্দেশনা কতখানি মানা হচ্ছে সেটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাবেক আমলা ও বিশ্লেষকদের কেউ কেউ।

সাবেক সচিব আব্দুল আউয়াল মজুমদার বলেন, ‘বিদেশ যাত্রা নিয়ে সরকারের নিজের নির্দেশনা সেটি প্রতিপালিত হচ্ছে না কারণ হচ্ছে সরকার নিজেই ব্যর্থ। সরকার নিজেরা নির্দেশনা দিয়ে নিজেরাই সেটি ভঙ্গ করছে। প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে সার্কুলার হয়, সেই নিয়ম তারাই ভাঙেন। তাহলে এরকম সার্কুলার হওয়ার দরকার নেই। সার্কুলার জারি হলে সেই নীতি ভাঙলে সরকারের ইমেজ নষ্ট হয়। বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়।’

কেকে/ এমএস
আরও সংবাদ   বিষয়:  সরকারি অর্থ   উপদেষ্টা   বিদেশ সফর  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

ট্রাক ভাড়া করে ঘুরে ঘুরে ডাকাতি করত তারা
শিশু বলাৎকার ও হত্যার অভিযোগে কিশোর গ্রেফতার
১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার
মুরাদনগরের ওসি জাহিদুরের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বসহ নানা অভিযোগ, অপসারণ দাবি
জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ

সর্বাধিক পঠিত

আসছে নাটক ‘অপ্রকাশিত ভালোবাসা’
চিকিৎসক ও জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা
রাজশাহীতে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস পালিত
নির্বাচন নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে : তানভীর হুদা
মৌলভীবাজারে জামায়াত ও খেলাফত মজলিসের স্মারকলিপি
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close