নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিএনপি ও এনসিপি নেতাদের হেনস্তার ঘটনা ঘটেছে। এটি কেবল দেশের কয়েকজন রাজনীতিবিদেরই অপমান নয়, বরং দেশের সামগ্রিক ভাবমূর্তিকেও ক্ষুণ্ন করেছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে যাওয়া প্রতিনিধি দলের অংশ হিসেবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিএনপি, এনসিপি নেতারা যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছালে তাদের ওপর ডিম নিক্ষেপ ও অশালীন ভাষায় কটূক্তি করা হয়।
এ ধরনের ঘটনা যে কোনো সভ্য দেশেই অগ্রহণযোগ্য। রাজনীতিতে মতের অমিল থাকবে, তর্ক-বিতর্কও স্বাভাবিক। তাই বলে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেনের ওপর ডিম নিক্ষেপের ঘঁনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিদেশের মাটিতে রাজনৈতিক বিরোধকে এভাবে প্রকাশ করা শুধু ব্যক্তিকে নয়, পুরো দেশকেই অসম্মানিত করে। এটি প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে এক ধরনের নেতিবাচক ও অসহনশীল সংস্কৃতি চর্চা চলছে।
রাজনৈতিক প্রতিবাদ বা ভিন্নমত প্রকাশ গণতান্ত্রিক সমাজে স্বীকৃত অধিকার। কিন্তু তারও সীমা আছে। ডিম ছোড়া, জুতা প্রদর্শন, শারীরিক আক্রমণ এসব সভ্য রাজনীতির সঙ্গে যায় না। বরং এর মাধ্যমে প্রতিপক্ষের প্রতি বিদ্বেষ আরো বাড়ে, সহিংসতা চর্চা স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। এক সময় এ ধরনের ‘বাজে সংস্কৃতি’ দেশীয় রাজনীতিতেই আরো গভীরভাবে শেকড় গাড়ে।
প্রতিবেদন বলছে, বিমানবন্দরে টার্মিনাল সংক্রান্ত তথ্য বিভ্রান্তি এবং কনস্যুলেটের দুর্বল সমন্বয়ের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। বিএনপি ও এনসিপি নেতাদের সঠিক তথ্য সময়মতো না জানিয়ে আলাদা পথে বের করা হয়, যেখানে আওয়ামী সমর্থকগোষ্ঠী আগেভাগেই ৮নং গেটে প্রস্তুত ছিল। অপরদিকে জামায়াতে ইসলামী ৪নং গেট দিয়ে নিরাপদে বের হয়ে যায়, ফলে একটি পক্ষ হেনস্তার শিকার হয়েছে, আরেক পক্ষ নিরাপদ থেকেছে। এই পরিস্থিতি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের নিরপেক্ষতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তোলে। যদি বিদেশে বাংলাদেশি মিশনগুলো রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বে জড়িয়ে পড়ে, তবে তা প্রবাসীদের মধ্যে বিভাজন বাড়াবে এবং রাষ্ট্রের কূটনৈতিক মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করবে।
রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেশের ভেতরে থাকলেও বিদেশের মাটিতে তা বহন করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। সেখানে সবাই মূলত বাংলাদেশের প্রতিনিধি। অথচ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হেনস্তা করার জন্য প্রবাসী সংগঠনগুলোর বিভিন্ন সময়ে সংঘর্ষমুখর অবস্থান প্রমাণ করছে যে, অসহিষ্ণু রাজনীতি সীমান্ত পেরিয়ে যাচ্ছে। এটি প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে ভীতি তৈরি করছে এবং দেশের ভাবমূর্তি কলঙ্কিত করছে। প্রশ্ন হচ্ছে, কূটনৈতিক মিশনগুলো কেন নিরপেক্ষ ও পেশাদার আচরণ বজায় রাখতে পারল না? কেন তথ্য প্রদানে বৈষম্য হলো? এ ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত এবং প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা প্রয়োজন। অন্যথায় বিদেশে বাংলাদেশের কূটনৈতিক উপস্থিতি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে।
রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো রাজনৈতিক মতবিরোধের ঊর্ধ্বে থেকে সব নাগরিক ও প্রতিনিধির মর্যাদা রক্ষা করা। বিদেশে রাজনৈতিক হেনস্তা বন্ধে সরকারের পাশাপাশি সব দলের দায়িত্বশীলতা জরুরি। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করে কোনো দলই লাভবান হবে না বরং দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
কেকে/ এমএস