রোববার, ১২ অক্টোবর ২০২৫,
২৭ আশ্বিন ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

রোববার, ১২ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: ২০০ তালেবান সৈন্যকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের      বাতিল হওয়ার শঙ্কায় বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনার ভারত সফর      বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করে দেশে স্বৈরশাসন পাকাপোক্ত হয়েছিল      প্রেসক্লাবে শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গে সাউন্ড গ্রেনেড-লাঠিচার্জ      মঙ্গলবার থেকে কর্মবিরতিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা      নির্বাচনে ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা      অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রতিনিধি দল      
খোলাকাগজ স্পেশাল
জুলাই সনদের জট খুলছে
প্রণব আচার্য্য
প্রকাশ: শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৯:১৭ এএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

জুলাই সনদে স্বাক্ষর করতে প্রস্তুত বিএনপি। দলটি মনে করে সনদের যে বিষয়গুলো সংবিধান সংশ্লিষ্ট নয়, সেগুলো অধ্যাদেশ ও নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। অন্যদিকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ চায় জামায়াত। এর মধ্যেই জুলাই সনদের চূড়ান্ত ভাষ্য রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। 

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে বিশেষজ্ঞদের দেওয়া মতামতের ওপর আলোচনা করতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় দফায় বৈঠক করে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে সকাল সোয়া ১১টার পর এই আলোচনা শুরু হয়। বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ প্রায় ৩০টি রাজনৈতিক দল এতে অংশগ্রহণ করে।  বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সংবিধান সংশ্লিষ্ট ১৯টি মৌলিক বিষয়সহ জুলাই সনদের সমস্ত সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনি ইশতেহারে অঙ্গীকার করবে। যারা নির্বাচিত হয়ে সংসদে যাবে, তারা দুই বছরের মধ্যে এসব বাস্তবায়ন করবে। এটাই বৈধ প্রক্রিয়া। এর বাইরে কোনো আইনগত বা সাংবিধানিক প্রক্রিয়া থাকলে তাতে আমরা একমত হব।’ 

কিছু দল বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ জারির মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের কথা বলেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে আদালতে চ্যালেঞ্জ হলে জুলাই সনদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। তাই ভুল সিদ্ধান্ত না নিতে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। 

সাংবিধানিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এসব বিষয় গুরুত্বসহকারে দেখা উচিত।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘বিএনপি জুলাই সনদে স্বাক্ষর করতে প্রস্তুত। এর মধ্য দিয়ে নতুন যাত্রা শুরু হবে।’ একইসঙ্গে দ্বৈত সাংবিধানিক ব্যবস্থায় যাওয়া সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘এই সরকার সংবিধানের ধারাবাহিকতায় গঠিত হয়েছে।’ 

এদিকে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘কমিশনের পক্ষ থেকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পাঁচটি বিকল্প প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেখানে জামায়াতের একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব আছে। আশা করি, এই পাঁচটি প্রস্তাবের মধ্যে আমরা কাছাকাছি আসতে পারব এবং জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি হবে। জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’ 

গণভোটের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘গণভোটের প্রস্তাবকে বিকল্প হিসেবে রেখেছি। বিশেষ সাংবিধানিক আইন জারির প্রস্তাবের ভিত্তিতে জুলাই সনদ বাস্তবায়িত না হলে গণভোটের মাধ্যমে হবে।’ 

জামায়াতের দেওয়া প্রস্তাবের প্রসঙ্গে আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘আমরা একটি বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ জারি করে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের কথা বলেছি। অর্থাৎ ঐকমত্য কমিশন যেসব বিষয়ে একমত পোষণ করেছে, এর মধ্যে যে বিষয়গুলো সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, সেগুলোকে একটি বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ জারি করে সংবিধানের ওপরে প্রাধান্য দেওয়া। বাকি ক্ষেত্রে সংবিধান যেমন আছে, তেমনই থাকবে।’

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট জনগণের ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বলে মন্তব্য করে শিশির মনির বলেন, ‘জনগণের ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ বাস্তবায়ন করার জন্যই সব আলোচনা চলছে। গণ-অভ্যুত্থানের পর যখন কোনো সংবিধান ছিল না, যখন দেশে কোনো সরকার ছিল না, বিচার বিভাগ ছিল না, সাংবিধানিক বিধান অনুযায়ী এই সময়ে জনগণের ইচ্ছা কার্যকর ছিল।’

সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭ অনুযায়ী জনগণের ইচ্ছার যে চরম বহিঃপ্রকাশ, এই বহিঃপ্রকাশকে একটি বিশেষ আদেশের মাধ্যমে প্রাধান্য দেওয়া হলে আগামী নির্বাচন এর অধীনে হওয়ার পথে কোনো বাধা থাকবে না বলে মনে করেন শিশির মনির।

গণ-অভ্যুত্থানের পর সরকারব্যবস্থায় সাংবিধানিক ব্যবস্থা অনুসরণ করার সুযোগ না থাকায় সংবিধানের ১৫৩ অনুচ্ছেদের মধ্যে ৫৭টি অনুচ্ছেদ ইতোমধ্যে অকার্যকর হয়ে গেছে বলে দাবি করেন শিশির মনির। তিনি বলেন, ‘এ জন্য আমরা বলেছি একটি নতুন সাংবিধানিক আদেশ জারি করার জন্য। একটি বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ জারি করে আগামী দিনে সংবিধানের ওপরে বিশেষ সাংবিধানিক আইনকে প্রাধান্য দিয়ে ৫ আগস্ট থেকে কার্যকর দেখাতে।’ 

এদিকে গতকালই রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জুলাই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত ভাষ্য পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। এ সনদে সব দলের মতের প্রতিফলন ঘটানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। 

কমিশনের পক্ষ থেকে সনদে স্বাক্ষরের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ১৩ সেপ্টেম্বর বিকাল পাঁচটার মধ্যে দুজন ব্যক্তির নাম পাঠানোর অনুরোধ জানানো হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন আলী রীয়াজ। 

সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় দুটি বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, সুপারিশের যেসব বিষয় সংবিধান-সংশ্লিষ্ট নয়, সেসব বিষয় বাস্তবায়নের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ জারি করতে পারবে এবং সুপারিশের যেসব বিষয় সরকারি বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আদেশ ও বিধি প্রণয়নের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব, সেগুলো অন্তর্বর্তী সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন করতে পারবে বলে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্য পোষণ করেছে। 

সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে অধ্যাদেশ জারি ও যথাযথ পদক্ষেপের মাধ্যমে তা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। 

এর আগে আলোচনার সূচনা বক্তব্যে আলী রীয়াজ বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কমিশনের পক্ষ থেকে কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া হবে না। বাস্তবায়ন করার ক্ষমতা কমিশনের কাছে নেই। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য সকল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে কমিশন সরকারকে জানাতে পারে। আমরা সেই প্রক্রিয়াটা অনুসরণ করছি।

আলী রীয়াজ বলেন, সর্বশেষ আলোচনায় নোট অফ ডিসেন্টসহ কিছু কিছু জায়গায় আমারা একমত হতে পেরেছিলাম। তার একটি খসড়া আমরা আপনাদের (রাজনৈতিক দলগুলো) দিয়েছিলাম, আপনারা মতামত দিয়েছেন। অঙ্গীকারনামার বিষয়ে বেশ কিছু আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি প্যানেল করে আমরা একাধিকবার আলোচনা করেছি। এই প্যানেলে দুইজন সাবেক বিচারপতি, তিনজন আইনজীবী, একজন আইনের শিক্ষক ছিলেন। প্যানেলে আলোচনার একপর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেলকে যোগ দিতে বলেছিলাম, তিনি যোগ দিয়েছিলেন। আইন উপদেষ্টাও একটা বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। বিশেষজ্ঞ প্যানেল ও রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতে বুঝতে পেরেছি জুলাই সনদের কিছু কিছু বিষয় অন্তর্বর্তী সরকার বাস্তবায়ন করতে পারে।

আগামী রোববার বেলা আড়াটায় আবারো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবে কমিশন। 

কেকে/এআর
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

বিয়ে ছাড়াই সংসার করার অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে
কালাইয়ে বিএনপির গণমিছিল ও লিফলেট বিতরণ
কুমিল্লায় শিয়ালের কামড়ে শিশুসহ আহত ৭
নবীনগরের কালিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট চরমে
২০০ তালেবান সৈন্যকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের

সর্বাধিক পঠিত

সাপ্টিবাড়ী ডিগ্রি কলেজে চরম দুর্নীতি ও অনিয়ম
রাজশাহীতে চার পরিবারকে হয়রানির অভিযোগ
রায়েরবাজারে দুই মাস ধরে অর্ধসমাপ্ত সাদেক খান সড়ক
মৌলভীবাজারে টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন
গাজীপুরে টাইফ‌য়েড টিকা প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close