ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ইসি কর্তৃক ইতোমধ্যেই ঘোষণা হয়েছে রোডম্যাপ, তবুও কাটছে না শঙ্কা। এ নির্বাচন ঠেকাতে আদাজল খেয়ে নেমেছে পতিত শক্তি আওয়ামী লীগ। তারা নানাভাবে, নানা কৌশলে এই নির্বাচন ঠেকানোর পাঁয়তারা করছে। তার জন্য নিজস্ব ফান্ডের পাশাপাশি আরো ফান্ড সংগ্রহ করছে।
ইতোমধ্যেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর হয়েছে শিল্পগ্রুপ ‘এস আলম’ শেখ হাসিনাকে আড়াই হাজার কোটি টাকার ফান্ড সরবরাহ করেছে নির্বাচন বানচালের খরচ হিসেবে। এসব টাকা বিভিন্ন মাধ্যমে দেশের ভেতরে ছড়িয়ে দিচ্ছে এ দলটি। উদ্দেশ্য একটাই দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বানচাল করা। তাদের এই চক্রে বিভিন্ন পর্যায়ের আমলা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সাধারণ সদস্য পর্যন্ত যুক্ত রয়েছে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।
বিশ্লেষকরা বলছেন, শুক্রবার রাতে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরের ওপর বর্বোরোচিত হামলার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে সেই মিশন। প্রশাসনের একটি পক্ষ জাতীয় পার্টিকে রক্ষার মধ্য দিয়ে পতিত আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসন করতে চাচ্ছে।
তারা আরো বলছেন, ৯০-পরবর্তী সময় থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টি একটি ‘গর্ভ ভাড়া’ দেওয়া দলে পরিণত হয়েছে। প্রতিটি নির্বাচনের আগে তারা কোনো না কোনো দলকে গর্ভ ভাড়া দিয়ে তাদের সন্তান লালনপালন করেছে। বিশেষ করে দলটির সঙ্গে সখ্য করে আওয়ামী লীগ বেশিরভাগ সময় নির্বাচনি ফায়দা লুটেছে। আর এভাবেই তারা দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিবাদ কায়েম করে।
তারই ধারাবাহিকতায় হাসিনা সরকারের পতনের পর জাপা হয়ে উঠেছে ফ্যাসিস্ট শক্তির সবচেয়ে বড় ভরসা। দলটির কাঁধে ভর দিয়েই দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করছে আওয়ামী লীগ। যার সর্বশেষ দৃষ্টান্ত গত শুক্রবার রাতে গণ অধিকার পরিষদের ওপর জাপার চড়াও হওয়ার ঘটনা। এরপরই নাটকীয়ভাবে বদলে যায় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। বিশেষ করে সরকার যখন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছিল, তখন জাপার এ ধরনের কর্মকাণ্ড নির্বাচন ঠেকানোর নীলনকশার অংশ।
যদিও ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন প্রতিহত করার কোনো শক্তি নেই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেছেন, ‘আমরা শক্তভাবে বলছি ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কোনো শক্তি নাই এটা প্রতিহত করার।’
তবে জাপার পিঠে ভর দিয়ে নির্বাচন ঠেকানোর যে নীলনকশা আওয়ামী লীগ এঁকেছে তা মোকাবিলা করার জন্য কয়েক দিন ধরে সমাবেশগুলোয় সতর্ক থাকার জন্য দলীয় কর্মীদের আহ্বান জানিয়ে আসছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। যার ফলে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক দলগুলোর নানা বক্তব্যেও বিষয়ে দলটির সিনিয়র নেতারও আগামী নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ ও শঙ্কা প্রকাশ করছে।
আগামী জাতীয় নির্বাচন বানচালের জন্য একটি গোষ্ঠী চেষ্টা করছে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আজ দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, দেশে একটা চক্রান্ত চলছে। বাংলাদেশে ভবিষ্যতের যে নির্বাচন হওয়ার কথা, তা বানচালের চেষ্টা করছে একটি গোষ্ঠী। একটি উগ্রবাদী গোষ্ঠী বিভিন্ন ধরনের উগ্রবাদের কথা বলে মানুষকে বিভক্ত করতে চায়।’ শনিবার বিকালে ময়মনসিংহ নগরের টাউন হলে আয়োজিত জাতীয়তাবাদী ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী দলের প্রথম জাতীয় সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
এ ছাড়া গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের ওপর হামলাকে আরেকটি ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি। তিনি বলেছেন, এ হামলার মাধ্যমে আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করা হচ্ছে।
শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেন, গত বছরের ৫ আগস্টের পর এক বছরের একটু বেশি সময় হয়েছে। সব রাজনৈতিক দল কি ঐক্যের জায়গায় খুব ভালোভাবে আছি? যে ঐক্য নিয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি, সেই জায়গায় আছি? আমি তো দেখি না। কারণটা কী, সমস্যাটা কোথায়? কেন আজকে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরকে রক্তাক্ত হতে হয়? নুরের ওপর আঘাত কারা করেছে? এটা খুঁজে বের করতে হবে। এটা আরেকটা ষড়যন্ত্র। এ ষড়যন্ত্র বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। এ ষড়যন্ত্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে। এ ষড়যন্ত্র, সামনে যে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হওয়ার কথা, তার বিরুদ্ধেও।
তিনি আরও বলেন, ঐক্যের মধ্যে যদি বিন্দুমাত্র ফাটল সৃষ্টি হয়, সুযোগটা ফ্যাসিস্ট নেবে, ফ্যাসিস্ট দখল করবে। সুযোগটা নেবে ষড়যন্ত্রকারীরা, যারা দেশের শত্রু, যারা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের শত্রু। জুলাই আন্দোলনের যে প্রজন্ম, জুলাই আন্দোলনের যে রাজনৈতিক দল, সবাই মিলে যে ঐক্যের জায়গায় ছিলাম, সেই ঐক্য আবারও দৃঢ়ভাবে সৃষ্টি করে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হবে।
কেকে/ এমএস