মৌলভীবাজার ও শ্রীমঙ্গল শহরে বিদ্যুতের খুঁটিগুলো যেন চড়ুই পাখির নতুন অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে। শহরের ব্যস্ত চৌমুহনায় সন্ধ্যার পর হাজার হাজার চড়ুই পাখি ঝাঁকে ঝাঁকে বসে কিচিরমিচির শব্দে পুরো এলাকা মুখরি করে তোলো।
পুরনো গ্রাম বাংলার কুঁড়েঘরে ছাদের কোনায় বসবাস করত চড়ুই পাখি। কিন্তু আধুনিক শহরে সেই দৃশ্য হারিয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাখিরাও নিজস্ব বাসস্থানে পরিবর্তন এনেছে। এখন তারা শহরের চৌমুহনা, বিদ্যুতের খুঁটি ও তারে বসবাস করছে, যেখানে মানুষ বিরক্ত বা হস্তক্ষেপ করছে না।
প্রতি ভোরেই পাখিগুলো খাবারের খোঁজে দূর-দূরান্তের অঞ্চলে যায়। বিকাল হলে তারা আবার তারে ফিরতে শুরু করে। ঝাঁকে ঝাঁকে বসে কিচিরমিচির শব্দে পুরো এলাকা মুখরিত হয়। সূর্যাস্তের সময় এ দৃশ্য পথচারীদের আকর্ষণ করে, অনেকে ছবি বা ভিডিও করে সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করে।
ছবি: খোলা কাগজ
স্থানীয়রা বলছেন, তিন বছরের মধ্যে মৌলভীবাজার চৌমুহনার বিভিন্ন খুঁটিতে চড়ুই পাখির এমন বসতি লক্ষ্য করা গেছে। প্রথমে কিছু পাখি পশ্চিম দিকে বসত স্থাপন করেছিল, এখন তা পূর্ব দিকে বিস্তৃত হয়েছে। বিকাল হলেই পাখিরা দলে দলে আসে এবং রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খুঁটিগুলো ঘন হয়ে ওঠে।
শ্রীমঙ্গল শহরেও গত দুই আড়াই বছরে চৌমুহনা ও আশেপাশের খুঁটিতে পাখিরা বসবাস করছে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় তাদের কিচিরমিচির শব্দ পুরো এলাকা মুখরিত করে। পথচারীরা পাখির ঝাঁক ও কিচিরমিচির কণ্ঠ শুনে আনন্দিত হয়।
পরিবেশবিদ ও পাখিপ্রেমীরা জানান, শহরের কিছু এলাকায় গাছপালা রক্ষা, কম কীটনাশক ব্যবহার এবং খুঁটিগুলোর নিচে নিরাপদ পরিবেশ থাকায় চড়ুই পাখিরা এখানে আশ্রয় নিচ্ছে। চড়ুই পাখি আমাদের শৈশবের স্মৃতি এবং প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের প্রতীক।
পাখি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চড়ুই বছরে একাধিকবার প্রজনন করে। প্রতিবার ৪-৬টি ডিম দেয়, যার প্রায় ৬৫-৭০ ভাগ ছানা বেঁচে থাকে। ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে তারা ফসল, সবজি ও বনাঞ্চল রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে কীটনাশক ব্যবহারের কারণে পাখির খাদ্য কমে যাচ্ছে, যা তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে। শহরে ছোট গাছপালা রক্ষা, পুরনো ঘরের ছাদ বা প্রান্তে ছোট বাসা তৈরির ব্যবস্থা করলে চড়ুই পাখির মতো ক্ষুদ্র প্রাণী শহরের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।