মোবাইল ফোন , ইমেইল, ফেসবুক ইন্টারনেট, হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম, মেসেঞ্জারের যুগে হারিয়ে যাচ্ছে চিঠি।
একসময় মানুষের যোগাযোগ কিংবা মনের ভাব আদান-প্রদানের অন্যতম প্রধান মাধ্যম ছিল ডাক বিভাগের চিঠি। এই চিঠির মাধ্যমে মানুষ প্রিয়জনের খোঁজখবর নিতো। হলুদ রঙের পোস্টকার্ডে কিংবা সাদা কাগজে চিঠি লিখে হলুদ খামে পাঠানো হতো প্রিয়জনদের কাছে।
কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় আজ হারিয়ে যেতে বসেছে সেই চিঠি বিনিময়ের সংস্কৃতি। এখন অনুভূতির আদান-প্রদান মোবাইল ফোন, ই-মেইল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক কিংবা ইনবক্সে। যোগাযোগের গতি বেড়েছে বহুগুণ, তবে হারিয়ে গেছে হৃদয়ের গভীর স্পর্শ।
চিঠিকে কেন্দ্র করেই রচিত হয়েছে বাংলা সাহিত্য বিভিন্ন গান, কবিতা ও গল্প । আমরা এখনো শুনি সিনেমার গান ‘ভালো আছি ভালো থেকো/ আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো’, ‘চিঠি লিখেছে বউ আমার ভাঙা ভাঙা হাতে’—এর মতো আবেগমিশ্রিত গান। চিঠির আদলে রচিত হয়েছে রবিঠাকুরের গল্প ‘স্ত্রীর পত্র’, কাজী নজরুল ইসলামের লেখা ‘বাঁধনহারা’র মতো পত্রোপন্যাস। কবি জীবনানন্দ দাশের ‘অপ্রকাশিত চিঠিপত্র’ও সাহিত্যের অন্যতম লেখনী।
জানা যায়, চিঠি লিখে খামে ভরে নির্দিষ্ট ডাক বাক্সে ফেলতে হতো। এখনো রাস্তার মোড়ে মোড়ে নির্দিষ্ট জায়গায় অব্যবহারে জীর্ণ, ধূলি ধূসরিত ডাকবাক্স চোখে পড়ে। চিঠির সাথে জড়িয়ে ছিল নানা স্মৃতি নানা আবেগ। সেই আবেগ এখন আর মেসেঞ্জার কিংবা ইমেইলে পাওয়া যায় না। আগে এক একটি চিঠি যেন হয়ে উঠতো এক একজনের প্রাণের সঞ্চার।
শিহাব নামে এক স্কুল শিক্ষক বলেন, তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে ডাকঘরের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গেছে। এখন আর কেউ চিঠি লেখেনা।
বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে সেই স্থান দখল করে নিয়েছে মোবাইল, ল্যাপটপ ও কম্পিউটার। এ প্রযুক্তিতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ই-মেইল, এসএমএস ও নানাভাবে যোগাযোগের দ্রুত মাধ্যম হওয়ায় উন্নত এ প্রযুক্তির দিকে মানুষ ধাবিত হচ্ছে। চিঠি আদান-প্রদান নেই বললেই চলে।
কালিপদ চক্র বর্ত্তী নামে বৃদ্ধা বলেন, এক যুগ আগেও যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ছিল চিঠি। ছেলে চিঠি লিখত মাকে, স্বামী স্ত্রীকে, প্রবাসী নিজের পরিবারকে, প্রেমিক প্রেমিকাকে। আজ আর কেউ চিঠি লেখে না। বর্তমানে ফেসবুক ইন্টারনেটের যুগে হারিয়ে যাচ্ছে চিঠি। কাউকে এখন গভীর উৎকণ্ঠায় অপেক্ষা পোষে পথ চেয়ে বসে থাকতে হয় না।
কেকে/এআর