প্রকাশ: শনিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২৫, ৬:৪২ পিএম

ছবি: প্রতিনিধি
ইলিশ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ। ইলিশ মূলত সামুদ্রিক মাছ, মা ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য বাংলাদেশে বিভিন্ন নদীতে আগমন করে। বাঙালিদের কাছে ইলিশ খুব জনপ্রিয় মাছ। এ ছাড়া, ইলিশ ভারতের বিভিন্ন এলাকা যেমন পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা, ত্রিপুরা ও আসামে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি মাছ। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের ইলিশ মাছ ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
পদ্মার ইলিশের স্বাদ সবচেয়ে ভালো বলে ধারণা করা হয়। ইলিশ মাছের ডিম অত্যন্ত সুস্বাদু। ডিমের জন্য ইলিশ মাছ বিখ্যাত। ইলিশ মাছ সাগর থেকেও ধরা হয়, কিন্তু সাগরের ইলিশ নদীর মাছের মত সুস্বাদু হয় না। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে সাধারণত পান্তা-ইলিশ ভোজের আয়োজন করা হয়।
বিয়ের সময় ইলিশ তাতওয়া উপহার হিসেবে দেওয়া হয়। গায়ে হলুদের দিনে বরের পরিবার কনের পরিবারকে একজোড়া ইলিশ উপহার দেওয়ার রেওয়াজও আছে। বহু বাঙালি হিন্দু পরিবার বিভিন্ন পূজার শুভ দিনে জোড়া ইলিশ বা দুইটি ইলিশ মাছ কেনেন। সরস্বতী পূজা ও লক্ষ্মী পূজায় জোড়া ইলিশ কেনা খুব শুভ লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু প্রথা পশ্চিমবঙ্গ (ভারত) ও বাংলাদেশের হিন্দুদের মাঝে প্রচলিত আছে। তাদের অনেকে লক্ষ্মী দেবীকে ইলিশ মাছ উৎসর্গ করেন। অনেকেই ইলিশ উৎসর্গ ছাড়া পূজাকে অসম্পূর্ণ মনে করেন।
জামাইষষ্ঠীতে ইলিশ একটি ঐতিহ্যবাহী বাঙালির খাবার; যা এই উৎসবে জামাইকে আপ্যায়ন করার জন্য অত্যন্ত জরুরি। শাশুড়িরা তাদের জামাইকে পাতে ইলিশ মাছ দিয়ে আপ্যায়ন করেন, যা এই উৎসবের অন্যতম অঙ্গ। বাঙালি সংস্কৃতিতে জামাইষষ্ঠীর ভোজনে ইলিশ মাছ ছাড়া উৎসবটি অপূর্ণ থেকে যায় বলে মনে করা হয়।
ইলিশ মাছ চাষ করা যায় না। জেলেরা মাছ ধরার নৌকা নিয়ে নদীতে যায় এবং জাল ফেলে মাছ ধরে। এই মাছ উপকূলবর্তী ঘাটে আনা হয়। সেখান থেকে বরফ দিয়ে দেশের দূরবর্তী স্থানে পাঠানো হয়। চাঁদপুর জেলার পদ্মা-মেঘনা নদীতে ও ভোলা জেলার তজুমুদ্দিনে মেঘনা ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় সর্বাধিক পরিমাণ ইলিশ মাছ পাওয়া যায়। ভোলা জেলা ও চাঁদপুর জেলা ইলিশের জন্য বিখ্যাত। দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইলিশ পাওয়া যায় চাঁদপুর জেলায়। ইলিশ মাছ বাংলাদেশে রপ্তানি করেও প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে থাকে। তবে, বাংলাদেশে তুলনামূলক ইলিশ মাছের দাম অত্যাধিক বেশি হওয়ায় মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের ইলিশ মাছ কিনে খাওয়া দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে।
যদিও ইলিশ লবণাক্ত জলের মাছ বা সামুদ্রিক মাছ, বেশিরভাগ সময় সে সাগরে থাকে কিন্তু বংশবিস্তারের জন্য প্রায় ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে ভারতীয় উপমহাদেশে নদীতে পাড়ি জমায়। বাংলাদেশে নদীর সাধারণ দূরত্ব ৫০-১০০ কিলোমিটার। ইলিশ প্রধানত বাংলাদেশের পদ্মা (গঙ্গার কিছু অংশ), মেঘনা (ব্রহ্মপুত্রের কিছু অংশ) এবং গোদাবরী নদীতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এর মাঝে পদ্মার ইলিশের স্বাদ সবচেয়ে ভালো বলে ধরা হয়। ভারতের রূপনারায়ণ নদী, গঙ্গা, গোদাবরী নদীর ইলিশ তাদের সুস্বাদু ডিমের জন্য বিখ্যাত। ইলিশ মাছ সাগর থেকেও ধরা হয়, কিন্তু সাগরের ইলিশ নদীর মাছের মত সুস্বাদু হয় না। দক্ষিণ পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশেও এই মাছ পাওয়া যায়। সেখানে মাছটি ‘পাল্লা’ নামে পরিচিত। এই মাছ খুব অল্প পরিমাণে থাট্টা জেলায় ও পাওয়া যায়। বর্তমানে সিন্ধু নদীর জলস্তর নেমে যাওয়ার কারণে পাল্লা বা ইলিশ আর দেখা যায় না। ইলিশ উৎপাদনে ১১ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। ওয়ার্ল্ড ফিশের পরিসংখ্যান মতে, ৮৬ শতাংশ ইলিশ বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়।
উপকূলীয় দ্বীপ ও চরাঞ্চলে কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্যবিমোচনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে ইলিশ। ইলিশ মাছ উৎপাদনকারী ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে প্রথম।