শহুরে জীবনযাপনের অংশ হয়ে উঠেছে কৃষি। শখ ও প্রয়োজন—দুটোই মিটছে এ থেকে। বাড়ির ছাদ কিংবা বারান্দা ভরে উঠছে সবজি, ফল ও ফুলের গাছে। ছাদ বেশ প্রশস্ত এবং ভালো রোদ পাওয়া যায় বলে বাগান করার জন্য সেটি উত্তম জায়গা।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার মো. বরকত হাসান নিজ বাসার ছাদে গড়ে তুলেছেন বাগান। সবজি, ফলদ ও ঔষধিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে বাগানে। নিজের কর্মব্যস্ততা শেষে বাকি বেশিরভাগ সময় তার কাটে ছাদ কৃষিতে। বাগানে উৎপাদিত ফল ও সবজি একদিকে যেমন নিজেদের চাহিদা মেটায়, অপরদিকে আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীর মাঝেও বিতরণ করছেন। তার ছাদ কৃষি দেখে অনেকেই উৎসাহী হয়ে উঠছেন।
তবে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ নয়, বরং একান্ত ব্যক্তিগত উদ্যোগেই এদেশে ছাদ বাগানের সূচনা। এমনই এক নয়নাভিরাম ছাদবাগান গড়ে তুলেছেন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পোস্ট গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করা মো. বরকত হাসান। বর্তমানে তিনি একটি রপ্তানিমুখী বস্ত্র শিল্পের সাথে জড়িত। তিনি তার বরিশালের কাশিপুর ফিসারী রোডের পাশে নিজের বাসার ছাদে ফুল ও ফসলের এ আকর্ষণীয় বাগান গড়ে তুলে নিজেদের পারিবারিক চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনদের মাঝেও বিষমুক্ত সতেজ ফলমূল-শাক-সবজি বিতরণ করে থাকেন। তিনি শুধু ছাদ কৃষিই নয় বরিশালের উজিরপুরে সাইনবোর্ড নামক গ্রামে তার ক্রয়কৃত নিজ বাড়ির আঙ্গিণায়ও ফুল-ফলের বাগান গড়ে তুলেছেন। ছাদ ও সবুজের ঘেরা বাড়ির আঙিনায় তার এ বাহারী ফুল-ফল ও সবজির বাগান সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। অনেকেই তার এ বাগানের সৌন্দর্যে অবগাহন করতে যান।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে মোঃ বরকত হাসান ও বরিশালের নগর কৃষক-কৃষাণীদের সমন্বয়ে ‘গ্রীন বরিশাল’ নামে তারা একটি সংগঠন তৈরি করেছেন। বরিশালে যতগুলো ছাদবাগান রয়েছে সব ছাদবাগানীকে ‘গ্রীন বরিশাল’-এর ব্যানারে তারা একত্রিত করেছেন। প্রতি মাসে তারা কৃষক-কৃষাণীদের ঐক্যবদ্ধ করার জন্য উন্মুক্ত স্থানে মিলনমেলা করে থাকেন। তাদের এই সংগঠনের সাথে রয়েছেন বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজেের ডাক্তার, কলেজ শিক্ষিকা। এমনকি লন্ডন ও মালয়েশিয়া প্রবাসীও রয়েছে তাদের এই সংগঠনের সাথে।
তার ছাদবাগানে রয়েছে- মাল্টা, জাম্বুরা, দেশী ও থাই পেয়ারা, জাম, ডালিম, আনার, বিভিন্ন জাতের আম, লেবু, ড্রাগন ফল, আমলকি, লকটন, পেপে, সফেদা, পুঁইশাক, লাউ, ঢেঁরশ, মরিচ, পুদিনা, গোলাপ, গন্ধরাজ, বেলী, হাসনাহেনা, কাঠগোলাপ, তিকোমা, জবা ও জুঁইসহ নানা ধরণের ফুল, ফল ও সবজি গাছ।
আর বাড়ির আঙ্গিনায় রয়েছে- নিম, লিচু, নানা জাতের আম, নারকেল, কাঠাল প্রভৃতি ফলের গাছ এবং হলুদ রঙের তিকোমা ও লালটুকটুকে বাগান বিলাসসহ নানান বাহারী ফুলের গাছ। তার বাগানের ফুল-ফলের আকর্ষণে টিয়া, বুলবুলি, চড়ুঁই, শালিক ও ঘুঘুসহ নানা পাখ-পাখালির ভীড় ও তাদের কিচিরমিচির কলরবে ভোর ও সন্ধ্যাবেলা বাড়িটিতে এক অন্যরকম পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
মো. বরকত হাসান একজন সুশিক্ষিত আধুনিক মানুষ, তদুপরি কৃষি ও সবুজ প্রকৃতি প্রেম তার সেই পরিচিতিকে ভিন্ন রূপ দিয়েছে। তার এ দৃষ্টিনন্দন ছাদবাগান অন্যদের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে।
মো. বরকত হাসান বলেন, ‘শৈশবকাল থেকেই তিনি কৃষি ও সবুজ প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্যের প্রতি আসক্ত। আর সেই প্রকৃতি প্রেমই তাকে এ ছাদ ও বাড়ির আঙ্গিনায় ফুল-ফল ও ফসলের বাগান গড়ে তুলতে অনুপ্রাণিত করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কাজের ব্যস্ততার চাপ তো সব সময় থাকেই, কিন্তু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য গাছের কাছে গেলে মনে হয় সব চাপ হালকা হয়ে যায়। তাই, যতটুকুই সময় পাই, চেষ্টা করি আমার ছাদ বাগানের জন্য একটু ভালোবাসা দেওয়ার।’
কেকে/ এমএ