নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার মাঠে-ঘাটে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করেন অসংখ্য নারী শ্রমিক। পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করলেও মজুরির ক্ষেত্রে তারা পড়ছেন বৈষম্যের শিকার। একই কাজ করেও পুরুষ শ্রমিকরা যেখানে পান ৪০০-৫০০ টাকা, সেখানে নারীরা সারাদিন খেটে পান মাত্র ১৫০-২০০ টাকা।
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে উনারা (নারীরা) পান ১৫০-২০০ টাকা। সকালে বাড়ি থেকে খেয়ে বের হলে দুপুরে কিছু পেলে খান নয়তো না খেয়েই কাজের যোগান দিয়ে থাকেন তারা। সারাদিন রোদ, বৃষ্টি উপেক্ষা করে মাঠেঘাটে কাজ করেন নারী শ্রমিকরা। পাশাপাশি পুরুষদের কাজের ক্ষেত্রে সমান বিচরণ তাদের। কিন্তু মজুরি বৈষম্য তাদের হতাশ করে দেয়। সারাদিন তারা খড়িরগোলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত খামারিতে কাজ করলেও তারা পান দিনশেষে ১৫০-২০০ টাকা। যা পুরুষ শ্রমিকদের তুলনায় কয়েক গুণ কম।
নীলফামারীর জলঢাকা পৌরশহরের একটি খড়িরগোলায় ডালপালা ছেড়ার কাজে নিয়োজিত মিনতি বালা ও কাকলি রাণী বলেন, ‘অভাবের সংসার, কাজকাম করে জোড়াতালি দিয়ে কোনরকম চলছি। সকালে খেয়ে আসি আর দুপুরে থাকলে খাই, না থাকলে না খাই। কিন্তু পারিশ্রমিক পুরুষরা যা পান তার তুলনায় আমরা অনেক কম পাই।’
উপজেলার গোলনা ইউনিয়নের চিড়াভিজা গোলনা এলাকায় আলু ক্ষেতে ১৮ জনের নারী শ্রমিকের একটি বহর নিয়ে একদল নারী শ্রমিক আগাম আলু চাষের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন। ফজিলা বেগম, কুলসুম, বুলো বালা, খাদিজা বেগম, শরিফন নেছা, মেহেরজান, কবিতা রানী, মিনতি বালা বলেন, ‘বিভিন্ন সময় বাসাবাড়ি এবং ধান, পাট, তামাক, ভুট্টা এবং আলু চাষসহ সব ধরনের কাজ করি আমরা। কিন্তু আমরা আমাদের ন্যায্য মজুরী কখনোই পাই না।’
তারা আরও বলেন, ‘অভাবের তাড়নায় স্বামীর সংসারে সহযোগিতার জন্য বিভিন্ন মৌসুমে আমাদের মাঠে কাজ করতে হয়। জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে আমাদের মজুরি তেমন বাড়ছে না। ক্ষেত খামারে সকাল থেকে সারাদিন কাজ করে আমরা পাই মাত্র ১৫০-২০০ টাকা। অথচ একই কাজ আমাদের সাথে যে পুরুষরা করেন তারা পাচ্ছেন ৪০০-৫০০ টাকা। আমরা ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।’
আলু ক্ষেতের চুক্তিভিত্তিক চাষি কৃষ্ণ রায় বলেন, ‘নারীদের তুলনায় পুরুষরা কাজ বেশি করে। যার জন্য পুরুষের মজুরি একটু বেশি দেওয়া হয়।’
এ বিষয়ে মানবাধিকার কর্মী আল আমিন ইসলাম বলেন, ‘এ বৈষম্য থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা দরকার। কারণ, পুরুষের পাশাপাশি সবক্ষেত্রেই নারীরা পারদর্শী।’
নারী নেত্রী হেমা আহমেদ বলেন, ‘নারীরা ছোটবেলা থেকেই পারিবারিকভাবে বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে। পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবেও আমরা নারীরা বৈষম্যের শিকার। অসহায় দরিদ্র নারীরা যারা মাঠে-ঘাটে কাজ করে, তারা মজুরিটা কখনওই সঠিক পায় না।’
কেকে/ এমএ