মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫,
৫ কার্তিক ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: অনিশ্চয়তার মুখে দেশ      জামায়াত ও আ. লীগ মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ : সামান্তা শারমিন      আগামীকাল রেল ভবন ঘেরাও করবেন টিএলআররা      জন্ম নিয়েই বাপের সঙ্গে পাল্লা দিও না : গোলাম পরওয়ার      স্বচ্ছতা-সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকে সংস্কারের উদ্যোগ      অগ্নিকাণ্ড নাশকতা কি না তদন্তের পর বলা যাবে      ডেঙ্গুতে একদিনে আরও চারজনের মৃত্যু      
খোলাকাগজ স্পেশাল
অনিশ্চয়তার মুখে দেশ
প্রণব আচার্য্য
প্রকাশ: সোমবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:৩০ পিএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে দেশে যে রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে উঠেছিল, তার অনেকটাই শিথিল হয়ে গেছে। যত দিন যাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধ ততোই বাড়ছে। যার প্রভাব পড়ছে দেশের সার্বিক রাজনীতিতে। বিশেষ করে, বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির নেতারা বিভিন্ন ইস্যুতে পরস্পরকে  আক্রমণ করে বক্তব্য দিচ্ছেন। এতে দলগুলোর মধ্যে তিক্ততা বাড়ছে। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে ফ্যাসিস্টবিরোধী রাজনৈতিক ঐক্যে বহু আগেই ফাটল ধরেছে। দিনে দিনে সেই অনৈক্য বিরোধে রূপ নিচ্ছে। এই বিরোধ যদি বাড়তে থাকে, তবে রাজনৈতিক অস্থিরতার সৃষ্টি হবে। এতে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। আর নির্বাচন কোনোভাবে যদি ব্যহত হয়, তবে গভীর এক অনিশ্চয়তায় পতিত হবে দেশ। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আরো বলছেন, নির্বাচন ঠেকাতে ফ্যাসিস্ট শক্তি নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের পেছনে আছে একটি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থা। এ ছাড়া দেশের অভ্যন্তরেও নির্বাচন ঠেকাতে সক্রিয় রয়েছে ফ্যাসিস্টের দোসররা। বিশেষ করে প্রশাসনে এখনো সক্রিয় আওয়ামী লীগের দোসররা। সেইসঙ্গে সরকারের ভেতরেও একটি অংশ নির্বাচন ঠেকাতে কাজ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। 

সম্প্রতি বিভিন্ন টকশোতে একদল আলোচন সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচন আয়োজন করার বৈধতা আছে কিনাÑএমন প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন,  এটাও নির্বাচনের আগে অহেতুক বিতর্ক তৈরি করার কৌশল। এর মধ্যে দিয়ে নির্বাচন বিরোধী একটি জনমত তৈরির চেষ্টা চালানো হচ্ছে। সরকারের নির্বাচন আয়োজনকে যাতে ভণ্ডুল করা যায়। 

রাজনীতিবিদের অনৈক্য নিয়ে হতাশার জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন,  ‘অনেকেই হতাশ। এত বড় একটা অভ্যুত্থানের পর এত বড় একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে দেশকে সুন্দর করার। কিন্তু চারদিকে দেখা যায়, রাজনীতিবিদরা ঐক্য হারিয়ে ফেলেছেন। অনেকে চলে যাচ্ছেন। চারদিকে একটা অনৈক্যের সুর দেখা যায়। এতে তারা অনেকেই হতাশ হচ্ছেন।’ 

মির্জা ফখরুল আরো বলেন, ‘রাজনীতিবিদদের কথা হয়তো শুনতে ইচ্ছা করে না। কিন্তু রাজনীতিবিদেরা একটা দেশের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করেন, পথ তৈরি করেন অথবা পথ নষ্ট করেন। কিছু রাজনীতিক একটা জাতিকে অত্যন্ত উচ্চশিখরে নিয়ে যান। আবার কেউ কেউ জাতিকে একেবারে নিচে নিয়ে যান। রাজনীতির মধ্যে যদি সৌন্দর্য না আনা যায়, সততা না আনা যায়, তাহলে রাজনীতি কখনোই সুন্দর হবে না। আর রাজনীতি যদি হয় জনগণের কাছ থেকে পালিয়ে যাওয়া, বিদেশে সম্পদ তৈরি করা, তাহলে মানুষ ঘৃণা করবে।’ 

বর্তমান পরিস্থিতি যেখানে দাঁড়িয়েছে, সেখানে একটি শক্তিশালী পলিটিক্যাল ম্যান্ডেট সম্পন্ন সরকার ছাড়া দেশকে রক্ষা করা সম্ভব না বলে মনে করেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তিনি বলেন, ‘ভূত তাড়াতে যে সরিষা, সেই সরিষার ভেতরই ভূত আছে বলে মনে হচ্ছে।’ তার কথায়, ‘সরকারের ভেতর থেকেও কোনো শক্তি অস্থিরতা তৈরি করছে।’ তিনি বলেন, ‘এখন সরকারের ভেতরকার কোনো শক্তি যদি অস্থিতিশীলতা তৈরির জন্য পরোক্ষভাবে কাজ করে সেটা আরো বিপজ্জনক হবে।’ 

তার কথায়, ‘মীমাংসিত বিষয় নিয়ে যখন রাজপথ দখলের লড়াই শুরু হয়ে যায়, তখন অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তির মধ্যে দ্বন্দ্ব সংঘাতের পরিস্থিতি হয়। সেই অবস্থার সুযোগ তো কেউ কেউ গ্রহণ করতে পারে। আবার ফ্যাসিস্ট রেজমিও গ্রহণ করতে পারে। তাই এ রকম জায়গায় কারো যাওয়া ঠিক হবে না। তাহলে আমরা বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ব।’ 

সম্প্রতি সংখ্যানুপাতিক (পিআর) দাবির আন্দোলন নিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর তীব্র সমালোচনা করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। জামায়াতও নাহিদ ইসলামের বক্তব্যের পাল্টা জাবাব দেয়। পিআর নিয়ে বিএনপিও জামায়াতের সমালোচনা করে আসছে। গতকালও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু পিআর নিয়ে জামায়াতের দিকে তোপ দাগান। তিনি বলেন, ‘পিআর পদ্ধতির মাধ্যমে যারা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে দেশের নির্বাচনকে ব্যাহত করতে চান, তারা প্রকারান্তরে আরেকটি দেশের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চান। নির্বাচন না হলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব থাকবে না।’  

জামায়াতকে ইঙ্গিত করে বরকতউল্লা বুলু বলেন, ‘জুলাইয়ের ৩৬ দিনে ২০ হাজার লোক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, এ কারণে যদি শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হয়, তাহলে ’৭১-এ যারা আমাদের মা-বোনদের পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর কাছে উঠিয়ে দিয়েছেন, ৩০ লাখ শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করেছেন, পাকিস্তানের পক্ষে যুদ্ধ করেছেন, আমাদের হত্যা করেছেন, তাদেরও বাংলাদেশে নিষিদ্ধ আগে হওয়া উচিত।’ তিনি বলেন, ‘তারা বাংলাদেশের অস্তিত্বকে অস্বীকার করেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করেন। যারা মুক্তিযুদ্ধের সংবিধানকে অস্বীকার করেন, তারা বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ার যোগ্য নন। অতএব তাঁদের ভোট চাওয়ারও কোনো অধিকার নেই।’ 

এর আগে জামায়াতের কথিত ‘সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (পিআর) আন্দোলন’ একটি সুচিন্তিত রাজনৈতিক প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয় বলে মন্তব্য করেছেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনের সংস্কারপ্রক্রিয়া এবং জাতীয় সংলাপকে গণ-অভ্যুত্থানের আলোকে সংবিধান ও রাষ্ট্র পুনর্গঠনের প্রকৃত প্রশ্ন থেকে ভিন্ন দিকে সরিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে এটা (পিআর আন্দোলন) তোলা হয়েছে। নাহিদ বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী জুলাই অভ্যুত্থানের আগে ও পরে কখনোই সংস্কার আলোচনায় যুক্ত হয়নি। তারা কোনো কার্যকর প্রস্তাব দেয়নি, কোনো সাংবিধানিক দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেনি এবং গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের প্রতি কোনো অঙ্গীকারও দেখায়নি।’ 

এদিকে নাহিদ ইসলামের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব (জুবায়ের)। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, নাহিদ ইসলাম জামায়াতে ইসলামীর পিআর দাবির আন্দোলনকে প্রতারণামূলক ও রাজনৈতিক কৌশল বলে যে মন্তব্য করেছেন, তা সর্বৈব মিথ্যা ও দুঃখজনক। তিনি তার বক্তব্যের মাধ্যমে কী বোঝাতে চাচ্ছেন, তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। তার কাছে এই ধরনের বালখিল্য বক্তব্য জাতি আশা করে না।’

এদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াত ও বিএনপির বিরোধ প্রকট হচ্ছে। পরস্পরের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ার পাশাপাশি সংঘর্ষেও জাড়াচ্ছেন দল দুটির কর্মী-সমর্থকরা। সর্বশেষ গত রোববার নোয়াখালী সদর উপজেলায় ইসলামী ছাত্রশিবির ও যুবদলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা ও সংঘর্ষ হয়েছে। রোববার বিকাল সাড়ে চারটার দিকে উপজেলার নেয়াজপুর ইউনিয়নের কাশেমবাজারে জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে এ ঘটনা ঘটে। হামলায় মসজিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের কমপক্ষে ৪০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

কেকে/ এমএস
আরও সংবাদ   বিষয়:  অনিশ্চয়তা   দেশ   রাজনীতি  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

বেড়েই চলছে ছাত্রহত্যা
বকেয়া পরিশোধ না করেই নতুন উপঠিকাদার নিয়োগের পাঁয়তারা
মসজিদে দলীয় রাজনীতি বাড়াচ্ছে সংঘাতের শঙ্কা
অনিশ্চয়তার মুখে দেশ
পুরুষের চেয়ে অর্ধেক মজুরি, নীলফামারীতে বৈষম্যের শিকার নারী শ্রমিকরা

সর্বাধিক পঠিত

ফটিকছড়িতে সমবায় প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ছাত্রলীগ নেতা!
সাভারে ৩১ দফা বাস্তবায়নে লিফলেট বিতরণ
পাটগ্রামে বউ-শাশুড়ির মেলা অনুষ্ঠিত
গাজীপুরে জজের বাসায় দুধর্ষ চুরি
‘এলাকায় এলে ঠ্যাংয়ের নালা ভেঙে দিব’—শ্রীপুরে সাংবাদিককে হুমকি

খোলাকাগজ স্পেশাল- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close