সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫,
৪ কার্তিক ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: আগামীকাল রেল ভবন ঘেরাও করবেন টিএলআররা      জন্ম নিয়েই বাপের সঙ্গে পাল্লা দিও না : গোলাম পরওয়ার      স্বচ্ছতা-সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকে সংস্কারের উদ্যোগ      অগ্নিকাণ্ড নাশকতা কি না তদন্তের পর বলা যাবে      ডেঙ্গুতে একদিনে আরও চারজনের মৃত্যু      সালমান শাহ’র অপমৃত্যু মামলাকে হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ      জবি ছাত্রদল নেতা খুন, আটক ৩      
খোলাকাগজ স্পেশাল
কক্সবাজার পাহাড় ও বালুখেকো সক্রিয়
ব্যবস্থা নিতে অনীহা পরিবেশ অধিদপ্তরের
মো. নেজাম উদ্দিন, কক্সবাজার
প্রকাশ: সোমবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৫, ৬:১৫ পিএম

সরকারি পাহাড় কাটা ও বালি উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগ ২০৯ জন পাহাড়খেকো ও বালু উত্তোলনকারীর তাালিকা  পাঠিয়েছে  কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরকে। 

গত ১৪ জানুয়ারি ২২.০১.২২০০.৭৯০.০৮.১০.২৫ স্মারকমূলে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নুরুল ইসলামের স্বাক্ষরকৃত এই তালিকা পরিবেশ অধিদপ্তরকে পাঠানো হয়েছে।  এক মাস পার হলেও  পাহাড়খেকো ও বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের পদক্ষেপ এখনো গ্রহণ করা হয়নি বলে জানা গেছে। এখনো তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করার কারণে সাধারণ মানুষের কাছে নানান প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে। দেখা গেছে, ২০৯ জনের পাহাড়খেকো ও বালু উত্তোলনকারীর নাম বেশি ভাগ কক্সবাজার সদর ও উখিয়া উপজেলার। 

বনবিভাগ বলছে, সামগ্রিক যাচাই-বাছাই করে পাহাড় কাটা ও বালু উত্তোলনকারীদের তালিকা পরিবেশ অধিদপ্তরকে পাঠানো হয়েছে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য। 

কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম জানান, পাহাড়খেকোদের চিহ্নিত করতে আমাদের বেশ বেগ পেতে হয়েছে। যারা বালু তুলছে বা পাহাড় কাটছে তারা অনেকেই অন্তরালে থেকে কাজ করে। তাদের খুঁজে আমরা একটি তালিকা তৈরি করে পরিবেশ অধিদপ্তরকে পাঠিয়েছি। আশা করছি তারা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

এদিকে  পাহাড়কাটা, বনাঞ্চল উজাড়, নদী-খাল ভরাট, ইসি এলাকায় অপরিকল্পিত নগরায়ণ, ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট ধ্বংস, দখল ও দূষণে ভয়ংকর পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্মুখীন কক্সবাজারসহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চল। নানাবিধ পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে প্রকৃতি নিচ্ছে কঠোর প্রতিশোধ। বিগত দিনে বেড়েছে, ঝড়-ঝঞ্জা, বন্যা, সাইক্লোন, টর্নেডো, ভূমিধস, ভূমিকম্প, বন্যপ্রাণীর লোকালয়ে বিচরণ বিশেষ করে হাতির আক্রমণে বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা এবং হাতি মারা যাচ্ছে। ভাঙছে উপকূল।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, কলাতলী হোটেল-মোটেল এলাকার পাশ দিয়ে মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে কিছুদূর এগোলে চোখে পড়বে উঁচু পাহাড়ের ঢাল। ওই পথ ধরে যতদূর এগোনো যাবে, শুধু পাহাড়ের ধ্বংসস্তূপ আর হরেক রকম নির্মাণাধীন স্থাপনা। শুধু কক্সবাজার সদর নয়, জেলার রামু, মহেশখালী উখিয়া, ঈদগাঁও, চকরিয়া, পেকুয়া  থেকে শুরু করে পাহাড় কাটা ও বালু উত্তোলন নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এসব পাহাড়খেকোরা পরিবেশ ধ্বংস করে টাকার কুমির বনে গেছে। জনশ্রুতি রয়েছে, সেই টাকা দিয়ে প্রশাসন ম্যানেজ করে এসব অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জমির উদ্দিন জানান, যে তালিকাটি আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে আমরা বনবিভাগকে চিঠি প্রেরণ করেছি সঠিক তথ্য প্রদানের জন্য। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের চিঠির ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম। 

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা কক্সবাজার অঞ্চল সভাপতি এইচ এম এরশাদ জানান, পাহাড় কাটা হচ্ছে, বালু উত্তোলন হচ্ছে, এগুলো দিনের মতো পরিষ্কার। প্রশাসনের আন্তরিকতা না থাকার কারণে পরিবেশ আজ ধ্বংসের দিকে। পরিশে অধিদপ্তর ও বনবিভাগ যৌথভাবে যদি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করে তবে পাহাড় কাটা ও বালু উত্তোলন কমতে পারে।

এদিকে সরকারি সংস্থা বন বিভাগের হিসাবে কক্সবাজারের ২ লাখ ৬০ হাজার একর বনভূমির মধ্যে প্রায় ৫৬ হাজার একর বেদখল হয়ে আছে। আর সেসব পাহাড়ে বেপরোয়া হয়ে পাহাড় কাটা হচ্ছে। সেখানে ৭০ হাজার ৫৫৮ ব্যক্তি ও ৬৯৬টি প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে সেখানকার জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ বন ও পাহাড় কেটে দখল করে আছে, যা নজরে এসেছে। প্রায় প্রতিদিন এসব বনভূমির গাছ আর পাহাড় কেটে সেখানে নিত্যনতুন স্থাপনা গড়ে তোলা হচ্ছে। 

জানা গেছে, কক্সবাজারের বাকখালি নদী থেকে শুরু করে প্রায় প্রতিটি নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হলেও কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তর জনবল সংকটের অজুহাত দিয়ে তেমন অভিযান পরিচালনা করছে না। তবে সম্প্রতি পরিবেশ উপদেষ্টার কঠিন হুঁশিয়ারির কারণে অনকেটা নড়েচড়ে বসেছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ইটভাটায় অভিযান পরিচালিত হয়েছে। তবে বনবিভাগ যে তালিকা প্রেরণ করেছে তা নিয়ে এখনো কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি বলে জানা যায়। 

কক্সবাজারে কারা কীভাবে বন ধ্বংস করছে, তা নিয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস) যৌথভাবে কক্সবাজারের বনভূমি ও পাহাড় কাটা  ধ্বংস হওয়া নিয়ে একাধিক গবেষণা করেছে। তাতে দেখা গেছে, কক্সবাজার জেলায় অনেকাংশে রেল লাইনের নামে অনেক পাহাড় ধ্বংসে রয়েছে খোদ সরকারি সংস্থাগুলো। 

এদিকে উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা গেলে দেখা যায়, চারজন পাহাড় কাটা শ্রমিক। তাদের মধ্যে তিনজন পালিয়ে গেলেও মিজান (২৭) নামের একজন রোহিঙ্গা শ্রমিক বলেন, কেউ একজন তাদের মাটি কাটার জন্য এখানে নিয়োগ দিয়েছেন। ওই ব্যক্তির নাম তারা জানেন না। সকাল সাতটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত পাহাড় কাটার বিপরীতে দৈনিক ৫০০ টাকা মজুরি পাচ্ছেন। চার দিন ধরে পাহাড় কাটলেও কেউ তাদের নিষেধ করতে আসেনি। 

হলদিয়া পালং ইউনিয়নের লেঙ্গুরবিল, উত্তর বড় বিল, দক্ষিণ বড় বিল এলাকায় সরেজমিন তথ্য সংগ্রহে গেলে দেখা যায়, বনবিভাগের পাহাড় ধসিয়ে উঁচু উঁচু বালুর পাহাড় করে রেখেছে পাহাড়খেকোরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব বালুর পাহাড় করে রেখেছে উখিয়ার আরমান নামের এক পাহাড়খেকো। তিনি উখিয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক। বেশ কিছু পাহাড় ধসিয়ে কোটি টাকার বালুর পাহাড় করে রেখেছেন এই আরমান। হিজলিয়ার হরিণ মারা গিয়ে ছোট থেকে শুরু করে বৃদ্ধের মুখেও পাহাড়খেকো আরমানের নাম শোনা যায়। তার পাশাপাশি হরিণ মারার এলাকায় সোনার পাড়ার মুনাফ মার্কেট এলাকার আবুল কালাম পাহাড় কাটার নায়ক হিসেবেও কাজ করছে বলে জানান স্থানীয় তারেক নামের এক ব্যক্তি।

কেকে/ আরআই
আরও সংবাদ   বিষয়:  কক্সবাজার   বালুখেকো   পরিবেশ অধিদপ্তর  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

আগামীকাল রেল ভবন ঘেরাও করবেন টিএলআররা
টঙ্গীবাড়ীতে সরকারি খাল ও ফসলি জমি ভরাটের অভিযোগ
নোয়াখালীতে সংঘর্ষের ঘটনায় ছড়ানো ছবি আফগানিস্তান ও নারায়ণগঞ্জের
গাজীপুরে জজের বাসায় দুধর্ষ চুরি
জুলাই বিপ্লব শতাব্দীর পর শতাব্দী আলোচিত হবে : মাহমুদুর রহমান

সর্বাধিক পঠিত

অবৈধ ড্রেজারের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযান
গঙ্গাচড়ায় পুষ্টি মেলা ও আন্তঃ সামাজিক উন্নয়ন কেন্দ্র প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত
ব্যবস্থা নিতে অনীহা পরিবেশ অধিদপ্তরের
শাপলা প্রতীক না পেলে আইনি ও রাজপথে লড়াই করবে এনসিপি
বেরোবি শিক্ষার্থী পরিষদের নামে শিবিরের ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close