২০ শতাংশ বাড়িভাড়াসহ তিন দফা দাবি আদায়ে ‘লং মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি স্থগিত করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা। তার বদলে আগামী ২৪ ঘণ্টা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থানের পর আমরণ অনশনের ঘোষণা দিয়েছেন তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টায় শহীদ মিনারে এ ঘোষণা দেন শিক্ষক নেতারা।
এর আগে বিকালে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে মার্চ টু যমুনা কর্মসূচি পালনের কথা ছিল শিক্ষকদের। সে কর্মসূচি স্থগিত করে যতদিন সরকার দাবি না মানবে ততদিন সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন তারা।
এদিকে দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বৈঠকে বসেছিলেন শিক্ষকদের ১৬ সদস্যের প্রতিনিধিদল। এই আলোচনায় ছিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার ও শিক্ষা সচিব রেহানা পারভীন।
বৈঠকে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার জানান, অর্থ উপদেষ্টা বিদেশ থেকে দেশে ফিরলে আগামী অর্থবছর থেকে শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা ১০ শতাংশ বাড়ানোর জন্য আহ্বান জানাবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
বৈঠকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের শিক্ষা সচিব রেহানা পারভীন বলেন, আগামী ১ নভেম্বর থেকে ৫ শতাংশ বা সর্বনিম্ন দুই হাজার টাকা বাড়িভাড়া ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন শিক্ষকদের। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওই প্রস্তাবনা মেনে আন্দোলন প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। একই সঙ্গে আগামী বেতন স্কেলে শিক্ষকদের দাবির বিষয়গুলো বিবেচনা করারও আশ্বাস দেন।
এই বৈঠকে শিক্ষক প্রতিনিধিরা শিক্ষা উপদেষ্টা ও সচিবের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। এ সময় তিন দফা দাবি বাস্তবায়নে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস বর্জনসহ যে কোনো কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন আন্দোলনকারীরা।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ মাওলানা দেলোওয়ার হোসেন আজিজি। কেঁদে কেঁদে তিনি জানান, ‘প্রয়োজনে মরে যাব, আমাদের লাশ যাবে। অনশন করব, তবুও বাড়ি ফিরব না। আন্দোলন চলবে।’
আজিজি বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ৫ শতাংশ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। অন্যান্য ভাতার বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। কিন্তু আমরা শিক্ষা উপদেষ্টাকে বৈঠকে এখন ১০ শতাংশ এবং পরবর্তী বাজেটে ১০ শতাংশ বাড়িভাড়া বৃদ্ধির জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলাম। প্রজ্ঞাপনে যা স্পষ্ট করে উল্লেখ থাকবে এমনটা বলেছি। কিন্তু তিনি এ বিষয়ে কোনো কথাই বলেননি। তাই আমরা মনে করি এই বৈঠক আইওয়াশ।’
তিনি বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে। সাত লাখ কোটি টাকার বাজেটে হাজারো কোটি টাকায় আসবাবপত্র কিনতে পারে, বিভিন্ন প্রকল্পের নামে তসরুপ হচ্ছে। কিন্তু সরকার শিক্ষকদের তিন হাজার টাকা দিতে পারছে না। এ রাষ্ট্র দেওলিয়া হয়ে যাক আমাদের কোনো আপত্তি নেই।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা কোনো অবস্থাতেই আমরা আমাদের শ্রেণি কার্যক্রমে ফিরব না। আমরা বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি করব না। শান্তিপূর্ণভাবে অনশন করতে করতে এখানে মরে যাব। আমাদের শহীদ মিনারে ফায়ার করে মেরে ফেলেন তবুও আমরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত যাব না। যেতে হলে আমাদের লাশ যাবে।’
দুপুরে সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ওই বৈঠক শুরু হয়। এতে আন্দোলনকারী ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট’-এর সদস্যসচিব আজিজি ছাড়াও ১৬ শিক্ষক নেতা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, বর্তমানে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতার জন্য আর্থিক অনুদান দেয় সরকার, যা এমপিও (মান্থলি পে অর্ডার) নামে পরিচিত। বর্তমানে সারা দেশে ছয় লাখের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওভুক্ত। এর মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে আছেন ৩ লাখ ৯৮ হাজার, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে পৌনে ২ লাখের মতো এবং কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে আছেন ২৩ হাজারের বেশি শিক্ষক ও কর্মচারী। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয় বেশি, তারা এমপিওর বাইরে শিক্ষক ও কর্মচারীদের টাকা দেয়। তবে বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সেই সক্ষমতা থাকে না।
এর মধ্যে তারা এখন মূল বেতনের ২০ শতাংশ (ন্যূনতম ৩ হাজার টাকা) বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা দেড় হাজার টাকা করা এবং কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশ বাড়ানোর দাবিতে পাঁচ দিন দিন ধরে ঢাকায় কর্মসূচি পালন করছেন। কখনো জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তায়, কখনো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বা হাইকোর্টের সামনের সড়কে বা শাহবাগ মোড়ে এসব কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল দাবির প্রতি সংহতিও জানিয়েছে।
কেকে/ আরআই