ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার বিভিন্ন কলেজের এইচএসসি–২০২৫ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। উপজেলাজুড়ে ফলাফলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এক হাজার ৯ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে ৩৩৯ জন পাশ করেছে।পাশের হার মাত্র ৩৩.৬ শতাংশ। উপজেলার ৮টি কলেজে থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে মাত্র ৪ জন।
তবে, ফলাফল ভিন্নতায় চমক দেখিয়েছে বাঞ্ছারামপুর সোবহানিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসা। এখানে থেকে ২ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে। পাশের হার ৭৬.৭৪ শতাংশ।
সার্বিক ফলাফল জরিপে দেখা গেছে, উপজেলার প্রায় সব কলেজেই সবচেয়ে বেশি ফেলের হার ইংরেজি ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ে। এই দুটি বিষয়ে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হওয়ায় অভিভাবক ও শিক্ষক সমাজে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাঞ্ছারামপুরের কলেজগুলোতে পড়াশোনার প্রতি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের মনোযোগ আগের মতো নেই। নিয়মিত ক্লাস, অনুশীলন ও শিক্ষণ–পদ্ধতির ঘাটতি ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে।
বাঞ্ছারামপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রহিম বলেন, “এ বারের ফলাফল নিয়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ আমরাও দায় এড়াতে পারি না। তবে, আমরা ঘুরে দাঁড়ানো জন্য অভিভাবকদের নিয়ে বসব। আমাদের শিক্ষক স্বল্পতা রয়েছে। ক্লাস ও ক্যাম্পাসে মোবাইল ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকা সত্বেও আমরা তা থামাতে পারিনি।”
ফরদাবাদ ড. রওশন আলম কলেজের অধ্যক্ষ মুফতি মো. কামাল উদ্দিন বলেন, “আমার কলেজের শিক্ষকরা সামনের দিনে আরো যত্নবান হবে। আমরা অভিভাবক ও কমিটি নিয়ে বসব। টেস্ট পরীক্ষায় যতোজন পাশ করেছিল, শুধু তারাই যদি পরীক্ষা দিতো তাহলে কলেজে ফলাফল বিপর্যয় হতো না। কমিটির লোকজনের সুপারিশে অনেককে চুড়ান্ত পরীক্ষায় সুযোগ দিতে হয়েছে।”
অভিভাবকরা মনে করছেন, শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে শিক্ষকদের আরও সময় দেওয়া উচিত এবং কলেজ প্রশাসনকে শিক্ষার মানোন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
বাঞ্চারামপুরে কলেজভিত্তিক ফলাফল
ইংরেজি ও আইসিটিতে দুর্বলতার কারণে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীও ভালো ফল থেকে বঞ্চিত হয়েছে। স্থানীয় শিক্ষাবিদদের মতে, এখনই বিশেষ উদ্যোগ না নিলে ভবিষ্যতে এ ধারা আরও নিচে নেমে যাবে।
বাঞ্ছারামপুরের শিক্ষার মান উন্নয়নে এখন দরকার শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক সবার একসঙ্গে এগিয়ে আসা। একসঙ্গে চেষ্টা হলেই ফিরবে সোনালী সাফল্যের দিনগুলো।
এবারের এইচএসসি-২০২৫ পরীক্ষার ফলাফল কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৪৮.৮৬ শতাংশ হলেও বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় ফলাফলে এই ভরাডুবি সম্পর্কে সাবেক স্কুল শিক্ষক সবুজ প্রধান বলেন, “ফেল করার অন্যতম কারণ হচ্ছে কলেজ অথরিটি শিক্ষার্থীদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করতে না পারা। সর্বোপরি এই দায়ভার শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, পরিচালনা পর্ষদককে নিতে হবে। আর শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে যদি বলি, উশৃঙ্খলতা, আড্ডা, মোবাইল নিয়ে দীর্ঘ সময় কাটিয়ে দেওয়া, নিয়মিত ক্লাস না করা, পড়ার টেবিলে না বসা, শূন্য নৈতিকতা, লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির হাতিয়ার মূল কারণ।