অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আগামী সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। এদিকে রাজনৈতিক দলগুলোও তাদের নির্বাচনি প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে।
বিএনপি ও জামায়াত বেশির ভাগ আসনে তাদের প্রার্থীর নামও ঘোষণা করেছে। মাঠপর্যায়ে প্রার্থীরা জনসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে নির্বাচনি জোট নিয়ে কিছুটা পিছিয়ে আছে বিএনপি। যেখানে জামায়াত সমমনা আটটি ধর্মভিত্তিক দল নিয়ে যৌথভাবে কর্মসূচি পালন করছে, সেখানে বিএনপির পক্ষ থেকে সেরকম কিছু দৃশ্যমান নয়। এমনকি সম্ভাব্য জোট নিয়ে দলটি তার সমমনা ও মিত্রদের সঙ্গেও আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনায় যায়নি। এতে বিএনপির মিত্র ও আন্দোলনের শরিকদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী রাজধানীসহ সারা দেশে সমমনা দলগুলোকে নিয়ে ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি পালন করছে। এর বাইরে তাদের নির্বাচনি প্রচারণাও চলছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি মিত্র ও আন্দোলনের শরিকদের নিয়ে কীভাবে নির্বাচনে যাবে, তার কোনো রূপরেখা এখনো মেলেনি। দলটির মধ্যে এ নিয়ে কোনো আলাপ-আলোচনাও নেই। অথচ শিগগির তফসিল ঘোষণা করবে ইসি। বিশ্লেষকের আশঙ্কা, জোট নিয়ে বিএনপির এই নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নেবে জামায়াত। বিশেষ করে ছোট দলগুলো, যারা বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করতে আগ্রহী, তাদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা বিরাজ করছে। যা নির্বাচনের মাঠে বিএনপিকে কিছুটা বিপাকে ফেলতে পারে। বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতাকে ঘিরে বিএনপির মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা আছে। তবে এর মধ্যে নির্বাচনি প্রস্তুতিতে ঘাটতি আনা চলবে না।
বিএনপির দিক থেকে নির্বাচনি জোটের প্রক্রিয়া স্থবির হয়ে আছে বলে হতাশা জানিয়েছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা সাইফুল হক। তিনি জানান, বিএনপি গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা করেনি। অন্যান্য যুগপৎ আন্দোলনের সধের সঙ্গেও কোনো আলোচনা করেনি। তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে, বিএনপি ধীরে চলো নীতি নিয়েছে। এতে আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে বিএনপির একটি মনস্তাত্ত্বিক দূরত্বও তৈরি হচ্ছে। এরকম চলতে থাকলে হয়তো রাজনৈতিক দূরত্বের আশঙ্কা থাকবে।’
সাইফুল হক বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী যেখানে তার শরিকদের নিয়ে দেশব্যাপী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, বিএনপি সেখানে আন্দোলনের যুগপৎ শরিকদের প্রায় বেকার করে রেখেছে। যদিও আমরা বিভিন্ন এলাকায় কাজ করছি, জনসংযোগ করছি। কিন্তু সর্বাত্মকভাবে মুভ করতে সমস্যা হচ্ছে এবং এ পরিস্থিতি যে বিএনপির উপলব্ধির মধ্যে আছে, সেরকম বোঝা যাচ্ছে না। এতে শুধু জোট সঙ্গীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, বিএনপিরও ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘তফসিল সহসাই হয়ে যাবে। এখনো পর্যন্ত যদি আসন সমঝোতা সুস্পষ্ট না হয় তাহলে দেরি হয়ে যাবে। বিএনপির এই ঢিমে চলা নীতি গণতন্ত্র মঞ্চকে হতাশ ও বিক্ষুব্ধ করেছে। প্রতিপক্ষ জামায়াত তার শরিকদের নিয়ে বিভাগীয় সমাবেশ করছে, দোদুল্যমান মিত্রদের কাছে টানছে। বিএনপি তার সম্ভাব্য মিত্রদের আচরণ দিয়ে দূরে ঠেলে দিচ্ছে।’
তবে নাম না প্রকাশ করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য খোলা কাগজকে বলেন, শরিকদের কিছু আসন ছাড় দেওয়া হবে। এর জন্য ৬০টি আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে। শরিকদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। একটা লিয়াজোঁ কমিটি আছে তারা আলোচনা করছে, তালিকা নিচ্ছে। আলোচনা করে সমঝোতার ভিত্তিতে শরিকদের আসন বণ্টন হবে। অতীতেও ছাড়া দেওয়া হয়েছে এবারও দেওয়া হবে।
সূত্র বলছে, ২৩৭ আসনে প্রার্থী ঘোষণা পর মিশ্র প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হয় বিএনপি। বেশ কিছু আসনে অসন্তোষ দেখা দেয়। যা পরবর্তী সময়ে আরও ছড়িয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে বেগ পেতে হয় দলটিকে। যদিও কিছু আসনে এখনো অসন্তোষ রয়েছে। এর মধ্যে জোটের বিষয়টি নিয়ে বিএনপির মধ্যে আলোচনা কম হচ্ছে। এমনকি এ নিয়ে দলের মধ্যে কোনো সমন্বয়ও নেই।
এদিকে জোট নিয়ে বিএনপির নির্লিপ্ততায় কিছুটা নাখোশ দীর্ঘদিনের মিত্ররা। তারা মনে করছেন, বিএনপি তাদের অবমূল্যায়ন করছে। অনেকের আশঙ্কা, এর ফলে ছোট ছোট দলগুলো জামায়াতের দিকে ঝুঁকে যেতে পারে। কারণ জামায়াত তার মিত্রদের নিয়ে যুগপৎ কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে জামায়াতঘনিষ্ঠ দলগুলোর মধ্যে যথেষ্ট উদ্দীপনাও দেখা যাচ্ছে।
সূত্র আরও জানায়, জামায়াতে ইসলামী যেমন সুসংগঠিতভাবে নির্বাচনি প্রচারে নেমে গেছে, তাদের প্রার্থীরা কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মেনে জোরেশোরে জনসংযোগ চালাচ্ছেন, বিএনপির প্রার্থীদের ক্ষেত্রে তেমনটি হচ্ছে না। নির্বাচন নিয়ে কেন্দ্র থেকে মাঠপর্যায়ে সেভাবে নির্দেশনা বা কোনো রূপরেখা দেওয়া হচ্ছে না। প্রার্থীরা নিজেদের মতো করে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার মাঠে বিএনপির প্রার্থীদের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা অনিশ্চয়তা। চল্লিশের বেশি আসনে প্রার্থী নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। কোনো কোনো আসনে প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে বলে আভাস মিলেছে। ফলে মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীরাও রয়েছেন অনিশ্চয়তায়। অন্যদিকে অসন্তোষের কারণে বহু আসনে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রচারণায় যেতে পারছে না বিএনপি। যার পূর্ণ সুবিধা নিচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা।
কেকে/এআর