বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫,
২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫
শিরোনাম: রাজনীতিতে ফেরা কঠিন আ.লীগের      জোটের রাজনীতিতে পিছিয়ে বিএনপি      ব্যবসায়ীদের দাপটে দর্শক সরকার       আন্দোলনরত শিক্ষকরা কাজে না ফিরলে আইনি ব্যবস্থা      রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ইসিকে তফসিল দেওয়ার আহ্বান নাহিদের      খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে প্রধান উপদেষ্টা      অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার রোধে জিরো টলারেন্স নিশ্চিত করতে হবে : উপদেষ্টা ফরিদা      
খোলাকাগজ স্পেশাল
রাজনীতিতে ফেরা কঠিন আ.লীগের
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৯:২২ এএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

চব্বিশের জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। গত ১৭ নভেম্বর এই রায় ঘোষণার পর দলটির ভবিষ্যৎ রাজনীতি কী হবে- দেশের রাজনীতিতে এ নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। দলটির সমর্থকদের পাশাপাশি সুধী সমাজের মধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, আওয়ামী লীগ মূল রাজনীতিতে ফিরতে পারবে কি না? দলটি কি টিকে থাকবে? থাকলে কার নেতৃত্বে টিকে থাকবে সে প্রশ্নও সামনে আসতে শুরু করেছে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রায় ঘোষণার পর শেখ হাসিনার রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটেছে। আওয়ামী লীগ আর দেশের মূল রাজনীতিতে ফিরতে পারবে না। এটাই এখন বাস্তবতা। বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনকানুন মেনেই এ বিচার সম্পন্ন হয়েছে। যদিও ভারতে পলাতক থাকায় হাসিনার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পথে অনেক বাধা রয়েছে; কিন্তু দলটির রাজনীতি কার নেতৃত্বে চলবে, নাকি এখনকার মতো দুর্বল অবস্থায় টিকে থাকবে সে প্রশ্নে নানা আলোচনা ও জল্পনা-কল্পনা ডালপালা মেলতে শুরু করেছে। 

সূত্রগুলো জানাচ্ছে, শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যদের দেশ ছেড়ে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে এমনিতেই নেতিবাচক আলোচনা ছিল। এরপর শেখ হাসিনার মামলার রায় এবং স্বর্ণ ও প্লট দুর্নীতির বিষয়টি সামনে আসায় দলকে আরও বেকায়দায় ফেলেছে। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই এসব ঘটনায় কিছুটা ‘দমে’ গেছেন। তারা বলছেন, মাঠপর্যায় থেকে ঝুঁকি নিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম করার কারণে তাদের জন্য ক্রমশ ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। গ্রেফতার আতঙ্কে তাদের থাকতে হচ্ছে লুকিয়ে। শত শত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ঝুলছে হত্যা ও দুর্নীতির মামলা। ফলে এমন পরিস্থিতির মধ্যে দলীয় প্রধানের বিষয়ে নেতিবাচক খবর তাদের বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। 

বলা হচ্ছে, হাসিনা নিজে এবং তার পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের বেশির ভাগই ৫ আগস্টের আগে-পরে নির্বিঘ্নে দেশ ছাড়তে পারলেও বিপদে ফেলে গেছেন তৃণমূল নেতাকর্মীদের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বলেন, এভাবে আর কতদিন চলবে জানি না। এখনো দলের হাইকমান্ড থেকে কোনো সঠিক দিকনির্দেশনা নেই। মাঝেমধ্যে ‘খামখেয়ালি দু-চারটি কর্মসূচির’ কারণে উলটো বিপদ বাড়ছে। এর সঙ্গে দলীয় সভাপতির বিরুদ্ধে একের পর এক মামলার রায় এবং নানা নেতিবাচক ঘটনা সামনে আসছে। ফলে এখন দলের হাল কে ধরবে, আর দলই বা কী নিয়ে রাজনীতি করবে তা গভীর চিন্তার বিষয় বলে জানান ওই নেতা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শেখ হাসিনার মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ের আগে তিন-চার দিন পরিস্থিতি কিছুটা উত্তপ্ত করতে পারলেও রায় ঘোষণার সময় দলটির সেই চেষ্টা রাজনৈতিক মাঠে খুব একটা দৃশ্যমান হয়নি। কিন্তু রায়ের আগের কয়েক দিনে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল যে, দেশে অনেক বড় ঘটনা ঘটবে। অনেক সংঘাত হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরকারের কঠোর অবস্থান এবং বিএনপি ও জামায়াতসহ রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে নামতে খুব একটা সাহস পাননি। গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুরে দু-একটা ঘটনা দেখা গেলেও ঢাকাসহ দেশে তাদের প্রভাব ও তৎপরতা ছিল খুবই ক্ষীণ। অনেকের মতে, আওয়ামী লীগের তৎপরতায় বরং দলের মধ্যম ও মাঠপর্যায়ের আরও কিছু নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করার সুযোগ তৈরি হয়েছে; যারা ৫ আগস্টের পর কোনোমতে টিকে ছিলেন। 

পর্যবেক্ষদের মতে, এসব ঘটনায় প্রমাণিত হয়, বিরোধী দলের শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এবং পলাতক অবস্থায় তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ- এ দুই অবস্থায় দলটির শক্তিতে অনেক ফারাক রয়েছে। আগের আওয়ামী লীগের শক্তির সঙ্গে এখনকার শক্তির কোনো মিল পাওয়া যায় না। বাংলাদেশে এমন একটা আলোচনা আছে যে, আওয়ামী লীগ মানেই আন্দোলনের দল। কিন্তু এবার দলটির সেই শক্তি কিছুটা ক্ষীণ হয়েছে বলে দৃশ্যমান হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেন, একদিকে দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ। নির্বাচনে অংশগ্রহণ অনিশ্চিত। কেউ প্রকাশ্যেও আসতে পারছেন না। অন্যদিকে দলীয় সভাপতির মৃত্যুদণ্ডের সাজা হলো। ফলে এ মুহূর্তে তাদের সামনে তেমন কোনো দিকনির্দেশনা নেই। তারা আরও বলেন, দেশের বাইরে বসে শুধু সাক্ষাৎকার দিয়ে এবং ছোটখাটো দু-একটা ঝটিকা মিছিল কিংবা ‘অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়ে’ ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে না। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে টিকে থাকতে হলে রাজনৈতিক তৎপরতা থাকা জরুরি। সে তৎপরতা অবশ্যই বৈধ দলের মাধ্যমেই হওয়া উচিত। ফলে এ বিষয়ে দলের হাইকমান্ডকে অবশ্যই সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে তারা জানান। 

কেউ কেউ বলছেন, সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে দেওয়া হতে পারে আপৎকালীন নেতৃত্ব। পাশাপাশি দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি হিসাবে সাবেক এমপি সাবের হোসেন চৌধুরীর নাম নিয়ে রাজনীতিতে আলোচনা আছে। এর বাইরে কেউ কেউ কারাগারে থাকা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর কথাও বলছেন। তবে এ সবকিছুই ভারতে পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার ওপর নির্ভর করছে। তিনি সবুজ সংকেত না দিলে দলের সামনে আসতে কেউ রাজি হবেন না। এমতাবস্থায় তাদের রাজনীতিতে ফেরাও সম্ভব নয়। 

বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে বলে মনে করছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি)। সংস্থাটি এক বিবৃতিতে বলেছে, শেখ হাসিনার বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফিরে আসার সম্ভাবনা এখন খুব কম। একইসঙ্গে তিনি নেতৃত্বে থাকলে দল হিসাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির ময়দানে ফেরা সহজ হবে না বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। একই ধরনের মত দিয়েছেন রাজনীতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ। তাদের মতে, অপরাধীদের বিচার হবেই। তবে দল হিসাবে আওয়ামী লীগকে টিকে থাকতে হলে অপরাধের দায় ও ভুল স্বীকার করে ‘ক্লিন ইমেজ’র নতুন নেতৃত্ব সামনে আনতে হবে। ‘রি-কনসিলিয়েশন’ বা রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে এটা হতে পারে বলেও মনে করেন তারা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ উর রহমান বলেন, ‘আমরা যদি ধরেও নিই যে, বিচারে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলো না। কিন্তু তারপরও হাসিনা তো মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে ফিরতে পারবেন না। এ ছাড়া তার বয়সও আর সাপোর্ট করছে না। ফলে হাসিনা নেই। কিন্তু ফিরে আসার জন্য আওয়ামী লীগের যে বাস্তবতাগুলো ছিল, সেটা একই থাকছে।’ 

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, আওয়ামী লীগ এখন ইতিহাস, তারা আর কখনো সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরতে পারবে না। সম্প্রতি রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এখন ইতিহাসের একটি অধ্যায় মাত্র। তারা পুনরায় রাজনৈতিক ময়দানে ফিরবে আমি এমনটা মনে করি না। একইভাবে সচেতন জনগণও এটাই বিশ্বাস করে। কেবল মাঝে মাঝে মিছিল বা সমাবেশ করলেই কোনো সংগঠন টিকে থাকতে পারে না।’ 

কেকে/এআর
আরও সংবাদ   বিষয়:  আওয়ামী লীগ   গণঅভ্যুত্থান  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে চান পুতিন : ট্রাম্প
চুয়াডাঙ্গায় অবৈধভাবে জৈব সার মোড়কীকরণে জরিমানা
জলবায়ু পরিবর্তনে নারী কৃষকের প্রাধান্য ও ঝুঁকি প্রসঙ্গে
বেগম জিয়া : নীতি ও আপোসহীনতার প্রতীক
রাজনীতিতে ফেরা কঠিন আ.লীগের

সর্বাধিক পঠিত

বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় বান্দরবানে প্রার্থনা সভা
ফটিকছড়িতে অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান
সাভারে টিভি সাংবাদিকদের সংগঠন টিআরসি'র আত্মপ্রকাশ
চিরিরবন্দরে বাস–ভ্যান সংঘর্ষে নিহত ২
টেকনাফে অপহরণ বন্ধের দাবিতে স্থানীয়দের বিক্ষোভ

খোলাকাগজ স্পেশাল- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close