বহুল প্রতীক্ষিত জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান আজ। এদিন জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় বিকেল ৪টায় জুলাই স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হবে। স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকেও স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা, উচ্চ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তার ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।
তবে জুলাই সনদে সব দল স্বাক্ষর করবে কিনা তা নিয়ে তৈরি হেয়ছে অনিশ্চয়তা। বিশেষ করে সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের সময়সহ কিছু বিষয় নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতেিরাধ রয়ে গেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর সনদের স্বাক্ষরের বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি) সনদের আইনি ভিত্তি ছাড়া স্বাক্ষর করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে চাটি বম দল এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছে তারা সনদে স্বাক্ষর করবে না। তবে বিএনপি ও এর সমমনা দলগুলো সনদে স্বাক্ষর করবে বলে জানা গেছে।
এদিকে জাতীয় সনদ স্বাক্ষর নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটাতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আহ্বানে গত বুধবার রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এতে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতারা অংশ নেন। বৈঠকে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদারসহ কমিশনের অন্যান্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি শুক্রবার জুলাই সনদে সই করতে প্রস্তুত আছে জানিয়ে আলোচনায় দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘গণভোট আগে না পরে এটি জাতীয় সনদের কোনো বিষয় নয়। বাস্তবায়নের জন্য ঐকমত্য কমিশন সরকারের কাছে সুপারিশ দেবে। বাস্তবায়নের জন্য ঐকমত্য কমিশন সরকারের কাছে সুপারিশ দেবে। আমাদের কন্টিনিউয়াস (ধারাবাহিক) সমর্থন আপনার প্রতি ছিল, আছে।’
এদিকে জামায়াত জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে কিনা এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো উত্তর মেলেনি। দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের জানান, শুক্রবার জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তারা দাওয়াত পেয়েছেন এবং আশা করছেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হবেন। সনদে সই করবেন কি না, সেটা অনুষ্ঠানের দিন সবাই দেখতে পারবেন। সনদে স্বাক্ষর করবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘১৭ তারিখে (শুক্রবার) আমরা আশা করি, যাব। মাত্র এক দিন বাকি আছে, ওই দিন গেলেই ইনশাআল্লাহ দেখে ফেলবেন।’ কোনো অনিশ্চয়তা আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সে রকম অনিশ্চয়তা আমরা দেখি না।’
আইনি ভিত্তি ছাড়া জুলাই সনদ স্বাক্ষরের বিষয়টি শুধু আনুষ্ঠানিকতা বলে উল্লেখ করেছেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, আইনি ভিত্তি ছাড়া এবং আদেশের ব্যাপারে নিশ্চয়তা ছাড়া জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলে সেটা মূল্যহীন হবে। এ কারণে শুক্রবারের জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের অংশীদার হবে না এনসিপি। এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, সর্বশেষ জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের সময়ও আইনি ভিত্তির কথা বলা হয়েছিল। শুধু কয়েকটি রাজনৈতিক দল এক জায়গায় বসে একটা দীর্ঘ আলোচনায় কিছু বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোই যথেষ্ট নয়। রাজনৈতিক দলগুলোকে নিশ্চয়তা দিতে হবে, পরবর্তী সময়ে ক্ষমতায় গেলে সেগুলো বাস্তবায়ন করবে।
জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে প্রতারণা করা হয়েছে উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্রের আগেও দাবি ছিল আইনি ভিত্তি থাকবে। কিন্তু সেটা হয়নি। জুলাই ঘোষণাপত্রের যে টেক্সট, সেটি নিয়ে কিন্তু একধরনের প্রতারণা করা হয়েছে। সেই টেক্স আমাদের দেখানো হয়নি। আগে যে অংশ দেখানো হয়েছে, ঘোষণাপত্র পাঠের সময় যেটা পরিবর্তিত হয়েছিল এবং সেটা অনেক কম্প্রোমাইজ একটা ডকুমেন্ট হয়েছে।’
এনসিপির আহ্বায়ক আরও বলেন, ‘আমরা আরেক ঘটনা সাক্ষী হতে চাই না, যেটার আসলে কোনো মিনিং নেই। আমরা আইনি ভিত্তি ছাড়া ও অর্ডারের ব্যাপারে নিশ্চয়তা ছাড়া যদি সনদে স্বাক্ষর করি, সেটা মূল্যহীন হবে এবং পরবর্তী সময়ে সরকার আদেশ কিসের ভিত্তিতে দেবে, সেটির কোনো নিশ্চয়তা পাচ্ছি না। আমরা সেই বিষয়টা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জুলাই সনদ স্বাক্ষরের যে অনুষ্ঠান বা যে আয়োজন চলছে, সেখানে আমরা নিজেরা অংশীদার হব না।’
এদিকে স্বাধীনতার ঘোষণা বাদ দেওয়ার সুপারিশ থাকায় জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে না সিপিবিসহ চার বাম দল। অন্য তিনটি দল হলো বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ। এক সংবাদ সম্মেলনে এই চার দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, জুলাই সনদের প্রথম অংশে পটভূমিতে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলনের ইতিহাস সঠিকভাবে উপস্থাপিত হয়নি, বারবার সংশোধনী দিলেও সেগুলো সন্নিবেশিত করা হয়নি। সংবিধানের ১৫০ (২) অনুচ্ছেদে ক্রান্তিকালীন বিধানে ৬ষ্ঠ তফসিলে থাকা স্বাধীনতার ঘোষণা ‘ডিক্লারেশন অব ইনডিপেনডেন্স’ এবং ৭ম তফসিলে থাকা ‘প্রক্লেমেশন অব ইনডিপেনডেন্স’ বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। যা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তি, তা বাদ দিলে বাংলাদেশের অস্তিত্বই থাকে না। এসব বিষয় নিষ্পত্তি না হওয়ায় তাদের পক্ষে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করা সম্ভব হচ্ছে না।
কেকে/ আরআই