নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাঈনুল ইসলামের বিরুদ্ধে অস্বাভাবিক সম্পদের খোঁজে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরই সাথে নড়েচড়ে বসেছে দুদকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। প্রাথমিক অনুসন্ধানে তার নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে জমি, বিলাসবহুল বাড়ি ও গাড়িসহ বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থের তথ্য উঠে এসেছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) নোয়াখালীর সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল নোমান বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।
সোনাইমুড়ী উপজেলা সাবেক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও বর্তমানে নোয়াখালী চিকিৎসা সহকারী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (ম্যাটস) জুনিয়র লেকচারার মাঈনুল ইসলামের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করা হয়েছে। শিগগিরই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
অভিযুক্ত এ কর্মকর্তা দীর্ঘদিন ধরেই সরকারি স্বাস্থ্য দফতরে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে তার লাইফস্টাইল এবং সম্পদের পরিমাণ সরকারি বেতনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
জানা যায়, সোনাইমুড়ী পৌর এলাকার কৌশল্যারবাগ গ্রামের মৃত আবদুল মতিনের ছেলে মাঈনুল ইসলাম ২০০০ সালে সোনাইমুড়ী বাজারের কলেজ রোডে মেডিকেয়ার হাসপাতাল নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হন। ২০০১ সালে সোনাইমুড়ী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পদায়ন থাকলেও তিনি নিয়মিত দায়িত্ব পালন করেননি। তার বিরুদ্ধে সরকারি হাসপাতালের চাকরি করাকালীন বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের স্থানীয় সংসদ সদস্যকে হাত করে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তার পদ নেন। তখন থেকে সরকারি হাসপাতালের বিভিন্ন বরাদ্দের অর্থ আত্মসাৎ করে বিপুল অঙ্কের টাকার মালিক হন।
বিগত ২৩ বছর তিনি সোনাইমুড়ীর বিভিন্ন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত থেকে ২ টি বিলাশ বহুল গাড়ী ক্রয় করেছেন। ঢাকায় ৩টি বিলাসবহুল প্ল্যাট কিনেছেন। একেকটি প্ল্যাটের মূল্য কয়েক কোটি টাকা। কানাডায় তার সহোদরের মাধ্যমে ২ টি বাড়ী কিনেছেন। তার গ্রামের বাড়ী সোনাইমুড়ী পৌরসভার শিমুলিয়া গ্রামে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন। পৌর এলাকায় সোনাইমুড়ী বাজার, কলেজ রোডে জমিলা মেমোরিয়াল নামে তার মালিকানাধীন ১টি হাসপাতাল রয়েছে। তার স্ত্রীর নামে ঢাকার পশ্চিম ধানমন্ডি ঝিগাতলায় ১টি বাড়ী রয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংকে নামে বেনামে একাউন্টে রয়েছে বিপুল পরিমাণের টাকা। রয়েছে কোটি কোটি টাকা মূল্যের কৃষি জমি।
দুদক নোয়াখালীর উপ-পরিচালক মো. ফারুক আহমেদ বলেন, ‘স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সম্পদের তদন্ত করছে দুদক। শিগগিরই তদন্ত করে প্রতিবেন দাখিল করা হবে।’
সচেতন মহলের দাবি, বছরের পর বছর ধরে এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য খাতে নানা অনিয়ম দুর্নীতি করে আসছে। কিন্তু কেউই এসব নিয়ে মুখ খুলতে সাহস পায় নাই।
তবে দুদকের এই পদক্ষেপে কিছুটা হলেও স্বচ্ছতা ফিরবে বলে আশা তাদের।
এ বিষয়ে মাইনুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, তার বিরুদ্ধে দুদকে একটি অভিযোগ হয়েছে, তিনি জেনেছেন। নোয়াখালী দুদকের সদস্যরা সরেজমিনে এসেছেন।
কেকে/ এমএ