চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলাকে বিভক্ত করে নতুন ‘ফটিকছড়ি উত্তর’ উপজেলা গঠনের সরকারি প্রস্তাব ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। প্রস্তাবিত উপজেলার অন্তর্ভুক্ত তালিকায় সুয়াবিল ইউনিয়ন ও নাজিরহাট পৌরসভার আংশিক অংশ (১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড) সংযোজনের সিদ্ধান্তে স্থানীয়দের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।
‘ফটিকছড়ি ছাড়ব না, উত্তরে যাব না’- এই স্লোগানকে ধারণ করে এলাকাবাসী সংবাদ সম্মেলন ও স্মারকলিপি প্রদানসহ বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন। দাবি না মানলে আগামীতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালনসহ আরও কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেছেন তারা।
সূত্র জানায়, সরকার প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের অংশ হিসেবে ফটিকছড়ি উত্তর নামে নতুন উপজেলা গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত ৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত প্রি-নিকার সভায় এ প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে এবং চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য তা শিগগিরই নিকার সভায় উপস্থাপিত হবে বলে জানা গেছে। তবে প্রস্তাবিত উপজেলার সঙ্গে সুয়াবিল ইউনিয়ন ও নাজিরহাট পৌরসভার অংশ সংযোজনের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা বলছেন, ‘এটি আইনসম্মত নয় ও জনস্বার্থবিরোধী।’
ফটিকছড়ির প্রস্তাবিত নতুন উপজেলার সঙ্গে সুয়াবিল ইউনিয়ন ও পৌরসভার অংশ সংযোজনের প্রস্তাবে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি ও শিক্ষাবিদরা একে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও জনবিরোধী বলে মন্তব্য করেছেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান, হালদা গবেষক অধ্যাপক ড. মো. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘এই প্রস্তাব সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। মাঠ প্রশাসনের কোনো প্রতিবেদনে সুয়াবিল ইউনিয়ন বা পৌরসভার অংশ সংযোজনের সুপারিশ ছিল না, এমনকি জনগণের পক্ষ থেকেও কোনো দাবি ওঠেনি।’
সুয়াবিল ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি এয়াকুব শহীদ বলেন, ‘সুয়াবিল থেকে প্রস্তাবিত উপজেলা সদর দপ্তরের দূরত্ব ২০-৩০ কিলোমিটার, অথচ বর্তমান ফটিকছড়ি উপজেলা সদরের দূরত্ব মাত্র ৫-৬ কিলোমিটার। এতে জনসেবার বদলে দুর্ভোগই বাড়বে।’
সাংবাদিক সাইফুর রহমান সোহান বলেন, ‘জনগণের মতামত ছাড়া উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে। বিভ্রান্তিকর তথ্য দেখিয়ে মাঠ প্রশাসনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চলছে। এলাকার জনগণ এটি মেনে নেবে না।’
প্রবীণ শিক্ষক নুরুল আলম বলেন, ‘সরকারের উন্নয়নমূলক উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে, সুয়াবিল ইউনিয়ন ও পৌরসভার অংশবিশেষকে নতুন উপজেলায় যুক্ত করা অযৌক্তিক ও জনবিরোধী। এটি বাস্তবায়িত হলে ক্ষোভ বাড়বে এবং আন্দোলন অনিবার্য হয়ে উঠবে।’
স্থানীয়রা এ যৌক্তিক দাবি না মানা হলে আরও বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করাসহ আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
কেকে/ এমএ