বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫,
৩১ আশ্বিন ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: গত বছরের তুলনায় অর্ধেকেরও নিচে জিপিএ-৫      ২০২ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সবাই ফেল      এইচএসসির পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ, পাসের হার ৫৮.৮৩%      ৩৫ বছর পর রাকসু নির্বাচন আজ      সরকারের ভেতর ‘গুপ্তচর’      ১৬ অক্টোবর : নামাজের সময়সূচি দেখে নিন      মধ্যরাতে হাসপাতালে ভর্তি হলেন খালেদা জিয়া      
খোলাকাগজ স্পেশাল
রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় ঝুঁকিতে ব্যবসা-বাণিজ্য
আলতাফ হোসেন
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৫, ৮:৪৮ এএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

আগামী ক্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে উত্তেজনায় দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের চার দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা এবং সম্ভাব্য সহিংসতার আশঙ্কায় গভীর উদ্বেগে রয়েছেন দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারা।

আন্তর্জাতিক ক্রেতারা নতুন ক্রয়াদেশ দিতে সন্দিহান হয়ে পড়েছেন, ফলে গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন শিল্পখাতে ক্রয়াদেশ কমে যাচ্ছে। নতুন বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়েছে, অনেক কারখানায় উৎপাদন বন্ধ কিংবা সীমিত করা হয়েছে। ছাঁটাই-আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন শ্রমিকরা, কর্মসংস্থানের সুযোগও দ্রুত সংকুচিত হচ্ছে। এতে অর্থনীতির গতি মন্থর হয়ে পড়ছে। 

বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনেও বলা হয়, গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে স্বভাবতই বিনিয়োগে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সংস্থাটি আশা করছে, নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা কেটে যাবে এবং অর্থনীতি তার গতি ফিরে পাবে। এ লক্ষ্যেই সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের অগ্রসর হওয়া উচিত।

অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, এই সংকট থেকে উত্তরণের প্রধান শর্ত হলো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা। একটি নির্বাচিত ও স্থিতিশীল সরকার দ্রুত দায়িত্ব নিলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরবে। নির্বাচন বিলম্বিত হলে বিনিয়োগ, রপ্তানি ও কর্মসংস্থানে বড় ধাক্কা লাগবে; যা দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে ফেলবে। 

ব্যবসায়ীদের মতে, ঋণের উচ্চ সুদহার, অর্থায়ন সংকট, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, চলমান অর্থনৈতিক মন্দা ও ডলার সংকটে অনেক শিল্প-কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া নতুন করে বিনিয়োগে আগ্রহ হারাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। অনেক সম্ভাবনাময় প্রতিষ্ঠান অর্থের অভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না, আবার অনেক পুরোনো প্রতিষ্ঠান সম্প্রসারণ পরিকল্পনা স্থগিত রেখেছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিনিয়োগকারীরা সবসময় একটি স্থিতিশীল পরিবেশে ব্যবসা পরিচালনায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। কিন্তু নির্বাচনের আগে সহিংসতা বা অস্থিরতা দেখা দিলে দেশীয় ও বৈদেশিক উভয় বিনিয়োগেই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। 

গত ১৪ অক্টোবর থেকে বন্দরের ৫২ সেবা খাতের মধ্যে ২৩টিতে বর্ধিত ৪১ শতাংশ মাশুল কার্যকর করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে দেশের উৎপাদনমুখী শিল্পখাত, ভোগ্যপণ্য, বাণিজ্যিক পণ্যসহ প্রায় সব ধরনের আমদানি-রপ্তানি পণ্যের ব্যবসায় বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। যার ভুক্তভোগী হবে সাধারণ মানুষও। এ মাশুলের পরোক্ষ প্রভাব দেশের সাধারণ মানুষের ওপর পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষভাবে কনটেইনার পরিবহনের খরচ বেড়েছে, যা আমদানি ও রপ্তানিপণ্যের মূল্যে প্রভাব ফেলবে। শিপিং লাইন এই খরচ আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকের বিলে যুক্ত করবে, ফলে ভোক্তা পর্যায়ে পণ্যের দাম বাড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী বলছেন, উৎপাদনমুখী শিল্প, ভোগ্যপণ্য, তৈরি পোশাক, প্লাস্টিক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যসহ রপ্তানিমুখী খাতে খরচ বৃদ্ধি ব্যবসার প্রতিযোগিতায় চাপের মুখে পড়বে। বিশেষ করে পোশাক খাত, যা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে রপ্তানিতে ইতোমধ্যেই চ্যালেঞ্জের মুখে আছে, নতুন মাশুলের কারণে আরো ঝুঁকিতে পড়বে। এই বাড়তি খরচ দেশের পণ্যের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং চট্টগ্রাম বন্দরকে সবচেয়ে ব্যয়বহুল বন্দরে পরিণত করবে।

মার্কিন শুল্ক বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে। টানা দুই মাস ধরে রপ্তানি আয় কমছে। চলতি বছরের আগস্টে রপ্তানি কমেছে ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ, আর সেপ্টেম্বরে হ্রাসের হার দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৬৬ শতাংশে। উদ্যোক্তারা বলছেন, শিগগির পরিস্থিতি উন্নতির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না, বরং বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতা আরো বাড়ছে।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেছেন, বর্তমানে অধিকাংশ বিদেশি ক্রেতা নতুন ক্রয়াদেশ দিচ্ছেন না, বরং তারা অতিরিক্ত ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্কের একটি অংশ বাংলাদেশি সরবরাহকারীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন; যা রপ্তানিকারকদের জন্য বড় চাপ সৃষ্টি করেছে। তার মতে, ইতোমধ্যে প্রাথমিক শুল্ক সমন্বয় ও উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে রপ্তানিকারকরা সংকটে রয়েছেন। 

তিনি আরো বলেন, রপ্তানির এই ধীরগতি আগামী দুই থেকে তিন মাস পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। অন্যদিকে, চীন ও ভারতের ওপর মার্কিন শুল্ক বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং অন্যান্য বাজারে কঠিন প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হচ্ছেন। চীনা ও ভারতীয় প্রস্তুতকারকরা যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষতিপূরণের লক্ষ্যে এসব বাজারে রপ্তানি বাড়ানোর চেষ্টা করছে, ফলে বাংলাদেশের পোশাক খাত অতিরিক্ত চাপের মধ্যে পড়েছে। 

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, বর্তমানে ব্যবসায়িক কার্যক্রম সব ক্ষেত্রেই ধীরগতিতে চলছে। ট্যারিফ বৃদ্ধির কারণে আমেরিকার বাজারও স্লো হয়ে গেছে এবং এটি শুধু বাংলাদেশের জন্য নয় বিশ্বব্যাপী রপ্তানি প্রবাহে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। চীন ও ভারত আরো আক্রমণাত্মক হওয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানিতে চাপ পড়েছে।
 
তিনি বলেন, আমাদের নেগেটিভ গ্রোথ হচ্ছে না, তবে বছরের এই সময়ে আরো বেশি পজিটিভ গ্রোথ হওয়া উচিত ছিল। তবে নির্বাচন নিয়ে অশ্চিয়তার কারণে পুরো বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়েছে। এর সঙ্গে অন্যান্য ফ্যাক্টর মিলিয়ে এই সমস্যাগুলো তৈরি হয়েছে।

কেকে/ এমএস
আরও সংবাদ   বিষয়:  রাজনৈতিক   অনিশ্চয়তা   ঝুঁকি   ব্যবসা-বাণিজ্য  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

গলাচিপায় দূর্নীতি মুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়
এইচএসসিতে ফেল ৫ লাখেরও বেশি পরীক্ষার্থী
বাহুবলে ঘরে ঘরে গ্যাস সংযোগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল
এবছরও পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে এগিয়ে ছাত্রীরা
গত বছরের তুলনায় অর্ধেকেরও নিচে জিপিএ-৫

সর্বাধিক পঠিত

এইচএসসির পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ, পাসের হার ৫৮.৮৩%
ঢাকা-১৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ববি হাজ্জাজের আত্মপ্রকাশ
১৫ বছর পর হত্যা মামলার দুই সাজাপ্রাপ্ত গ্রেফতার
সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের খোয়া, কাজ বন্ধের নির্দেশ ইউএনওর
চাকসু নির্বাচন : চারুকলার হোস্টেলের ফল ঘোষণা—ছাত্রদল এগিয়ে
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close