আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের লড়াইয়ে নিজেদের প্রস্তুত করছে দেশের অন্যতম ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী। সেই লক্ষ্যে ইতোমধ্যে নানা কৌশলে প্রয়োগও শুরু করেছে দলটির নেতাকর্র্মীরা।
সূত্র বলছে, আসন্ন নির্বাচনে তৃণমূল পর্যায়ে পতিত আওয়ামী লীগ স্থানীয় নেতাকর্মী-সমর্থকদের টার্গেট করে নানা ধরনের লবিং ও তদবির এবং প্রতিশ্রুতি আদায় করছেন জামায়াতের মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা। যার মূল লক্ষ্য আগামী নির্বাচনে দাড়িপাল্লা প্রতীকে ভোট টানা। অন্যদিকে বিদেশে অবস্থানরত কর্মী-সমর্থকরাও সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। তারা নিজ নিজ পরিচিত রুমমেট, সহকর্মী এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে বাড়াচ্ছেন যোগাযোগ, যাতে তারা দেশে থাকা পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদের জামায়াতকে ভোট দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করে।
একইসঙ্গে নির্বাচনকে সামনে রেখে মাসিক ইয়ানত (চাঁদা) বা অনুদান আগের তুলনায় বাড়িয়ে দিয়েছেন দলটির প্রবাসী সমর্থকরা। দলটির এক প্রবাসী নেতা জানান, প্রবাসীরা সবসময় অর্থনৈতিকভাবে শক্তি জোগান দেয়। তবে নির্বাচনের সময় এই সহায়তা কয়েক গুণ বাড়ে।
এ ছাড়া দলটি এবার নির্বাচনি প্রচারণায় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকেও বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রভাব বাড়াতে দলটি ইতোমধ্যে লাখ থেকে মিলিয়ন ফলোয়ার বিশিষ্ট অন্তত ৭০০টি ফেসবুক পেজ কিনেছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। আসন্ন নির্বাচনে এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। এই পেজগুলোতে মূলত ধর্মীয় বার্তা, রাজনৈতিক ভিডিও, ভোটকেন্দ্রিক কন্টেন্ট ও প্রভাবিতকারী পোস্টের মাধ্যমে জনমত গঠন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের কাছে পৌঁছাতে টার্গেটেড ক্যাম্পেইনের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের অনলাইন প্রচারণা প্রচলিত রাজনৈতিক মঞ্চ ছাড়াও বিকল্প জনমত তৈরি করতে পারে; যা নির্বাচনের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তাদের মতে, জামায়াত সব সময় সংগঠিত দল। এখন তারা মাঠে যে কৌশল নিয়েছে, সেটা নীরব এবং কার্যকর। আওয়ামী লীগের ভাঙা ভোটব্যাংক, তরুণ ভোটার এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম এই তিন জায়গায় কাজ করলে ভোটের মাঠে ভালো ফল মিলবে।
জামায়াতের তৃণমূল পর্যায়ের এক নেতা বলেন, কিছু সংখ্যক আওয়ামী লীগের সাধারণ সমর্থক হয়তো ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকতে পারে। কিন্তু অধিকাংশ লোক ভোটটা তাদের দেবে যাদের কাছে তারা নিরাপদ। পাঁচই আগাস্টের পরে তাদের এরকম অনেকেই বিভিন্নভাবে হ্যারাসমেন্টের শিকার হয়েছে, তবে সেটা জামায়াতের মাধ্যমে হয়নি। ফলে আওয়ামী লীগের সাধারণ ভোটারদের সমর্থন আমরাই পাব বলে আশা করি।
আওয়ামী লীগের ভোটের বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, আমরা বিশেষ কোনো গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে কার্যক্রম পরিচালনা করছি না বরং আমরা সর্বস্তরের মানুষকে সহযোগিতা, উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছি আর এতেই আওয়ামী লীগসহ সাধারণ ভোটারদের ভোট জামায়াতের পক্ষে আসবে বলে আশা রাখি।
এদিকে নির্বাচনি কৌশল সম্পর্কে জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার গণমাধ্যমকে বলেন, সব ইসলামি ও দেশপ্রেমিক কিছু দলের সঙ্গে আমাদের নির্বাচনি ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। আমরা এ ক্ষেত্রে অনেক সম্ভাবনা দেখছি।
ভোটের মাঠে তৎপরতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা মানুষের কাছে যাচ্ছি, সভা-সমাবেশ করছি। আমরা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে দেশ কীভাবে চালাব, সেই ধারণা মানুষকে দিচ্ছি। ন্যায়বিচার, ব্যবসা-বাণিজ্যের সুষ্ঠু পরিবেশের আশ্বাস দিচ্ছি। আমরা ইনক্লুসিভভাবে প্রার্থিতার ক্ষেত্রে সরকারের সাবেক পদস্থ আমলা, সেনাবাহিনীর সদস্য, বড় আলেম, এমনকি কোনো এলাকায় যদি অমুসলিমকেও যোগ্য হিসেবে পেয়ে যাই, তাহলে তাদেরও নেব। আমরা সবাইকে ধারণ করেই একটি নির্বাচনে যেতে চাচ্ছি, যেন সংসদ খুব দক্ষ ও যোগ্য হয়।
কেকে/ এমএস