চারপাশে সবুজ ধানক্ষেত, নদীর হাওয়া আর নীরব বিকেল—এর মাঝেই মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার খালিয়া গ্রামে গড়ে উঠেছে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ, খালিয়া পাবলিক লাইব্রেরি ও কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট সেন্টার। গ্রামীণ পরিবেশে গড়ে ওঠা এই ছোট্ট গ্রন্থাগারটি যেন হয়ে উঠেছে জ্ঞানের নীরব শিক্ষক।
ঢাকা থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার এবং উপজেলা সদর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরের এই লাইব্রেরি ২০২০ সালে স্থানীয় কিছু বইপ্রেমীর উদ্যোগে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে এখানে রয়েছে প্রায় ২ হাজার বই ও ম্যাগাজিন—গল্প, ইতিহাস, বিজ্ঞান, শিশুতোষ সাহিত্য থেকে শুরু করে সমকালীন নানা বিষয়ের ওপর।
বইগুলোর বেশিরভাগই এসেছে সরকারের সহায়তা ও স্থানীয় দাতাদের অনুদানে। প্রতিদিন এখানে আসেন ডজনখানেক পাঠক—কেউ পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য, কেউ চাকরির তথ্য জানতে, কেউবা কেবল মনকে হালকা করতে।
১৯ বছর বয়সী আয়েশা বেগম, যিনি চাকরির সন্ধানে আছেন। তিনি বলেন, এই লাইব্রেরিটা আমাদের জন্য জানালার মতো। এটা না থাকলে আমরা কিছুই শিখতে পারতাম না।
লাইব্রেরিটি আশপাশের পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি উচ্চবিদ্যালয় ও একটি মাদ্রাসার সঙ্গে যুক্ত। এটি কেবল পাঠাগার নয় বরং একটি কমিউনিটি হাব, যেখানে চলে পাঠচর্চা, কর্মদক্ষতা উন্নয়ন ও চাকরিমুখী প্রশিক্ষণ কর্মশালা।
গ্রন্থাগারটি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যাশনাল বুক সেন্টারে নিবন্ধিত। মাঝে মাঝে সরকার থেকে বই ও অল্প কিছু অনুদান বা উপকরণ পাওয়া যায়। তবে বড় চ্যালেঞ্জ অর্থের অভাব।
স্বেচ্ছাসেবী লাইব্রেরিয়ান হাসানুর রহমান জানান, গত মাসে প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল লাইব্রেরি, কারণ বিল পরিশোধের টাকা ছিল না। দর্শনার্থীদের দানেই কোনোভাবে টিকে আছে। প্রতিদিনই চলে সংগ্রাম।
এদিকে খালিয়া লাইব্রেরি এখনো বেঁচে আছে এক অনন্য আশাবাদের গল্প হয়ে। সন্ধ্যা নামলে যখন ছোট্ট ঘরের একমাত্র বাতিটি জ্বলে ওঠে, কয়েকজন পাঠক নীরবে বসে বইয়ের পাতায় ডুবে যায়—যেন অন্ধকারের মধ্যে আলোর খোঁজ।
কৃষিনির্ভর এই অঞ্চলে, যেখানে অনেক তরুণ শহরে চলে যায় জীবিকার খোঁজে, সেখানে এই লাইব্রেরি শুধু বই নয়— আশা, স্বপ্ন ও জ্ঞানের আলো বিলিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
লাইব্রেরি কমিটির সাধারণ সম্পাদক খিজির হায়াত বলেন, আমরা চাই জেলা ও উপজেলা প্রশাসন সহযোগিতার হাত বাড়াক। গ্রামীণ লাইব্রেরিতে বিনিয়োগ মানে হচ্ছে আলোকিত বাংলাদেশ গড়া।
কেকে/ আরআই