শরতের আকাশে সাদা মেঘের ভেলা, আর দিগন্তে জুড়ে কাশফুলের মেলা জানান দিচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা আসন্ন। এই ধর্মের মানুষের কাছে দেবী দুর্গা শক্তি ও সুন্দরের প্রতীক। হিন্দু শাস্ত্র মতে, প্রতি বছর অসুরের বিনাশ করতেই মা দেবী দুর্গা ধরাধামে আবির্ভূত হন। সমাজ থেকে অন্যায়-অবিচার দূর করতেই এ পূজার আয়োজন।
দিন যতই এগিয়ে আসছে মণ্ডপগুলিতে শিল্পীর নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় কাদামাটির কাজ ও রঙ তুলির আঁচড়ে ততই মূর্ত হয়ে উঠেছে দেবীর রুপ। তুলির আঁচড়ে সুন্দর করে তোলা হচ্ছে দুর্গা, গণেশ, কার্তিক ও মহিষাসুর, লক্ষী, স্বরস্বতি ও তাদের বাহনের প্রতিমা। পদ্ম ও শিউলি লাবণ্য ছড়িয়েছে, ঢাক-ঢোল বাজিয়ে দেবী দুর্গাকে বরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
আগামী রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) মহা ষষ্ঠী পূজা অর্চনার মধ্য দিয়ে শুরু হবে শারদীয় দুর্গাপূজা এবং সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী শেষে বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে সমাপ্ত হবে এ উৎসবের।
এদিকে, হিন্দু পল্লীগুলোতে সাজ সজ্জায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে, ঘর-বাড়ি পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করা, বিভিন্ন আলপনার ছাঁপ ও নতুন কাপড় কেনাকাটা। দেবীকে বরণ করতে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে পত্নীতলার স্থায়ী-অস্থায়ী মণ্ডপগুলোতে। ঢাকের তালে আরতি আর উলুধ্বনিত মুখরিত হচ্ছে মণ্ডপগুলো।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এবার নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলায় ১১ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভায় মোট ৭৯টি মন্ডপে শারদীয় দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
উপজেলা সদরের কেন্দ্রীয় বাসুদেব মন্দির, শীবকালি মন্দির, ছোট চাঁদপুর, চকনিরখিন মোড়, পালশা, পুঁইয়াসহ কয়েকটি মণ্ডপে সরেজমিনে দেখা যায়, ব্যস্ত সময় পার করছেন মালাকররা (কারিগর)।
শিবকালী মন্দিরে কর্মরত দুলাল মালাকর জানান, এবার তিনি ৮ মন্দিরে প্রতিমা তৈরির কাজ নিয়েছেন মাটির কাজ শেষের দিকে রঙের প্রলেপ শুরু করবেন।
পালশা মন্দিরে কর্মরত মালাকর দিলিপ কুমার জানান, সে প্রতিমা তৈরির কাজ স্বপ্নে শিখেছেন। দুই বছর ধরে তিনি এ কাজ করছেন। এবার তিনি ৩ টি প্রতিমার কাজ ধরেছেন। তবে এবার মজুরি কম। এই প্রতিমার জন্য ২০ হাজার টাকা চুক্তি হয়েছে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন ফ্রন্ট পত্নীতলা উপজেলা শাখার আহ্বায়ক সবুজ সাহা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত প্রতিমা ভাংচুর, হামলা বা কোন বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি। উপজেলা প্রশাসন ইউএনও, ওসি, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য ডিএসবি এনএসআইসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা প্রতিনিয়ত খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। আশা করছি, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পূজা উদযাপন হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘পঞ্জিকা মতে, এবার দেবী দুর্গা গজে আসবেন এবং দোলায় গমন করবেন।’
পত্নীতলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহ মো. এনায়েতুর রহমান বলেন, ‘দুর্গাপূজা উপলক্ষে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। প্রতিটি বিটে একজন বিট অফিসার থাকবে, মন্দিরে মন্দিরে আনসার ভিডিপি সদস্য, গ্রাম পুলিশ এবং অধিক গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে, আরও থাকবে টহল পুলিশ। এ ছাড়া, মন্দিরে মন্দিরে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক টিম থাকবে, মন্দির কমিটিকে সিসি ক্যামেরার কথা বলা হয়েছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পূজা উদযাপন হবে। কেউ কোন বিশৃঙ্খলা করলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আশা করছি, শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপন হবে।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আলীমুজ্জামান মিলন বলেন, ‘প্রতিটি মণ্ডপে সরকারি জিআরের ৫০০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে।’
কেকে/ এমএ