ধান-নদী-খাল এই তিনে বরিশাল। বরিশালের প্রতিটি এলাকায় জালের মত ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ছোট বড় অসংখ্য নদী। তেমনই একটি নদী সন্ধ্যা। আড়িয়াল খাঁ থেকে সন্ধ্যা নদীর উৎপত্তি হয়ে উজিরপুর-বানারীপাড়া হয়ে পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার কঁচা নদীতে পতিত হয়েছে।
সন্ধ্যা নদীটি বরিশাল জেলার একটি প্রধান নদী। এটি বানারীপাড়া ও স্বরূপকাঠি উপজেলার মধ্যে দিয়ে প্রায় পাঁচ মাইল দীর্ঘ একটি অংশ জুড়ে প্রবাহিত। নদীটি বানারীপাড়া উপজেলাকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে এবং এই অঞ্চলকে যোগাযোগ ও জীবিকার অন্যতম প্রধান মাধ্যম হিসেবে সাহায্য করে। এই নদীটি স্থানীয় অর্থনীতি, যোগাযোগ, ব্যবসায়-বাণিজ্য ও মৎস্য আহরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
প্রায় ৬১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই নদীটি হাজারো মানুষের জীবন জীবিকার উৎস। সন্ধ্যা নদীর অপরূপ মায়াবী দৃশ্য যে কারো মন কেড়ে নেয়। কবি শঙ্খ ঘোষের স্মৃতিবিজড়িত সন্ধ্যা নদী ছিল তার শৈশব ও কৈশোরের স্মৃতিতে মাখা একটি স্থান, যা তার জন্মস্থান বরিশালের বানারীপাড়াকে ছুঁয়ে গেছে। তিনি নদীটিকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন এবং প্রায়ই কলকাতায় বসে এই নদীর তীরে ফিরে যাওয়ার কথা বলতেন। ‘সন্ধ্যানদীর জলে: বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি বইয়ে তার বাংলাদেশ সম্পর্কিত স্মৃতি, ভ্রমণ ও ভাবনাগুলো সংকলিত হয়েছে, যা নদীটির সাথে তাঁর গভীর সম্পর্কের প্রতিফলন। নদীর মায়াবী রূপে মুগ্ধ হয়ে কবি লিখেছিলেন ‘সন্ধ্যা নদীর জলে’ নামক বই। একসময় শত শত মাঝির নৌকা ও খেয়া নৌকায় সন্ধ্যা নদী মুখরিত ছিল। কালের বিবর্তনে সেই পালতোলা নৌকা কালের গর্বে হারিয়ে গিয়েছে।
সন্ধ্যা নদীর রয়েছে মানুষকে মুগ্ধ করার এক অলৌকিক ক্ষমতা। এখনও সন্ধ্যা নদীর তীরে মিনি কুয়াকাটা খ্যাত মনোমুগ্ধকর বাইপাস সড়কে সূর্যাস্ত দেখতে গোধূলি লগ্নে ভীড় করে হাজারো মানুষ।
সন্ধ্যা নদীর ইলিশ সারা দেশে খুবই বিখ্যাত। এই অঞ্চলে নদী কেন্দ্রিক ব্যবসায়-বাণিজ্য ও মৎস্য আহরণের জন্য সন্ধ্যা নদী একমাত্র ভরসা। প্রতি সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবার ভাসমান ধান-চালের হাট বসে। সন্ধ্যা নদীকে কেন্দ্র করে ধান-চালের কুঠিয়াল ব্যবসা প্রচলিত আছে। এই নদীতে ঢাকার সাথে সরাসরি লঞ্চে যোগাযোগ আছে। বাংলার শস্য ভান্ডার বরিশালের পণ্য ঢাকায় পরিবহনের জন্য এই লঞ্চগুলো ব্যবহৃত হয়।
বানারীপাড়া সন্ধ্যা নদীতে মানতা সম্প্রদায় নৌকায় বসবাস করে, যেখানে নৌকাই তাদের ঘর, সংসার, জন্ম ও মৃত্যু। তারা প্রজন্ম ধরে নদীতে ভেসে মাছ শিকার করে জীবন ধারণ করে এবং নিজস্ব কোনো ভূমি না থাকায় মৃত্যুর পর তাদের দেহ নদীতেই ভাসিয়ে দেওয়া হয়। সন্ধ্যা নদীর বুকে তাদের জন্ম, নদীতে বেড়ে ওঠা, নদীতেই মৃত্য।
কেকে/ এমএ