রোববার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫,
১০ কার্তিক ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

রোববার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: ‘শিগগিরই’ জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ দেবে ঐকমত্য কমিশন      বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হবে : তারেক রহমান      রাউজানে প্রতিপক্ষের গুলিতে যুবদল নেতা খুন      জরিপে জানা গেল ঢাকাবাসীর মাথাপিছু বার্ষিক আয়      স্ত্রীর মৃত্যুর ১১ ঘণ্টা পর প্রাণ গেল স্বামীর      সবাই সংঘাতের জন্য মুখিয়ে আছে : তথ্য উপদেষ্টা      নদী বাঁচলে পরিবেশও টিকে থাকবে : রিজওয়ানা হাসান      
ফিচার
নেছারাবাদের অলংকারকাঠি এখন ফুলের জনপদ
বানারীপাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫, ৪:৫১ পিএম
ছবি: প্রতিনিধি

ছবি: প্রতিনিধি

সন্ধ্যা নদীর কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা সবুজ-সতেজ জনপদের নাম পিরোজপুরের নেছারাবাদ (পূর্বের নাম স্বরূপকাঠি) উপজেলা। নেছারাবাদ অঞ্চলটি বিখ্যাত গাছের জন্য। এ জন্য স্বরূপকাঠিকে বৃক্ষের জনপদ বলা হয়। সমগ্র অঞ্চলজুড়ে এতটাই গাছগাছালির সমারোহ যে, মাটিতে সূর্যের আলো পৌঁছানোই কষ্টকর। প্রকৃতিপ্রিয় মানুষগুলোর কাছে স্বরূপকাঠি যেন এক বোটানিক্যাল গার্ডেন।

পৃথিবীর আরেক স্বর্গ সন্ধ্যা নদীর অববাহিকায় অবস্থিত উপকূলীয় গ্রাম অলংকারকাঠী। নেছারাবাদের বানারীপাড়া-স্বরুপকাঠির সীমান্তবর্তী গ্রাম অলংকারকাঠী- এখন সারা দেশে পরিচিত ফুলের জন্য। হঠাৎ দেখে মনে হবে, যেন ফুলের চাদরে ঢাকা পড়েছে গ্রামটি। সারি সারি হলুদ, লাল, কমলা ও সাদা রং-বেরংয়ের ফুলে ফুলে ভরে গেছে। নেছারাবাদের সড়ক ধরে বরিশালের দিকে যাওয়ার পথে অলংকারকাঠি বেইলি ব্রিজ পার হওয়ার পর থেকে সড়কের দুই দিকে যতদূর চোখ যায়, সর্বত্রই নানা রং-বেরংয়ের ফুলের সমাহার। প্রায় ৭৫ বছর পূর্ব থেকে উপজেলার আকলম, অলংকারকাঠি, সুলতানপুর, সংগীতকাঠি, আরামকাঠিসহ ১০-১২ টি গ্রামে ফুলের চাষ হচ্ছে। 

নার্সারীগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, অলংকারকাঠী ব্রিজ থেকে উত্তর ছারছীনা পর্যন্ত সড়কের দুই ধারে প্রায় ৫০০ বিঘা জমিতে গড়ে ওঠা শতাধিক নার্সারিতে চারা উৎপাদনের ধুম পড়েছে। একই সঙ্গে জমে ওঠেছে ফুলের চারা কেনা-বেচা। 

উপজেলার ৩৮টি গ্রামে কয়েক শত নার্সারি গড়ে উঠলেও মূলত নার্সারি গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে স্বরূপকাঠি সদর ইউনিয়নের অলংকারকাঠি। নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত নার্সারিতে ফোটা বাহারি ফুলে ঢেকে যায় শতাধিক নার্সারি। গ্রামটি দেখে মনে হতে পারে, যেন পুরো গ্রাম ফুলের গালিচায় মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

খ্যাতি ছড়ানো এসব নার্সারিতে কর্মসংস্থান হয়েছে হাজারো মানুষের। দিন দিন এই ব্যবসায় লাভজনক হওয়ায় ক্রমেই বদলে যাচ্ছে উপজেলার নিম্নআয়ের মানুষের জীবনধারা। এখানকার প্রায় সব মানুষ নার্সারি করে ১২ মাস ফল, ফুল ও কাঠের চারা উৎপাদন করছে। এই আয় থেকে তারা স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি হয়ে উঠছে সচ্ছল।

স্থানীয় নার্সারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এবারের শীতের মৌসুমে প্রায় শত কোটি টাকার ফুল ও ফুলের চারা বিক্রি হবে। তারা নার্সারি দিয়ে নিজে সচ্ছল হওয়ার পাশাপাশি অন্যজনকে দিয়েছেন কর্মের সন্ধান। যে কারণে নার্সারি সমৃদ্ধ এলাকায় কমে গেছে বেকার ও দরিদ্রের সংখ্যা।

অলংকারকাঠি গ্রামের বাসিন্দা হাসি বেগম বলেন, ‘স্বামীর একার আয়ে সংসার চালাতে খুব কষ্ট হতো। এ জন্য আগে সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকত। এখানে নার্সারিতে কাজ করি। প্রতিদিন ২০০ টাকা মজুরি পাই। বাড়তি এই আয় দিয়ে সংসার ভালোই চলছে।’

নার্সারি ব্যবসায়ী মাইনুদ্দীন সিকদার সুজন বলেন, ‘আমি ২০ বছর ধরে নার্সারি পেশায় যুক্ত। একসময় অন্যের নার্সারিতে কাজ করতাম, এখন অন্যের জমি বর্গা নিয়ে নার্সারি তৈরি করেছি। সেখানে ১৫-২০ ধরনের ফুল, ফল ও কাঠের চারা আছে। নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ফুলের ভরা মৌসুম। এই পাঁচ মাস নার্সারি থেকে তিন লাখ টাকার চেয়েও বেশি মূল্যের ফুল ও চারা বিক্রির আশা করছি।’

সম্প্রতি ঘুরে দেখা গেছে, অলংকারকাঠি গ্রামের রাস্তার দুই ধারে মাঠজুড়ে সারি সারি নার্সারি। সব নার্সারিতে রয়েছে ফুল, ফল, কাঠ ও ঔষধি গাছের চারা। তবে, শীত মৌসুম হওয়ায় প্রতিটি নার্সারি বাহারি ফুলে সজ্জিত। দেখে মনে হয়, এ যেন ফুলের চাদরে ঢাকা গ্রাম। এ সময় নার্সারিতে বিক্রির ধুম পড়ে। প্রতিনিয়ত স্থানীয় লোকজনসহ দূরদূরান্ত থেকে নার্সারি দেখতে আসেন নানা বয়সী মানুষ। কেউ ছবি তোলেন, কেউ আবার ঘুরে ঘুরে দেখে ফুল ও ফলের চারা কিনে নিয়ে যান। চলে খুচরা পাইকারি বেচাকেনা।

মো. শাওন নামের এক নার্সারি ব্যবসায়ী বলেন, ‘অলংকারকাঠি গ্রামে সড়কের দুই পাশে দেড় শতাধিক নার্সারি রয়েছে। প্রতিটি নার্সারিতে ৫-৭ জন শ্রমিক কাজ করেন। সব মিলিয়ে গ্রামটির নার্সারিতে হাজারেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এখানে বেকারত্বের হার অনেক কম।’

নার্সারিতে বেড়াতে আসা তাহমিনা ফ্লোরা নামের আমেরিকাপ্রবাসী বলেন, ‘আমেরিকায় বাসার সামনে বাগান আছে। ফুলের চারা কেনার জন্য ঢাকায় এসেছিলাম। কিন্তু ঢাকায় অনেক দাম। পরে অলংকারকাঠি গ্রামের খবর পেয়ে এখানে আসি।’

নেছারাবাদ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা চপল কৃষ্ণ নাথ বলেন, ‘উপজেলায় মোট ৫০০ হেক্টর জমিতে নার্সারি রয়েছে। সব মিলিয়ে এই পেশায় ৬-৭ হাজার লোক যুক্ত রয়েছে; বিশেষ করে এসব নার্সারিতে বহু নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে।’

কেকে/ এমএ
আরও সংবাদ   বিষয়:  নেছারাবাদ   অলংকারকাঠি   নার্সারি   ফুলের জনপদ  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

বানারীপাড়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাঠের সাঁকো দিয়ে চলাচল
‘শিগগিরই’ জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ দেবে ঐকমত্য কমিশন
নীলফামারীতে সাংবাদিকদের প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত
একটি মৌলবাদী দল ছলনা ও বিভ্রান্তি করে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করছে
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে বৃদ্ধ নিহত, আহত ৩০

সর্বাধিক পঠিত

১৭ বছর আন্দোলন করে তারেক রহমান ভোটের অধিকার ফিরিয়ে এনেছেন
শ্রীমঙ্গলে অপহৃত কিশোরী সিলেট থেকে উদ্ধার, গ্রেফতার দুই
বাগাতিপাড়ায় অপপ্রচারের প্রতিবাদ সাংবাদিক নেতা কামরুল ইসলামের
চরম সংকটে লবণ শিল্প, আতঙ্কে চাষিরা
বেনাপোল বন্ধন ব্লাড ফাউন্ডেশনের পঞ্চম বর্ষে পদার্পণ

ফিচার- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close