কাশফুলের স্নিগ্ধ সাদা রঙ আর দুলে ওঠা কোমল সৌন্দর্য মুগ্ধ করে বাঙালির মন। শরৎকালের এই নীরব সৌন্দর্য প্রকৃতিকে ভরিয়ে তোলে এক ধ্রুপদী মাধুর্যে। প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে কাশফুলে ছেয়ে গেছে গেছে যমুনা নদীর পাড়। নদীর জেগে ওঠা ডুবোচরের যেদিকেই চোখ যায়, শুধু সাদা রঙের খেলা। সাদা ফুলের ছোঁয়ায় আকৃষ্ট হয়ে দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা প্রতিদিনই ছুটে আসছে কাশবনে। প্রকৃতির অপরুপে জন্ম নেওয়া কাশবনের কারণেই এমন সৌন্দর্য। দোল খাওয়া কাশফুলের সঙ্গে সেলফিতে নিজেকে ক্যামেরাবন্দি করে রাখছেন অনেকে।
মনোমুগ্ধকর অপরূপ এই দৃশ্য দেখা যায় সিরাজগঞ্জ শহরের চর-মালশাপাড়ায় যমুনা নদীর দক্ষিণ পাড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত পৌনে দুই কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ক্রসবার-৩ বাঁধে। সকলের মুখে (চায়না বাঁধ-৩) নামে সুপরিচিত স্থান। এখানে কাশফুলের সৌন্দর্যের টানে প্রকৃতিপ্রেমীদের ভিড় জমে। এ কাশফুলের সাদা ফুল সবাইকে মুগ্ধ করে। শহর থেকে চায়না বাঁধে পাড়ি দিয়ে সেখানে পৌঁছানো বেশ সহজে।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় ১ কিলোমিটার বালুর চরজুড়ে কাশফুল ফুটেছে। লম্বা-চিরল সবুজ পাতার বুক থেকে বেরিয়ে আসা কাশফুল কোথাও থোকা থোকা, কোথাও গুচ্ছ। জনবসতি না থাকায় বাতাসে দুলছে। দুর থেকে মনে হবে সাদা চাদর বিছানো। ব্যাটারী চালিত অটোরিকশা, মাইক্রোবাস, প্রাইভেকার, মোটরসাইকেল ও ইঞ্জিনচালিত নৌকায় বিভিন্ন এলাকা থেকে নানা বয়সের মানুষ এই কাশবনে বেড়াতে ছুটে আসছে। কেউ মুঠোফোনে ছবি তুলছেন। কেউ আবার দু-চারটি কাশফুল ছিঁড়ে তোড়ার মতো তৈরি করছেন। শিশুরা কাশবনে বেশ ছোটা-ছুটি আর খেলাধুলা করছে। নরম ছোঁয়ায় মনে প্রশান্তি খুঁজে পাচ্ছে দর্শনার্থীরা।
যান্ত্রিক জীবনের কোলাহল ছেড়ে মুক্ত আনন্দ পেতে প্রতিনিয়ত মানুষ ছুটে আসছে এ কাশবনে। বিশেষ করে শেষ বিকালে কাশবনের সৌন্দর্য আরো অনেকগুণ বেড়ে যায়। এ কারণে বেশিরভাগ দর্শনার্থীরা বিকেলেই বেশি আসছেন। কাশফুল ও নদীতে পানি দেখতে অনেক ভালোই লাাছে দর্শনার্থীদের।
মেয়েকে নিয়ে শাহজাদপুর থেকে কাশবনে বেড়াতে এসেছেন স্বপ্না পারভিন। তিনি বলেন, যমুনা নদীর পাড়ে যত দুর চোখ যায় শুধু সাদা সাদা কাশফুল। একসঙ্গে এত কাশফুল দেখতে বেশ ভালোই লাগে। এখানে এলে মনে শান্তি পাওয়া যায়। বাসার ভিতরে মেয়ে থাকতে চায় না। এ কারণে মা ও মেয়ে কাশফুলে বেড়াতে এসেছি। সেই সাথে ছবিও তোলা হলো। এসে দারুণ সময় কাটলো।
কাশফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা দর্শনার্থী
স্থানীয় শামিমা খাতুন, আল্পনা, মজিবর রহমান ও শফিকুল ইসলাম বলেন, কাশফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত মানুষ এখানে আসেন। এদের মধ্যে তরুণ-তরুণীর সংখ্যাই বেশি। তবে এ ফুল বেশিদিন থাকে না। ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যেই ফুল বাতাসে উড়ে যায়। অর্থাৎ কয়েক দিন পরই এ ফুল আর দেখা যাবে না।
ঘুরতে আসা নাজিফা খাতুন বলেন, চায়না বাঁধ (ক্রসবার-৩) এলাকায় বিকাল হলেই কাশফুলের সৌন্দর্যের টানে বিভিন্ন স্থান থেকে ঘুরতে আসা প্রকৃতিপ্রেমী তরুণ তরুনীদের ভিড় জমে। এসময় তারা কাশফুলের উন্মাদনায় মেতে উঠে ছবি তোলে, ভিডিও করে। এযেন এক অন্য রকম দৃশ্য
ক্রসবার-৩ এ ফুসকা বিক্রেতা শফিক বলেন, কাশফুল ফোটায় পুরো এলাকা সাদা হয়ে যায়। কার্তিক মাস পর্যন্ত কাশফুল থাকে।
বাদাম ও পানি বিক্রেতা আলতাব শেখ বলেন, যমুনা নদীর চরেই খেলাধুলা করে তার বেড়ে ওঠা। কয়েক বছর ধরে এখানে ফুল ফুটছে। বিকেল হলেই প্রচুর মানুষ ঘুরতে আসে। ছবি তোলে, ভিডিও করে। অনেকেই ছবি ও ভিডিও করে ফেবসুকে ছেড়ে দেয়। এতে অনেক মানুষজন এখানে আসে। আমাদের কেনা বেচা ভালোই হয়।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোখলেছুর রহমান বলেন, নদীর পাড়ে জন্ম নেওয়া সাদা সাদা কাশবন দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক দর্শনার্থী আসেন। বিকাল হলেই প্রচুর মানুষ বেড়াতে আসে। ছবি তোলে, ভিডিও করে। ছুটির দিনে ভিড় বেড়ে যায়। তাদের নিরাপত্তায় প্রশাসন সব সময় কাজ করে যাচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (উপ-পরিচালক) আজামু আহসান শহীদ সরকার বলেন, কাশফুল ও যমুনা নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে জেলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুলসংখ্যক দর্শনাথীরা এখানে আসে। তাদের নিরাপত্তায় প্রশাসন কাজ করেন। একারণে বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনাথীরা নির্বিঘ্নে সৌন্দর্য উপভোগ করে নিরাপদে নিজ বাড়ি ফিরে যান।