শৌখিন মানুষ তাদের ঘরবাড়িতে সবুজকে ধরে রাখার জন্য একান্ত নিজস্ব ভাবনা আর প্রচেষ্টায় বাড়ির ছাদে তৈরি করছে বাগান। সময়ের সঙ্গে এ বাগান এখন আর শৌখিনতার মধ্যে নেই। একটু সবুজের ছোঁয়া পেতে শহরবাসী এখন তাদের ছাদটি সাজাচ্ছেন বিভিন্ন গাছ দিয়ে। নিজের বাড়ির উঠোন কিংবা ছাদে ফল-ফলাদি চাষ করার ব্যাপারে অনেকেই এখন আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এর প্রয়োজনীয়তা কম-বেশি সবাই মনে করছেন।
কেননা পরিকল্পিত এবং শখের বশে ছাদকৃষি আয়োজনের মধ্য দিয়ে শুধু ফল-ফসলাদিরই চাহিদা মিটছে না বরং একজন উদ্যোক্তার সৃজনশীলতারও বিকাশ ঘটছে। এমন তাগিদ থেকেই বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমাজিং ডিপার্টমেন্টের ডাক্তার সামস ই জাহান সোনিয়া শুরু করেছেন ছাদকৃষি।
বরিশাল শহরে বাস করেও কৃষিকে ভালোবাসা এবং সবুজের ছোঁয়ায় জীবনের প্রশান্তি খুঁজতেই প্রায় ছয় বছর আগে ছাদকৃষির বিশাল সম্ভার গড়ে তোলেন সোনিয়া।
বরিশাল শহরের রুপাতলী হাউজিংয়ে নিজস্ব বাসভবন সালসাবিলের ছাদে সৃষ্টি করেছেন ফুল, ফলমূল, শাক-সবজির অনন্য এক ক্ষেত্র। শাকসবজি, ফল-ফুল ও ঔষধি গাছের চাহিদা পূরণ করে যাচ্ছে সোনিয়ার ছাদ কৃষির এই আয়োজন। তার নয়নাভিরাম ছাদবাগানটি প্রথমে যে কেউ দেখলে নার্সারি মনে করবে।
বৃক্ষপ্রেমী সোনিয়া খোলা কাগজকে জানান, ছাদবাগান করার শখ তার বাবার কাছ থেকে তার মধ্যে এসেছে।
তিনি বলেন, ‘আমার বাবা ডা. আব্দুল মজিদ ঢাকা ডিজি হেলথ বিভাগের সহকারী পরিচালক ছিলেন। সেই সুবাদে নিজ গ্রামের বাড়ি বরিশালের বানারীপাড়ার বাইরে আমি বেশি থেকেছি। বাবাকে দেখতাম অনেক সবজির বাগান করতেন। শীতের সময় রং-বেরঙের ফুল গাছ লাগাতেন। এসব দেখতে দেখতে নিজেরও শখ জাগে, আমার নিজের বাগান থাকবে। বারান্দা-ছাদে সুন্দর সুন্দর গাছ লাগাবো।’
সোনিয়া জানান, আমাদের ছাদ বাগানে প্রায় সব ধরনের গাছ আছে। ফুলের মধ্যে গোলাপ, বেলি, নয়নতারা বাদেও দেশি-বিদেশি ফুল গাছ ও ক্যাক্টাস, ঘৃতকুমারি আছে। সবজির মধ্যে বেগুন, টমেটো, লাউ, করলা, চিচিঙ্গা ইত্যাদি আছে। ফলের মধ্যে ড্রাগন, লিচু, পেঁপে, আম, বরই, পেয়ারা, লেবু আছে। এ ছাড়া মরিচ ও বিভিন্ন বিদেশি গাছ আছে।
ছাদে গাছ লাগালে মাটির সঙ্গে গাছের সরাসরি সংযোগ থাকে না। তাই, নিতে হয় একটু বাড়তি যত্ন। মিলেমিশে পরিবারের সবাই গাছের যত্ন নেন। নতুন কোনো গাছ পেলেই সংগ্রহ করার চেষ্টা করেন। গাছের কাছে গেলে মন ভালে থাকে এবং অবসর সময়ও কাটে এমনই জানালেন সোনিয়া।
ছাদকৃষিতে সোনিয়ার অভূতপূর্ব সাফল্যে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন তার স্বামী শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভাইস প্রিন্সিপাল অ্যান্ড হেড অফ ডিপার্টমেন্ট (মেডিসিন) অধ্যাপক ডা. আনোয়ার হোসাইন বাবলু। সোনিয়া বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছাত্রী ছিলেন। পারিবারিক জীবনে তিনি দুই সন্তানের জননী। মেয়ে মেডিকেলে অধ্যয়নরত ও ছেলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। নিজ জন্মভূমির প্রতি অগাধ ভালোবাসা এবং শিকড়ের টানে সোনিয়া প্রতি বুধবার বিকালে বানারীপাড়াতে রোগী দেখেন।
‘শুধু ছাদের উপরে নয়, নিচে ভবনের চারপাশেও ফলের গাছ রোপণ করেছি। গাছ ছাড়া পরিবেশ চিন্তা করা যায় না। গাছ আমাদের অনেক কিছু দেয়। বিশেষ করে বর্তমানে বাজারে কেমিক্যালমুক্ত ফল পাওয়া কঠিন। তাই, পরিবেশবান্ধব ফল গাছের চারা সংগ্রহ করে ছাদ বাগানটি তৈরি করেছি। আরও নতুন চারা এনে রোপণ করার চেষ্টা করছি। নিজের হাতের উৎপাদিত সবজি, ফল খাওয়ার যেমন মজা আলাদা, তেমনি নিজের গাছে হওয়া ফল-সবজি দেখতেও আলাদা আনন্দ লাগে। আর এগুলো আমি সব সময় করে যেতে চাই। গাছের ফলগুলো পরিবারের সবাই মিলে খেয়ে তৃপ্তি পাচ্ছি।’
সোনিয়া জানান, সবজি ও ফল চাষের প্রতি তার বরাবরই প্রবল আগ্রহ। এ কারণে তিনি বাড়ির ছাদেই ফলের চাষ করছেন।
কঠোর শ্রম, অধ্যবসায় ও সততা থাকলে যে কেউ প্রতিষ্ঠিত হতে পারে বলে মনে করেন সোনিয়া। তার দৃষ্টিনন্দন ছাদ-বাগান ইতোমধ্যে অনেকেরই বাহবা কুড়াতে সক্ষম হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, তার এই ছাদবাগানে প্রায় ২৫০টিরও বেশি ফুল, ফল,শাক-সবজি, ওষুধি গাছ রয়েছে। গাছে ৩০-৩৫টি জাম্বুরা ঝুলে আছে। বিদেশি ড্রাগন ফল ঝুলে আছে। আরও ঝুলে আছে বিভিন্ন জাতের পেয়ারা, আতাফল, লেবু, বাউকুল, জামরুল।
সোনিয়ার দৃষ্টিনন্দন ছাদবাগান দেখে যে কারোরই মন-প্রাণ জুড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন গ্রীন বরিশাল’র সদস্য ছাদবাগানী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার বরকত হাসান।
কেকে/ এমএ