বছর ১৭ আগে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পাশে ছোট একটি চায়ের দোকান করেন দুলাল কাজী। দোকান খোলার দিন-কয়েকের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে তার তৈরি চায়ের খ্যাতি। দিনে দিনে তার খ্যাতি আরও বিস্তার লাভ করে। সেই সঙ্গে ছোট্ট দোকান আকারে বড় হয়েছে। এখন তার তৈরি ‘ম্যাজিক চা’ খেতেই ভিড় জমান বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এলাকার লোকজনই নন, ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াতকারী অনেকেই গাড়ি থামিয়ে চুমুক দেন সেই চায়ে।
গরুর খাঁটি দুধ দিয়ে ভিন্ন স্বাদের চায়ের পাশাপাশি চাল ভাজা ও নাড়ু বানিয়ে বিক্রি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন বরিশালের দুলাল কাজী। প্রতিদিন অন্তত দেড় হাজার কাপ চা বিক্রি করেন তিনি। প্রতি কাপ চায়ের দাম ৩০ টাকা। সে হিসেবে মাসে সাড়ে ১৩ লাখ টাকার চা বিক্রি করেন দুলাল। তার বানানো চায়ের স্বাদ ভিন্ন হওয়ায় তার দোকানের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে বরিশালজুড়ে। ধীরে ধীরে ক্রেতা সমাগম বেড়ে যাওয়ায় তার ছোট চায়ের দোকান রূপ নেয় বড় দোকানে।
চায়ের সঙ্গে চাল ভাজা, বাদাম, তিল ও নারিকেলের তৈরি নাড়ুও বিক্রি করেন দুলাল। বিক্রি করেন প্রতিবাটি ২০ টাকা করে। সবমিলিয়ে দুলালের চায়ের দোকানে বেচা-বিক্রি মাসে ২২ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়।
বরিশাল শহরের একদম নিকটে পার্শ্ববর্তী ৬ মাইল বাজারে অবস্থিত দুলাল কাজীর চায়ের দোকান। প্রতিদিন বিকাল ৪টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চা-প্রেমীদের ভিড় লেগে থাকে তার দোকানে। অনেক সময় জায়গার সংকুলান না হওয়ায় দাঁড়িয়েও চা পান করতে হয়।
নামিদামি রেস্তোরাঁর চেয়ে দুলাল কাজীর ভিন্ন স্বাদের চা, চাল ভাজা, নাড়ু মন জয় করেছে বলে জানান চা-প্রেমীরা।
দেলোয়ার হোসেন নামের একজন ক্রেতা বলেন, ‘এ দোকানের ম্যাজিক চায়ে বিশেষত্ব আছে। স্বাদ ভিন্ন। সঙ্গে চাল ভাজা ও নাড়ু অন্য রকম স্বাদ দেয়। হাইওয়ে রাস্তার পাশে হওয়ায় দাঁড়িয়ে চা পান করতে করতে একটু বিশ্রামও নেওয়া যায়।’
বৃষ্টি নামের আরেকজন বলেন, ‘এখানে অনেকবার এসেছি চা পান করতে। আসলে দুলাল কাজীর ম্যাজিক চায়ের স্বাদ সবাইকে এখানে টেনে আনে।’
লেডি বাইকার হেনা শ্রাবণ বলেন, ‘আমাদের মেয়েদের একটা বাইকিং গ্ৰুপ রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে এখানে বসে চা পান করতে করতে আমরা গ্রুপ মিটিংগুলো শেষ করতে পারি। দুলাল কাজীর ম্যাজিক চায়ে আলাদা একটা স্বাদ আছে।’
দুলাল কাজীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রথম দিকে তার চায়ের দাম ছিল প্রতিকাপ সাত টাকা। তখন দিনে ৩০০-৩৫০ কাপ চা বিক্রি হতো। কিন্তু চা তৈরিতে ব্যবহার্য সব উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন ৩০ টাকা কাপ বিক্রি করছেন।
দুলাল কাজী বলেন, ‘এখন দিনে অন্তত দেড় হাজার কাপ চা বিক্রি হয়। তবে ঝড়-বৃষ্টিতে বেচাবিক্রি একটু কম হয়। চা তৈরিতে প্রতিদিন দুধ লাগে ১৫০ লিটার।’
“চায়ের দোকান দেওয়ার কিছু দিন পর ঢাকা থেকে কিছু মেহমান আসতো। তারা চা পান করে স্বাদ পেয়ে মাসে চার বারও আসতেন। পরে তারাই আমার দোকানের নাম ‘ম্যাজিক চা’ দিয়ে সাইনবোর্ড বানিয়ে দিয়েছে। এই কারণেই দোকানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ম্যাজিক চায়ের পয়েন্ট’।’’
চায়ের সঙ্গে দেওয়া চাল ভাজা, বাদাম, তিল ও নারিকেলের নাড়ু সবকিছুই হাতে তৈরি। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এগুলো বাসায় তৈরি করেন। পরে বিকাল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলে দোকানদারি। এক্ষেত্রে তার দুয়েকজন সহযোগী থাকলেও মূল কাজটা তিনি নিজেই করেন। এ ম্যাজিক চায়ের জাদু শুধু তার হাতেই আছে। এটা আর কারও কাছে নেই বলেও জানান দুলাল কাজী।
কেকে/ এমএ