বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫,
৬ ভাদ্র ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫
শিরোনাম: আবারো সংঘর্ষে ঢাকা-সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা      রাজসাক্ষী হতে চান পুলিশের উপপরিদর্শক শেখ আফজালুল      গাজা সিটি দখলে অভিযান শুরু ইসরায়েলের, নিহত ৮১      গ্যাস সংকটে ঝুঁকিতে বিনিয়োগ-রফতানি      মনোনয়নপত্র জমাদানে উৎসবমুখর পরিবেশ      ভারতে আ.লীগের কার্যক্রম বন্ধের আহ্বান, অভিযোগ অস্বীকার নয়াদিল্লির      দেশি মাছের প্রজাতি রক্ষা করতে হবে: মৎস্য উপদেষ্টা      
খোলাকাগজ স্পেশাল
এনবিআরে শুদ্ধি অভিযান, আতঙ্কে পদস্থ কর্মকর্তারা
আলতাফ হোসেন
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই, ২০২৫, ৮:৫৯ এএম
ছবি: খোলা কাগজ

ছবি: খোলা কাগজ

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর একাধিক পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। দুর্নীতির অভিযোগে সাম্প্রতিক শুদ্ধি অভিযান, গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি বৃদ্ধি, হঠাৎ বদলির তালিকা এবং কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার সাময়িক বহিষ্কার- সব মিলিয়ে সংস্থার ভেতরে চলছে চরম অস্থিরতা। একের পর এক সিদ্ধান্ত, অনুসন্ধান এবং নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সংস্থাটির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। কেউ চাকরি হারানোর ভয়, কেউ আবার হঠাৎ বদলি বা অভিযুক্ত হওয়ার আশঙ্কায় কর্মস্থলে চুপসে আছেন।

এ পরিস্থিতির মধ্যে বুধবার ৪ জন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়, একজন কমিশনারকে সাময়িক বরখাস্ত এবং অন্য একজনকে ওএসডি করা হয়েছে। আন্দোলনে সক্রিয় থাকার অভিযোগে অনেক কর্মকর্তা এটিকে ‘প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা’ বলে আখ্যায়িত করছেন। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের চাপ, অভ্যন্তরীণ জবাবদিহিতা এবং সরকারের নতুন রাজস্ব কাঠামো- সব মিলিয়ে এনবিআরের ইতিহাসে এক অশান্ত ও সংকটময় সময় অতিক্রম করছে দেশের প্রধান রাজস্ব সংস্থাটি।

বুধবার এনবিআর চার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। চাকরি হারানো কর্মকর্তারা হলেন- ভ্যাট সদস্য আব্দুর রউফ, কাস্টমস সদস্য হোসেন আহমেদ, আয়কর সদস্য আলমগীর হোসেন ও আয়কর কমিশনার শব্বির আহমেদ। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, চাকরির বয়স ২৫ পূর্ণ হওয়ায় তাদের অবসর দেওয়া হয়েছে। তবে তারা অবসরকালীন সুবিধা পাবেন।

এদিকে এনবিআর কর্মকর্তারা জানান, চলমান সংস্কার আন্দোলনে সমর্থন থাকায় প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। আরো অনেক কর্মকর্তা চাকরি হারানোর আশঙ্কায় আছেন। গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে এক কমিশনারকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করে। চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবিতে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির সময় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ বন্ধ রাখায় সেখানকার কমিশনার মো. জাকির হোসেনকে মঙ্গলবার সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে সরকারের ‘নির্দেশনা অমান্য করে’ কাস্টম হাউজ বন্ধ রাখায় তার বিরুদ্ধে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলা হয়। এছাড়া বেশকিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা দুদক। বদলিসহ নানা আতঙ্কে আছেন আন্দোলনকারীরা। তাদের অভিযোগ, প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

জানা যায়, সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে এনবিআর কর্মকর্তাদের চলমান আন্দোলন নিয়ে চরম অসন্তোষ ছিল। কর্মস্থলে অচলাবস্থা সৃষ্টি, রাজস্ব সংগ্রহে ব্যাঘাত এবং প্রশাসনিক শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কায় উপদেষ্টারা বিষয়টিকে ‘নিরাপত্তা ও শাসনঝুঁকি’ হিসেবে বিবেচনা করেন। এ প্রেক্ষাপটে আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে সরকার কড়া অবস্থান নেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআরের আওতাধীন সব কাস্টম হাউস, বন্ড কমিশনারেট ও শুল্ক স্টেশনগুলোর চাকরিকে ‘অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিস’ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে।

এ ঘোষণা অনুযায়ী, এসব দফতরের কোনো কর্মকর্তা কর্মবিরতি বা আন্দোলনে অংশ নিলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শ্রম আইন অনুযায়ী, অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিসে নিয়োজিত কেউ যদি কাজ থেকে বিরত থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে জেল বা অর্থদণ্ড, উভয় দণ্ডের বিধান কার্যকর হতে পারে।

এনবিআরের কর্মকর্তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশন। এর আগে এমনটা দেখা যায়নি। প্রথম দফায় পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন দুর্নীতির তদন্ত করলেও আবারও নতুন করে আরো পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে দুদক। এনবিআর-এর কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ঘুষ গ্রহণ, কর ফাঁকিতে সহায়তা এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে কয়েকজন কর্মকর্তার নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এনবিআরের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুদককে তদন্তে নামাতে কোনো ধরনের রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ করা হয়নি। একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, ‘দুদক স্বাধীন সংস্থা হিসেবে তার আইনগত কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সরকার শুধু স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, অন্তত ২৫ জন কর্মকর্তার কার্যক্রম সন্দেহের তালিকায় রয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। এদের মধ্যে কিছু কর্মকর্তা শুল্ক বিভাগ, ভ্যাট বিভাগ এবং কর পুনর্মূল্যায়ন ইউনিটে কর্মরত ছিলেন, যাদের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ, কর ফাঁকিতে সহায়তা এবং নথিপত্র জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে।

এক সিনিয়র কর কমিশনার বলেন, ‘আমরা জানি না কখন কে বাদ পড়ব বা অভিযুক্ত হব। পরিস্থিতি এতটাই আতঙ্কজনক যে, কেউ নতুন ফাইল স্পর্শ করতেও ভয় পাচ্ছে।’

এনবিআরের সাবেক এক চেয়ারম্যান বলেন, ‘দেশের রাজস্ব স্বার্থই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। মে ও জুন মাসকে রাজস্ব আদায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় বলা হয়- এই দুই মাসেই প্রায় সারা বছরের তুলনায় বেশি কর সংগ্রহ হয়। অথচ ঠিক এ সময়ে কর্মবিরতি, শাটডাউন এবং ‘মার্চ ফর এনবিআর’ কর্মসূচির মতো আন্দোলন রাজস্ব সংগ্রহকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করেছে। এর ফলে অর্থনীতি ও সরকারি রাজস্ব উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

তিনি আরো প্রশ্ন তোলেন, ‘মার্চ ফর এনবিআর’ কি জনসাধারণ পালন করবে, নাকি সরকারি কর্মকর্তারা? যারা রাষ্ট্রীয় বেতনভুক্ত, তাদের আন্দোলন কখনোই যুক্তিযুক্ত নয়।’

দুদকের চলমান অনুসন্ধান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আজ যারা আতঙ্কে আছেন, তারাই অতীতে পুরো দেশকে আতঙ্কে ফেলেছেন। তবে আমি মনে করি, যারা সৎ, তারা নিশ্চিন্ত থাকবেন। কিন্তু যারা অসৎ, তাদের আটকে পড়াটা অবশ্যম্ভাবী।’

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এনবিআরের স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতেই শুদ্ধি অভিযান চলছে এবং নির্দোষ কেউ হয়রানির শিকার হবে না বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে। তবুও কর্মকর্তাদের মধ্যে ভয়, চাপ ও অনিশ্চয়তা কাজ করছে- যা রাজস্ব আদায়ের কার্যক্রমেও প্রভাব ফেলছে বলে অনেকে মনে করছেন।

এনবিআর বিষয়ে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশের পর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের কাছে ব্যক্তিগতভাবে চিঠি লিখতে হয়েছিল বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, এ নিয়ে তখন বড় ধরনের ঝামেলা তৈরি হয়েছিল।

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রথমে সচিব (অর্থসচিব) চিঠি লিখেছিল। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের ভাইস-প্রেসিডেন্ট জানায়, সচিবের চিঠি তিনি আমলে নেবেন না। চূড়ান্ত নীতিনির্ধারক হিসেবে অর্থ উপদেষ্টাকেই চিঠি লিখতে হবে। এ নিয়ে তখন ঝামেলা তৈরি হয়েছিল। পরে আইএমএফের ও বিশ্বব্যাংকের সভার আগে আমাকে (এনবিআরের বিষয়টি ব্যাখ্যা করে) চিঠি লিখতে হয়েছে। 

প্রসঙ্গত, সরকারের চাপ ও ব্যবসায়ীদের অনুরোধে এনবিআর কর্মকর্তারা ২৯ জুন রাতে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন। এর আগে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের আহ্বানে গত ২৮ ও ২৯ জুন দেশব্যাপী ধর্মঘট ও কর্মবিরতিতে যান এনবিআর কর্মকর্তারা। এতে আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে বড় ধরনের অচলাবস্থা দেখা দেয়। আন্দোলনকারীদের প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে ছিল এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ, কর সংস্কার সুপারিশ প্যানেলে তাদের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা এবং ‘প্রতিশোধমূলক বদলি’র অবসান।

গত ১২ মে সরকার এক অধ্যাদেশ জারি করে এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করে। এর পরিবর্তে গঠন করা হয় ‘রাজস্ব নীতি বিভাগ’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ’। এ সিদ্ধান্তের পর থেকেই এনবিআরের কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। 

কেকে/এআর
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

আবারো সংঘর্ষে ঢাকা-সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা
রাজসাক্ষী হতে চান পুলিশের উপপরিদর্শক শেখ আফজালুল
আশুলিয়ায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জুয়েল শিকদার গ্রেফতার
সাভারে ভুল চিকিৎসায় শিশুর মৃত্যু, ডাক্তারসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা
মাগুরায় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় কৃষক নিহত

সর্বাধিক পঠিত

স্যুটার মান্নান হত্যা মামলার আসামি জুয়েল আটক
গতি বাড়াতে সমন্বয় টিমের মাধ্যমে কাজ করতে চাই: সমাজকল্যাণ সচিব
১০ হাজার ইয়াবাসহ পুলিশ সদস্য আটক
নওগাঁয় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যুব দিবস পালন
স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বর্ণাঢ্য র‌্যালি ও সমাবেশ
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close