রোববার, ১২ অক্টোবর ২০২৫,
২৭ আশ্বিন ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

রোববার, ১২ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: ১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার      জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ      রোমে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা      ২০০ তালেবান সৈন্যকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের      বাতিল হওয়ার শঙ্কায় বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনার ভারত সফর      বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করে দেশে স্বৈরশাসন পাকাপোক্ত হয়েছিল      প্রেসক্লাবে শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গে সাউন্ড গ্রেনেড-লাঠিচার্জ      
খোলাকাগজ স্পেশাল
করোনা-ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়া ত্রিমুখী চাপে জনস্বাস্থ্য
খোলা কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: শনিবার, ২১ জুন, ২০২৫, ১২:১৩ এএম
ছবি: খোলা কাগজ

ছবি: খোলা কাগজ

ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে করোনা ও ডেঙ্গু পরিস্থিতি। আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। একইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চিকুনগুনিয়া আক্রান্তের সংখ্যাও। সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেড়ে যেতে পারে।
 
ডেঙ্গুতে এ পর্যন্ত ৩০ মৃত্যু : চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত দেশে মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছয় হাজার ৯২৬ জন। গত বৃহস্পতিবার আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৪৮ ডেঙ্গুরোগী। তাদের মধ্যে ৫৯ দশমিক ২ শতাংশ পুরুষ এবং ৪০ দশমিক ৮ শতাংশ নারী। ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কারো মৃত্যু না হলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ৩০ জন মারা গেছেন। 

এ ছাড়া ২০২৩ সালে সারা দেশে ডেঙ্গুতে এক হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু ও আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৫৭৫ জনের এবং আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন এক লাখ এক হাজার ২১৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ২১৬ ডেঙ্গুরোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছরে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে মোট ছাড়পত্র পেয়েছেন ছয় হাজার ১০৩ জন।
 
গত ২৪ ঘণ্টায় যারা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তাদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১০৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৩৯ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৮ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২০ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৩৫ জন, রাজশাহী বিভাগের (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৮ জন, খুলনা বিভাগ (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৭ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪ জন এবং রংপুর বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৩ জন রয়েছেন। 

ঢাকার ১৩ ওয়ার্ডে ডেঙ্গু বেশি : রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) তাদের গবেষণায় জানিয়েছে, রাজধানী ঢাকার ১৩ ওয়ার্ডে ডেঙ্গুর বিস্তার সবচেয়ে বেশি। গত ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত চালানো ‘মৌসুম পূর্ব এডিস সার্ভে ২০২৫’ জরিপে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ১৩টি ওয়ার্ডে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার লার্ভার ঘনত্বের পরিমাণ নির্দিষ্ট মানদণ্ডের চেয়ে বেশি।
 
এর বাইরে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং দেশের আরো ৮টি জেলায় ডেঙ্গু রোগের বাহকের কীটতাত্ত্বিক জরিপ সম্পন্ন করে আইইডিসিআর। রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন ছাড়াও জরিপের জন্য তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে চট্টগ্রাম, বরিশাল ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন এবং কুষ্টিয়া, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ঝিনাইদহ ও মাগুরা পৌরসভা এলাকায়।
 
গবেষণার জন্য চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচিত এলাকাগুলোর ৩ হাজার ১৪৭টি বাসাবাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে মোট ৪৬৩টি বাসাবাড়িতে ডেঙ্গুর লার্ভা পাওয়া গেছে। ৯৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৩টির বিভিন্ন এলাকায় ১০০টির মধ্যে ২০টির বেশি পাত্রে মশা বা লার্ভা পাওয়া গেছে। এ এলাকাগুলো ডেঙ্গুর উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে। 

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ঝুঁকিতে থাকা ওয়ার্ডগুলো হলো ১২, ২, ৮, ৩৪, ১৩, ২২ নম্বর ওয়ার্ড। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলো হলো ৩১, ৪১, ৩, ৪৬, ৪৭, ৪, ২৩ নম্বর ওয়ার্ড। উভয় সিটিতেই এডিস মশার লার্ভা সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে বহুতল ভবনে, যা ৫৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ। এ ছাড়া ১৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ নির্মাণাধীন ভবনে, একক বাড়িতে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ, সেমিপাকা বাড়িতে ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং ফাঁকা স্থানে ২ দশমিক ৮ শতাংশ। 

মূল কাজ এডিস মশা থেকে বাঁচা : এ বিষয়ে ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, ডেঙ্গু হচ্ছে, চিকুনগুনিয়া হচ্ছে। মাঝেমধ্যে করোনাও শনাক্ত হচ্ছে। সবই তো ভাইরাস। এগুলোর দেশে কোনো চিকিৎসা নেই। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সবচেয়ে বেশি জরুরি। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া হয় এডিস মশা থেকে। এটিকে গৃহপালিত মশা বলে। আপনার আমার ঘরেই এটির উৎপত্তি। ঘরেও হয়, ঘরের বাইরেও হয়। 

‘যেখানেই জমা পানি থাকে, মশা ডিম পাড়ে। কোথাও যেন জমা পানি না থাকে। ফ্রিজের নিচে, এসির নিচে, ফুলের টব, ছাদ বাগান, ঘরের চারপাশ, এমনকি বাথরুমের কমোডেও পানি জমে থাকে। দেখা গেল বাথরুম ইউজ হয় না, ওখানকার জমা পানিতেও মশা ডিম পাড়ে। মশার কামড় থেকে নিজেকে বাঁচাতে হবে। এটা জরুরি। পাশাপাশি ঘরবাড়ি পরিষ্কার করতে হবে। বাচ্চাদের ফুল প্যান্ট পরিয়ে রাখা, ঘুমাতে গেলে দিনে ও রাতে মশারি টানানো, এগুলো নাগরিকদের দায়িত্ব’ বলেন ডা. আবদুল্লাহ। 

প্রশাসন-জনগণ সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন : ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ঘরের বাইরের দায়িত্ব প্রশাসনের। কোথাও যেন জমা পানি না থাকে। সড়কে বা খালি জায়গায় পরিত্যক্ত টায়ার, চিপসের প্যাকেট, পরিত্যক্ত হাড়ি, প্লাস্টিকের চায়ের কাপ পড়ে থাকে। এগুলোতেও মশা ডিম পাড়ে। আগে বলা হতো এডিস মশা পরিষ্কার পানিতে ডিম পাড়ে, এখন দেখা যাচ্ছে নোংরা পানিতেও ডিম পাড়ে। ‘প্রশাসন ও জনগণ মিলে সবার সমন্বিত পদক্ষেপে মশা নির্মূল বা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তা না হলে আমাদের রেহাই নেই। যে হারে প্রাদুর্ভাব বাড়ছে, সামনে হয়তো আরো বাড়বে’ বলেন তিনি। 

আক্রান্ত হলে করণীয় : যে কোনো ব্যক্তির জ্বর, সর্দি, গলাব্যথা, মাথাব্যথা হলেই ডেঙ্গু ও করোনার নমুনা পরীক্ষা করাতে হবে। এক্ষেত্রে মোটেই অবহেলা বা দেরি করা যাবে না। লক্ষণ দেখা গেলেই পরীক্ষা করতে হবে। অনেকে সময় ক্ষেপণ করেন, দেখি, ভাইরাস জ্বর কিনা, এই সেই বলেন। পরিস্থিতি জটিল হওয়ার পর ডাক্তারের কাছে যান, তখন কিন্তু সমস্যা হয়। কিন্তু আগে পরীক্ষা করলে আগেভাগেই জানা যায়। জটিলতাও এড়ানো সম্ভব হয়। 

চোখ রাঙাচ্ছে চিকুনগুনিয়াও : গত ১ জানুয়ারি থেকে ২৮ মে পর্যন্ত ৩৩৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৫৩ জনের দেহে চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্ত সবাই ঢাকার বাসিন্দা। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. আহমেদ নওশের আলম এ তথ্য জানিয়েছেন। 

আইইডিসিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২০০৮ সালে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম চিকুনগুনিয়া রোগী শনাক্ত হয়। ২০১১ সালে ঢাকার দোহারে কিছু রোগী পাওয়া যায়। ২০১৭ সালে আবার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ওই বছর প্রায় ১৪ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৬ ডিসেম্বর আইইডিসিআর জানায়, জিকায় ১১ জন ও চিকুনগুনিয়ায় ৬৭ জন আক্রান্ত। 

চিকুনগুনিয়ার বাহক এডিস মশা। এর বংশবৃদ্ধির অনুকূল পরিবেশ থাকায় রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে প্রভাব পড়তে পারে বলে আগেই সতর্ক করেছিলেন গবেষকরা। তবে বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছে খুব বেশি গুরুত্ব পায়নি। সরকারি পর্যায়ে শুধু ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টার, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল ও আইইডিসিআরে পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে। সারা দেশে পরীক্ষা বন্ধ আছে প্রায় আট বছর। 

তবে এ বিষয়ে গত মঙ্গলবার আইইডিসিআর অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ‘ডেঙ্গু রোগের বাহক কীটতাত্ত্বিক জরিপ ২০২৪-২০২৫ অবহিতকরণ সভা’য় পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, একটা পরীক্ষার মাধ্যমেই ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া এবং জিকা শনাক্ত করা যায়। আলাদা পরীক্ষার প্রয়োজন হয় না। তিনি আরো বলেন, এবার চিকুনগুনিয়া নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্ত হচ্ছে ৪৫ শতাংশ। তবে কারো মৃত্যু হয়নি। 

২০২৪ সালের শেষভাগে সংক্রামক রোগবিষয়ক গবেষণার জন্য পরিচিত ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ইনফেকশাস ডিজিজেস রিজিওন্স’ (আইজেআইডি রিজিওন্স) জার্নালে ‘দ্য রিঅ্যাপিয়ারেন্স অব চিকুনগুনিয়া ইন বাংলাদেশ, ২০২৪’ শিরোনামে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে বলা হয়, এডিস মশাবাহিত চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব ২০২৫-২৬ সালে বাড়তে পারে। 

কেকে/ এমএস
আরও সংবাদ   বিষয়:  করোনা   ডেঙ্গু   চিকুনগুনিয়া   ত্রিমুখী চাপ   জনস্বাস্থ্য  
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

শিশু বলাৎকার ও হত্যার অভিযোগে কিশোর গ্রেফতার
১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার
মুরাদনগরের ওসি জাহিদুরের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বসহ নানা অভিযোগ, অপসারণ দাবি
জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ
ইমপোর্টার-এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন

সর্বাধিক পঠিত

সাপ্টিবাড়ী ডিগ্রি কলেজে চরম দুর্নীতি ও অনিয়ম
আসছে নাটক ‘অপ্রকাশিত ভালোবাসা’
চিকিৎসক ও জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা
কালাইয়ে বিএনপির গণমিছিল ও লিফলেট বিতরণ
রাজশাহীতে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস পালিত
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close