সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫,
২৮ আশ্বিন ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: ১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার      জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ      রোমে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা      ২০০ তালেবান সৈন্যকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের      বাতিল হওয়ার শঙ্কায় বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনার ভারত সফর      বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করে দেশে স্বৈরশাসন পাকাপোক্ত হয়েছিল      প্রেসক্লাবে শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গে সাউন্ড গ্রেনেড-লাঠিচার্জ      
খোলাকাগজ স্পেশাল
পর্যটনে মবের হানা
মুহাজিরুল ইসলাম রাহাত, সিলেট
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১২ জুন, ২০২৫, ৯:১০ এএম
ছবি: খোলা কাগজ

ছবি: খোলা কাগজ

ঈদের ছুটিতে সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে বেড়াতে এসে বাধা ও হামলার শিকার হয়েছেন পর্যটকরা। মাদক সেবন ও অশ্লীলতার কথা বলে তৌহিদি জনতার পরিচয়ে স্থানীয় একদল ব্যক্তি এসব ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানা গেছে। একদিনের ব্যবধানে জেলার অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র জাফলংয়ে পর্যটকদের ওপর হামলা ও উৎমাছড়া থেকে পর্যটকদের বের করে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার দুটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। 

যদিও স্থানীয় একটি অংশের অভিযোগ, নির্বিঘ্নে চোরাচালান ও পাথর লুট করতেই পর্যটকদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। পর্যটক সমাগম বাড়লে লুটপাট ও চোরাকারবারে সমস্যা হয়। তাই পর্যটকদের আসতে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি তাদের। 

এদিকে আশ্লীলতার অভিযোগ এনে গত সোমবার রাতে মৌলভীবাজারের রাজনগরে ‘রাজনগর রিসোর্ট অ্যান্ড কফি হাউজে’ তালা দিয়েছে স্থানীয় একদল লোক। এদিন বিকালে সিলেটের গোয়াইনঘাটের জাফলংয়ে ঘুরতে আসা পর্যটকদের ওপর হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। মাদক ব্যবসায়ীকে শনাক্ত করে দেওয়াকে কেন্দ্র করে গত সোমবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে জাফলং বিজিবি ক্যাম্পসংলগ্ন গাড়ি পার্কিং এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। 

এ ঘটনায় একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, পর্যটকদের এলোপাতাড়ি মারধর করছেন কয়েকজন যুবক। একজন যুবক উচ্চস্বরে গালিগালাজ করছেন এবং লাঠি দিয়ে দুই-তিনজনকে বেধড়ক পেটাচ্ছেন। এ সময় এক নারীর চিৎকার শোনা যাচ্ছিল। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় কয়েকজন যুবক মাদক বহন করছিলেন। বিজিবি তাদের দেখে ধাওয়া করলে বেড়াতে আসা কয়েকজন পর্যটক বিজিবিকে তথ্য দেন। পরে বিজিবি মাদক ব্যবসায়ীদের না পেয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এর পরপরই বিজিবিকে তথ্য দেওয়ার অভিযোগে ওই পর্যটকদের ওপর হামলা চালানো হয়। 

অন্যদিকে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকবাহী হাউজবোট ও নৌকা ভ্রমণের সময় উচ্চস্বরে গান-বাজনা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে তাহিরপুর উপজেলা প্রশাসন। গত সোমবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল হাসেম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ ছাড়া উপজেলার প্রশাসনের ফেসবুক পেজেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। ফেসবুকে জানানো হয়, ‘টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকবাহী সব হাউজবোট ও লোকালবোটে উচ্চস্বরে গান বাজানো নিষেধ। এ বিষয়ে অভিযান পরিচালনা করা হবে।’
 
গত রোববার সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের উৎমাছড়া পর্যটনকেন্দ্র পর্যটকদের বের করে দেওয়ার একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, ‘তারা শুধু ধর্মের দাওয়াত’ দিতে গিয়েছিলেন। এরই মধ্যে তারা নিজেদের ভুল স্বীকার করেছেন। তাদের দাবি, ‘তারা শুধু ধর্মের দাওয়াত’ দিতে গিয়েছিলেন। ‘পর্যটক আসা নিয়ে তাদের কোনো আপত্তি নেই’। 

বাধাদানকারীদের একজন যুব জমিয়তের কোম্পানিগঞ্জ উপজেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুফতি রুহুল আমীন সিরাজি। তিনি বলেছেন, ‘ঘটনাটির সমাধান হয়েছে। পর্যটক আসুক। তবে স্থানীয়দের জন্য বিরক্তিকর কিছু যেন না হয় সেটি তদারকির অনুরোধ করেছি প্রশাসনকে।’ 

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুন্নাহার খোলা কাগজকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সব পক্ষের সাথে গত মঙ্গলবার বৈঠক করেছি। যারা পর্যটক প্রবেশে বাধা দিয়েছিলেন তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছেন। তারা বলেছেন পর্যটক প্রবেশে তারা আর বাধা দেবেন না। তারা তাদের ভুল বুঝতে পেরেছেন।’ 

জানা যায়, ঈদের পরদিন রোববার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার উত্তর রনিখাই ইউনিয়নের পাহাড় থেকে নেমে আসা পাথুরে ছড়া উৎমাছড়া পর্যটনকেন্দ্রে ভিড় করেন অনেক পর্যটক। বিকেলে সেখানে কিছু সংখ্যক মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও স্থানীয় কিছু লোক জড়ো হয়ে পর্যটকদের বের করে দেয়। এরকম একটি ভিডিও সোমবার রাত থেকে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। জড়ো হওয়া যুবকরা পর্যটকদের বিরুদ্ধে অশ্লীলতা, মদ্যপান ও এলাকার পরিবেশ নষ্টের অভিযোগ করেন। 

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পর্যটকদের বের করে দেওয়ার একটি ভিডিওতে এক যুবককে বলতে শোনা যায়, ‘এই এলাকা আলিমদের এলাকা, দ্বীনদার এলাকা। কিন্তু এইখানে অনেকে অনেক পরিবেশে আসে। এসে মদ খায়, আরো অনেককিছু করে, এতে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হয়। তাই আমাদের আবেদন, আপনারা এখানে আর আসবেন না। তা ছাড়া এটি পর্যটনভুক্ত এলাকাও নয়’। 

ভিডিওতে আরো বলতে শোনা যায়, ‘এই এলাকার আলেম-ওলামা ও স্থানীয়রা সিদ্ধান্ত নিয়েছে উৎমাছড়াকে পর্যটন করা যাবে না। তাই আপনারা যারা এখানে এসেছেন দয়া করে এখান থেকে চলে যান। আপনারা এখানে থেকে এখানের পরিবেশ নষ্ট করবেন না। এ এলাকার পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য আমরা এখানে পর্যটকদের আসতে নিরুৎসাহিত করছি আজকের পর আপনারা এখানে আর কোনোদিন আসবেন না।’ 

জানা গেছে, প্রতিবছর ঈদের ছুটিতে সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে স্থানীয় ও বাইরের পর্যটকের ঢল নামে। তবে এবার ঈদুল আজহার ছুটিতে সিলেটে দেখা দিয়েছে পর্যটকখরা।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদের চতুর্থ দিন পর্যন্ত সিলেটের হোটেল-মোটেল অর্ধেক কক্ষ খালি পড়ে ছিল। এ ছাড়া সাদাপাথর, জাফলং, রাতারগুলসহ জেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থানে প্রত্যাশার চেয়ে দর্শনার্থী কম ছিল। স্থানীয় কিছু দর্শনার্থী ছাড়া সিলেটের বাইরের পর্যটকের খুব একটা দেখা মিলেনি। 

এ খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, সিলেটে বন্যা, বৃষ্টিপাত ও সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র কয়েকদিন বন্ধ থাকায় এর প্রভাব পড়েছে। সিলেটের বাইরের পর্যটকেরা সিলেট এখনো বন্যাকবলিত রয়েছে বলে ধারণা করছেন। এ অবস্থায় পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ হোটেল-মোটেল ফাঁকা থাকায় পর্যটন ব্যবসায় ধস নামতে পারে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাভাবিকভাবেই ঈদের ছুটিতে পর্যটকরা সিলেটের সাদাপাথর, জাফলং, বিছনাকান্দি, লালাখাল ও পান্তুমাইসহ বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে বেড়াতে আসেন। এবছর অন্যান্য বছরের তুলনায় পর্যটক অনেক কম। সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রের তোয়াহির মিয়া বলেন, অন্যান্য বছর ঈদের ছুটিতে প্রতিদিন সাদাপাথর ঘাট থেকে জিরো পয়েন্টে নৌকাগুলো ৪০০-৪৫০ ট্রিপ দিয়ে থাকে। ঈদের পরদিন রোববার মাত্র ১০০ ট্রিপ হয়েছে। পর্যটক একেবারে কম ছিল। 

জাফলংয়েও একই অবস্থা। হোটেল-রিসোর্টগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রিসোর্টগুলোতে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যটক বুকিং দিয়েছেন। হাতেগোনা কিছু রিসোর্টে অবশ্য বুকিং রয়েছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। অথচ অন্যান্য সময়ে এসব হোটেল-রিসোর্টে কক্ষ পাওয়াই কঠিন হয়ে পড়ে। 

জাফলং হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইলিয়াছ উদ্দিন লিপু বলেন, বছরের এ সময়টায় পর্যটকের চাপ সামলানোই কঠিন হয়; অথচ এবার হোটেলের অনেক কক্ষ এখনও ফাঁকা। 

ট্যুরিস্ট পুলিশ জাফলং জোনের ইনচার্জ মো. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, তুলনামূলকভাবে এবার পর্যটক অনেক কম। তবে ট্যুরিস্ট পুলিশ পর্যটন স্পটগুলোতে নিয়মিত টহল দিচ্ছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে সিলেটের জেলার প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ খোলা কাগজকে বলেন, বিচ্ছিন্ন দু-একটি ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় প্রশাসন সব পক্ষের সঙ্গে বসে আলাপ-আলোচনা করে বিষয়গুলো মিটমাট করেছে। স্থানীয় ইউএনওদের কাছে ইতোমধ্যে বার্তা পৌঁছে দিয়েছি। জেলার সবগুলো পর্যটন স্পটেই পর্যটকদের নিরাপত্তা ও স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দিয়েছি। 

কেকে/এআর
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

ট্রাক ভাড়া করে ঘুরে ঘুরে ডাকাতি করত তারা
শিশু বলাৎকার ও হত্যার অভিযোগে কিশোর গ্রেফতার
১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার
মুরাদনগরের ওসি জাহিদুরের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বসহ নানা অভিযোগ, অপসারণ দাবি
জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ

সর্বাধিক পঠিত

আসছে নাটক ‘অপ্রকাশিত ভালোবাসা’
চিকিৎসক ও জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা
রাজশাহীতে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস পালিত
নির্বাচন নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে : তানভীর হুদা
মৌলভীবাজারে জামায়াত ও খেলাফত মজলিসের স্মারকলিপি
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close