সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫,
২৮ আশ্বিন ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
শিরোনাম: ১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার      জিয়া পরিবার জনগণের পরিবার : আমান উল্লাহ      রোমে পৌঁছেছেন প্রধান উপদেষ্টা      ২০০ তালেবান সৈন্যকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের      বাতিল হওয়ার শঙ্কায় বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনার ভারত সফর      বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করে দেশে স্বৈরশাসন পাকাপোক্ত হয়েছিল      প্রেসক্লাবে শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গে সাউন্ড গ্রেনেড-লাঠিচার্জ      
খোলা মত ও সম্পাদকীয়
কুরবানির পশুর বর্জ্য নিষ্কাশন করতে সতর্কতা প্রয়োজন
ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
প্রকাশ: বুধবার, ৪ জুন, ২০২৫, ৭:১২ পিএম

১৪৪৬ হিজরি মাসের ১০ জিলহজ। শনিবার ৭ জুন ২০২৫ পালিত হতে যাচ্ছে মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম মুসলিম প্রধান দেশ। কুরবানির ঈদে মূলত অনেক গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া জবাই করা হয়।

যারা শহরে থাকেন তাদের বিচ্ছিন্ন স্থানে কুরবানি না দিয়ে কয়েকজন মিলে এক স্থানে কুরবানি দেওয়া ভালো। এতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কাজ করতে সুবিধা হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে, কুরবানির জায়গাটি যেন খোলামেলা হয়।

প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, কুরবানির জন্য এ বছর ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৩৭টি বলে জানিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। তারা বলেছে, এ বছর ২০ লাখ ৬৮ হাজারের বেশি গবাদিপশু উদ্বৃত্ত থাকতে পারে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, এবার কুরবানিযোগ্য ৫৬ লাখ ২ হাজার ৯০৫টি গরু-মহিষ, ৬৮ লাখ ৩৮ হাজার ৯২০টি ছাগল-ভেড়া ও ৫ হাজার ৫১২টি অন্যান্য প্রজাতির প্রাণীর প্রাপ্যতা রয়েছে। এসব কুরবানির একটা বড় অংশ ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় সম্পন্ন হবে।

ঈদুল আজহার অন্যতম অনুষঙ্গ হলো পশু কুরবানি করা। এদিন ধর্মপ্রাণ মুসলমান নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কুরবানি দিয়ে থাকেন। কিন্তু সঠিক ব্যবস্থাপনা ও সচেতনতার অভাবে পশুর রক্ত ও উচ্ছিষ্টাংশ থেকে মারাত্মক পরিবেশ দূষণের সম্ভাবনা রয়ে যায়। আর বর্জ্য থেকে বিভিন্ন রোগবালাই ছড়ানোর আশঙ্কা তো থাকেই। এজন্য পশু কুরবানির পর সার্বিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে আমাদের সবারই নজর দিতে হবে।

কুরবানির পশুর বর্জ্য যেখানে-সেখানে ফেলার দরুন তা পচে চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়ায়, পরিবেশ দূষিত করে। শুধু তাই নয়, নালা বা নর্দমায় ফেলা বর্জ্য থেকে ছড়ায় নানা ধরনের রোগের জীবাণু। অতিরিক্ত বর্জ্যের চাপে নর্দমা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে। অল্প বৃষ্টিতেই নর্দমার পানি আটকে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। তখন সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা এসব বর্জ্য অপসারণ করতেও হিমশিম খায়।

অনেক সময় আমরা কুরবানির পশুর দেহের ভক্ষণ অযোগ্য অংশবিশেষও যেখানে-সেখানে ফেলে রাখি। নগর কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর না হলে সেসব অংশ পচে উৎকট দুর্গন্ধ ছড়ায়। নগর কর্তৃপক্ষ অবশ্য প্রতি কুরবানির ঈদের আগে বর্জ্য অপসারণ সম্পর্কে নির্দেশনা দেয়, জনসচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা চালায়।

তা ছাড়া সংবাদপত্র, টেলিভিশনসহ প্রায় সব গণমাধ্যমেই কমবেশি প্রচারণা চালানো হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা সেসব বিষয় ততটা আমলে নিই না। এতে আমরাই সম্মুখীন হই নানা সমস্যার। তবে যদি কুরবানির বর্জ্যকে সঠিক ব্যবস্থাপনায় আনা যায়, তাহলে পরিবেশ থাকবে দূষণমুক্ত, জনস্বাস্থ্যও থাকবে নিরাপদ।

বর্জ্য অপসারণ করার একটি উপায় হল কুরবানির আগেই বাড়ির পাশে কোনো মাঠে কিংবা পরিত্যক্ত জায়গায় একটা গর্ত খুঁড়ে রাখা। কুরবানির পর পশুর বর্জ্য সেখানে ফেলে মাটিচাপা দেয়া। তবে শহরাঞ্চলে গর্ত খোঁড়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে পানি ও গ্যাসের পাইপ, বিদ্যুৎ ও টেলিফোনের তার ইত্যাদি কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তরে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করার একটি উপায় হল গ্রামাঞ্চলে অনেকের পশু একত্রে কুরবানি করা এবং পশুর বর্জ্য মাটির নিচে পুঁতে রাখা, যা পরবর্তী বছর কুরবানির আগেই জৈব সার হিসেবে শস্যক্ষেত্রে ব্যবহারের উপযোগী হয়ে যায়। কুরবানির সব কার্যক্রম শেষে রক্তমাখা রাস্তাঘাট ধুয়ে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।

জীবাণু যেন ছড়াতে না পারে সেজন্য নোংরা জায়গা পরিষ্কারের সময় ব্লিচিং পাউডার বা জীবাণুনাশক ব্যবহার করতে হবে। সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সুফল এবং অব্যবস্থাপনার কুফল সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন।

তবে যেসব এলাকায় গর্ত খোঁড়ার উপযুক্ত জায়গা নেই সেসব এলাকার বর্জ্য প্রচলিত উপায়ে অপসারণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে করে সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার দায়িত্বভার কিছুটা হলেও কমবে। পাশাপাশি বর্জ্যগুলো নষ্ট না হয়ে কাজেও লাগবে।

যারা শহরে থাকেন তাদের বিচ্ছিন্ন স্থানে কুরবানি না দিয়ে কয়েকজন মিলে এক স্থানে কুরবানি দেওয়া ভালো। এতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কাজ করতে সুবিধা হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে, কুরবানির জায়গাটি যেন খোলামেলা হয়। আর জায়গাটি রাস্তার কাছাকাছি হলে বর্জ্য অপসারণের গাড়ি পৌঁছানো সহজ হবে। কুকুর বা বিড়াল যেন বর্জ্য নিয়ে আশপাশে ফেলতে না পারে সেদিকেও সবার খেয়াল রাখা উচিত। যেসব এলাকায় সিটি করপোরেশনের গাড়ি পৌঁছানো সম্ভব নয়, সেসব স্থানের বর্জ্য ব্যাগ বা বস্তায় ভরে ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট স্থানে রাখা উচিত।

বর্জ্য অপসারণের ক্ষেত্রে সচেতনতার পাশাপাশি কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে—

১. যারা নিজেদের বাড়িতে বা লনে কুরবানি করবেন, তাদের অবশ্যই নিজ দায়িত্বে বর্জ্য পরিষ্কার করতে হবে।
২. এককভাবে কুরবানি না করে, মহল্লাভিত্তিক একটি নির্ধারিত স্থানে কুরবানি করা যেতে পারে। এতে নির্দিষ্ট জায়গা থেকে সম্মিলিতভাবে বর্জ্য অপসারণও সহজ হয়।
৩. কুরবানির পর একই ভবনের বেশ কয়েকটি পরিবার মিলে একটি সোসাইটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
৪. জবাইকৃত পশুর গোবর ও উচ্ছিষ্ট আলাদা করে খোলা ভাবে না ফেলে সেগুলো ব্যাগে ভরে নির্ধারিত স্থান যেমন নিকটস্থ ডাস্টবিন বা কন্টেইনারে ফেলতে হবে।
৫. পশু জবাইয়ের স্থানে কুরবানির পর পশুর রক্ত জীবাণুনাশক পানি দিয়ে ধুয়ে দিয়ে ব্লিচিং ছিটিয়ে দিতে হবে।
৬. কুরবানির সব কার্যক্রম শেষে যেখানে পশু কুরবানি, চামড়া ছাড়ানো ও মাংস কাটাকাটি করা হবে; সেখানে রক্তমাখা স্থান ধুয়ে পরিষ্কার করে ফেলুন। জীবাণু যেন ছড়াতে না পারে সেজন্য নোংরা জায়গা পরিষ্কারের সময় স্যাভলন মেশানো পানি ব্যবহার করুন ও ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দিন। ওই স্থান ভালো করে শুকিয়ে ফেলুন।
৭. যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পশুর চামড়া স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দিন। এ ছাড়া বিভিন্ন মাদ্রাসা, মসজিদ বা এতিমখানায় দান করে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন।

পরিশেষে বলতে চাই, কুরবানির পর আমাদের সচেতনতাই পারে পারিপার্শ্বিক পরিবেশ স্বাস্থ্যকর হিসেবে বজায় রাখতে। পাশাপাশি আমরা যেন শুধু পশু কুরবানির মাধ্যমেই ‘ত্যাগ’ শব্দটি সীমাবদ্ধ না রাখি। আমাদের ত্যাগ যেন সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের প্রতীক হয়—সেদিকেও আমরা নজর রাখব। তাই সবার ঈদ হোক আনন্দের, ত্যাগের মহিমায় সবাই উদ্ভাসিত হই।

লেখক : কলামিস্ট ও গবেষক
প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি


কেকে/এএম
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

মধ্যরাতে ঢাবি ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ
ট্রাক ভাড়া করে ঘুরে ঘুরে ডাকাতি করত তারা
শিশু বলাৎকার ও হত্যার অভিযোগে কিশোর গ্রেফতার
১১ দিনে রেমিট্যান্স এলো প্রায় এক বিলিয়ন ডলার
মুরাদনগরের ওসি জাহিদুরের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বসহ নানা অভিযোগ, অপসারণ দাবি

সর্বাধিক পঠিত

আসছে নাটক ‘অপ্রকাশিত ভালোবাসা’
রাজশাহীতে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস পালিত
চিকিৎসক ও জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা
নির্বাচন নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র চলছে : তানভীর হুদা
পাল্লা বাজারে রক্তলাল শাপলার মনভোলানো সমাহার

খোলা মত ও সম্পাদকীয়- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close