বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫,
৬ ভাদ্র ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫
শিরোনাম: গাজা সিটি দখলে অভিযান শুরু ইসরায়েলের, নিহত ৮১      গ্যাস সংকটে ঝুঁকিতে বিনিয়োগ-রফতানি      মনোনয়নপত্র জমাদানে উৎসবমুখর পরিবেশ      ভারতে আ.লীগের কার্যক্রম বন্ধের আহ্বান, অভিযোগ অস্বীকার নয়াদিল্লির      দেশি মাছের প্রজাতি রক্ষা করতে হবে: মৎস্য উপদেষ্টা      জুলাইয়ে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধির হার ২৫ শতাংশ       গতি বাড়াতে সমন্বয় টিমের মাধ্যমে কাজ করতে চাই: সমাজকল্যাণ সচিব      
খোলা মত ও সম্পাদকীয়
‘পাট শুধু ফাইবার নয়, এটি ভবিষ্যতের টেকসই সম্ভাবনা’
বুটেক্স প্রতিনিধি
প্রকাশ: সোমবার, ১২ মে, ২০২৫, ১১:৩৭ পিএম
হোসনে আরা বেগম, অধ্যাপক- ইয়ার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ।

হোসনে আরা বেগম, অধ্যাপক- ইয়ার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ।

পাটকে বলা হয় সোনালি আশ। পাট কে বিশ্ববাসী সেভাবেই গ্রহণ করেছিল যেভাবে মসলিন কে করেছিল। বাংলার মসলিন, বাংলার পাট যেন বাংলাদেশের আলাদা পরিচয় তৈরি করেছিল বিশ্ব দরবারে। এমনকি তখনকার সময়ে বাংলাদেশ থেকে কাঁচাপাট এবং পাট পন্যই রফতানি হতো বেশি। 

তবে বর্তমানে পাট শিল্পের সঠিক ব্যবস্থাপনা করতে না পারায় এই শিল্প যেন এক প্রকার হারিয়ে যাচ্ছে এদেশ থেকে। খুব বেশি দূরে নয়, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের দিকে তাকালেই ভিন্ন চিত্র চোখে পরে। তুলনামূলক কম উন্নত জাতের পাট উৎপাদন করেও ভারত বিভিন্ন পাটপণ্য রফতানি করে থাকে। এমনকি বাংলাদেশ থেকে কাঁচা পাট আমদানি করে তা থেকে উন্নত প্রযুক্তি ও কৌশল ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের পণ্য উৎপাদন করছে আর তা রফতানি করে বিশ্বে সুনাম অর্জন করছে।

মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বিভিন্ন ধরনের অরাজকতা ও বৈশ্বিক কারণে বাংলাদেশের পাট-শিল্পের বিকাশ ঘটতে পারে নি। বাংলাদেশের পাটের ব্যবহার সস্তা কিছু পণ্য উৎপাদন ও রফতানিতেই আটকে ছিল। ফলে রফতানি ক্ষেত্রেও পিছিয়ে পরে পাট ও পাটজাত পণ্য।

সোনালি আঁশ পাটের হারিয়ে যাওয়া সোনালি ফিরিয়ে আনতে এবং পাটের বহুমুখী ব্যবহার বাড়াতে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স) এর ইয়ার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. হোসনে আরা বেগম। চলুন জেনে আসা যাক তার গবেষণার বিস্তারিত ফলাফল। 

প্রশ্ন: পাটের সোনালী অতীত কেমন ছিল? 

উ: পাটের অতীতটা অনেক সুন্দর ছিল। পাটের যে প্রজাতি আমাদের দেশে পাওয়া যায় শুরুর দিকে সেটা প্রধানত পদ্মা বা গঙ্গা নদীর দুইপাশে জন্মাত। এখন এটি সারা বাংলাদেশেই হয়। তবে পাট থেকে সুতা বানানোর কাজ এই এলাকার লোকজন করেনি। করেছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি।  কলকাতায় তারা প্রথম জুট মিল স্থাপন করে। মিল থেকে সুতা বানানো, ব্যাগ, বস্তা প্রভৃতি বানানো এবং ব্যবহার তারাই প্রথম শুরু করে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে পাকিস্তান আমলে পূর্ব পাকিস্তানে অনেক জুটমিল বানানে হয়েছিল। অনেক বড় জায়গাজুড়ে জুটমিলগুলো তৈরি করা হয়েছিল। মিলগুলোতে ছিল গ্লাসের তৈরি ছাদ যেন দিনের বেলা কৃত্রিম আলোর প্রয়োজন না হয়। পাকিস্তান আমলে যে কমার্শিয়াল জুট মিলগুলো ছিল সেগুলো থেকে খুব ভালো ধরণের কার্পেট বানানো হত। আমাদের এলাকার মানুষরা তাদের মেধাকে কাজে লাগিয়ে অত্যন্ত সূক্ষ্ম-সুন্দর এবং ভালো ধরণের কার্পেট তৈরি করেছিল। তখনকার তৈরি কার্পেট বর্হিবিশ্বেও রপ্তানি শুরু হয়েছিল বিশেষ করে ইরাক, ইরান, মিশর এসব দেশে আমাদের এই এলাকার কার্পেটের জনপ্রিয়তা ছিল। পাকিস্তান আমলে পাট শিল্প থেকে রপ্তানি আয়ের উল্লেখযোগ্য অংশই চলে যেত তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের শহরগুলোতে। যেটি তখনকার সময়ে এদেশের মানুষের জন্য স্বাধীনতার পক্ষে উজ্জীবিত হওয়ারও একটি বড় নিয়ামক ছিল। আগে তো পাটের দড়ি দিয়েই ঘরবাড়ি  বাধা প্রভৃতি কাজ সম্পন্ন করা হতো। বর্তমানে পাটকাঠির ব্যবহার আরো বেড়েছে যেমন প্রিন্টার এর কালি তৈরি হচ্ছে সেটি থেকে। এই যে পাটকে ব্যবহার করে প্রিন্টার এর কালি বানানো সেটি কিন্তু প্রথমে আমরা বের করিনি, সেটি প্রথম শুরু করেছিল জাপান। তো আমাদের সম্পদ কিন্তু আমরা ঠিকমতো বুঝতে পারছি না, সেকারণেই আশানুরূপ ব্যবহারও করতে পারছি না। 

প্রশ্ন: পাটের উপকারী দিকগুলো কী কী?

উ: পাট হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার দেয়া একটা বড় নিয়ামত। সেই নিয়ামত আমরা ব্যবহার করতে পারছি না। পাট গাছের পাতা খুবই ব্যবহার উপযোগী, যেটা সবজি হিসেবে ভালো, খোসপাঁচড়ার জন্যে ভালো, অ্যালার্জির জন্য ভালো। পাট পচানো পানি পরিবেশের জন্য মোটেও ক্ষতিকর কিছু না। সেটি প্রকৃতিগত কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ এবং অক্সিজেন অবমুক্ত করার ক্ষমতা থাকায় মাছের জন্য খুবই উপযোগী।

পাট যে শুধু পরিবেশ-বান্ধব এমন নয়, বরং এটি পরিবেশের জন্য খুবই উপযোগীও বটে। কারণ এটি অনেক বেশি পরিমাণে বাতাস পরিষ্কার করতে পারে যেমন কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করা। আবার পাট উৎপাদন বা চাষ করতে যে অনেক বেশি শক্তি বা খরচ প্রয়োজন এমনও নয়, বরং খুবই কম, আর এদেশের পরিবেশ, জলবায়ুর সাথেও সেটি খুবই মানানসই। 

প্রশ্ন: পাটের সঠিক ব্যবস্থাপনা করতে না পারায় কী সমস্যা হচ্ছে? 

উ: বাংলাদেশে ওয়ান-টাইম ব্যাগ হিসেবে পলিথিন এর ব্যবহার ব্যাপকভাবে শুরু হয় ১৯৮০ সালের পরে। তার আগে কিন্তু মানুষ পাটের ব্যাগ ও বস্তা ব্যবহার করতো। যা মাটিতে ফেলা হলে পচে যায়, যেটি পরিবেশের জন্য ভালো। আবার পানিতে ফেলা হলে পানির ময়লা শোষণ করে পানি পরিষ্কার করতে পারে যেটিও পরিবেশের জন্য কল্যাণকর।

বর্তমানে শহরের আশেপাশের নদীগুলোতে ওয়ান টাইম পলিথিন, প্লাস্টিক ফেলার কারণে সেগুলো বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নদীগুলো যে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ব্লক হয়ে যাচ্ছে, পলিথিন-প্লাস্টিকের স্থলে পাটের তৈরি ব্যাগ ব্যবহার হলে কিন্তু নদীগুলোর এরকম দশা হতো না। এই ব্লক হওয়ার জন্য আজ ঢাকা শহরের পানির ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর ৯০ মিটার নিচে নেমে গিয়েছে, যেটা ১৯৮০ সালের দিকে কেবল ২০-২৬ মিটারের মতো ছিল। প্লাস্টিক, পলিথিন গুলো পোড়ানোর জন্যে শহরের তাপমাত্রা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। আমরা সেগুলো পরিকল্পিত পদ্ধতিতে রিসাইকেলও করছি না। বায়ুদূষণের পরিমাপক ইনডেক্স ২০০ এর বেশি থাকছে সব সময়, এমনকি ৩৫০ ও উঠে যাচ্ছে কখনো কখনো। এই সমস্ত অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাপারগুলো ঘটছে মূলত পাট উৎপাদিত বস্তু ব্যবহারের অনুপস্থিতির জন্য। আমাদের সেরা জিনিসটি থাকা সত্ত্বেও আমরা নিজে থেকে সেগুলো ব্যবহার করতে না পারাটাই অনেকাংশে এমন দুরবস্থার কারণ। বরং নিজে থেকে আবিষ্কার করে ব্যবহার করার বদৌলতে আমরা অন্যের অর্ডার পেয়ে কাজ করেই পার করছি। আমাদের দেশের এডুকেশন সিস্টেমে এম.বি.এ, ম্যানেজমেন্ট (ব্যবস্থাপনা), বিজনেস স্টাডিজ প্রভৃতি বিষয়গুলো পাট-কেন্দ্রিক বা জুট-বেইসড হওয়া প্রয়োজন ছিল। তো এখন কথা হলো প্লাস্টিক, পলিথিন এর যত্র-তত্র ব্যবহার বাংলাদেশে কেন হচ্ছে। বলা হয়ে থাকে যে এগুলো কম-দামি কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এগুলোর জন্য বাংলাদেশকে চরম মূল্য দিতে হবে এবং হচ্ছেও। যেমন বর্তমানে দেশের অনেক জায়গায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিচ্ছে; যেটির পিছনে জুট ফাইবার ব্যবহারের অনুপস্থিতি এবং সেই সাথে প্লাস্টিক পলিথিনের অতিরিক্ত ব্যবহার অনেকাংশে দায়ী।

আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমাদের দেশে উৎপাদিত জুট, সিল্ক কোনোটির ব্যবহারকেই আমরা উপরের পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারছি না। আমরা শুধু যেটা করছি, বিদেশ থেকে আমদানি করছি এবং প্রসেস করছি, সেগুলো থেকে উৎপাদিত বর্জ্যে শহর দূষণ, সেগুলোর পিছনে পানি, তেল-গ্যাস নষ্ট প্রভৃতি কারণে দেশের টিকে থাকাই যেন হুমকির মুখে পড়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশ যেখানে এত পরিবেশ সচেতন, সেখানে আমরা যেন অতি গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টিকে পাত্তাই দিচ্ছি না। নদী-নালা ক্রমান্বয়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মাছ উৎপাদনও ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। আমাদের দেশে ভালো উৎপাদন থাকা সত্ত্বেও আমরা  পাট, সিল্ক, চামড়া কোনোটিরই প্রত্যাশিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারছি না, যেটি খুবই দুঃখজনক।

প্রশ্ন: কেন বর্তমানে দেশে পাট শিল্প নিয়ে কাজ করা কমে গেল?

উ:এটার পিছনে দায়ী আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, অন্যজনকে কীভাবে সেবা দিব সেটির উপর ভিত্তি করে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা সাজানো; যার ফলে শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য সাধন সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের দেশে যে ভালো জিনিস আছে, সেটা বহির্বিশ্বে বিক্রি করা যায় কীভাবে সেই শিক্ষাটা দেয়া হচ্ছে না এবং তার জন্য ব্যবহারিকমূলক প্রস্তুতিও নেয়া হচ্ছে না। বর্তমানে আমরা শিক্ষার্থী পড়াই আরেকজনের ইন্ডাস্ট্রিতে চাকরি করানোর জন্য। আর সৃজনশীলতা মূলক কাজের মূল্যায়ন কম থাকায় বাংলাদেশের মানুষ তাদের নিজেদের মেধাকে কাজে লাগানোর জন্য যে সহযোগিতা প্রয়োজন সেটাও পাচ্ছে না। যার ফলে পাটকে বৃহত্তর পরিসরে কাজে লাগিয়ে যে ব্যবসায়িক উদ্যোগ নেয়া যেত, সেটি আর হচ্ছে না। আমরা নিজেরা ব্যবসা করতে অদক্ষ হওয়ায়, আমরা আমাদের দেশের শিল্পকে কাজে লাগিয়ে তৈরি পণ্যকে বাইরের দেশে বিক্রি করতে পারিনি। পাকিস্তান আমলে পাটকে ব্যবহার করে অর্জিত অর্থ দিয়ে পাকিস্তান তাদের নিজেদের শহর গড়েছিল। আর এই যুগে বাংলাদেশের মানুষ পাটকে ঠিকমতো ব্যবহারই করে পারছে না। কেন আমরা পারছি না? কারণ আমরা মার্কেটিং করতে দক্ষ নই। অথচ পাটিকে কাজে লাগানোর মতো কার্যপদ্ধতি, মেশিনারিজ, সরঞ্জাম সবই আমরা ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান আমল থেকে পেয়েছিলাম। আমাদের শুধু দরকার ছিল সঠিক ম্যানেজমেন্ট, মার্কেটিং। অথচ আমরা সেটুকুও ঠিকমতো করতে পারিনি।

আমার মতে বাংলাদেশের মানুষ প্রথম ভুল করেছে পাটকলগুলো বন্ধ রেখে রাষ্ট্রিয়করণ করা। অথচ আমাদের উচিত ছিল সেগুলো ব্যক্তিমালিকানাধীন রেখে হলেও সেগুলো চালু রাখার ব্যবস্থা করা।

প্রশ্ন: পাট শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা বাস্তবায়নে আমাদের করণীয় কী?

উ: সম্ভাবনাগুলো বাস্তবায়ন করতে আমাদের প্রথমে পাট সংক্রান্ত শিক্ষা ব্যবস্থার মান উন্নত করতে হবে। পাটের তৈরি পন্য বিক্রি করার জন্য আমাদেরকে ইঞ্জিনিয়ারিং সহ ম্যানেজমেন্ট, মার্কেটিং প্রভৃতি বিভাগগুলোতে বাংলাদেশের তৈরি পাটের পণ্য কীভাবে বিদেশে রপ্তানি করা যায় সে ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। আমাদের দেশের পাট, সিল্ক, লেদার প্রভৃতির তৈরি প্রোডাক্ট বিদেশে বিক্রির মাধ্যমে দেশকে স্বনির্ভর করা একটি অন্যতম লক্ষ্য হতে হবে। অন্য দেশের পণ্য মার্কেটিং করার আগে আমাদের উচিত নিজ দেশের সম্ভাবনাময় শিল্পগুলোকে সঠিকভাবে মার্কেটিং করা।

প্রশ্ন: পাট শিল্পকে কীভাবে আধুনিকায়ন এবং লাভজনক করা যায়?

উ: আধুনিকায়ন এবং লাভজনক করার ক্ষেত্রে, প্রথম বিষয় হলো কার্যকর বাজারকরণ নিশ্চিত করা যাতে বহির্বিশ্বে আমাদের দেশের জুটের তৈরি পণ্যগুলো লাভজনকভাবে বিক্রি করা যায়। আধুনিক মেশিনারিজ বা যন্ত্রপাতিগুলোতে দক্ষতা অর্জন প্রয়োজন। উদাহরণ হিসেবে চীন জুটের উপর ভিত্তি করে প্রায় এক হাজার ধরণের পণ্য তৈরি করছে। তাহলে আমাদেরকে জুট ফাইবার শিল্পের অন্তর্ভুক্ত বেসিক টাইপের পণ্য থেকে শুরু করে আরো বিভিন্ন ধরনের পণ্যের দিকে যেতে হবে। আর এভাবে পরিবেশবান্ধব জুট ফাইবারকে শুধু দেশের মাঝেই নয়, বরং সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে। আমার মতে বুটেক্সের গ্র্যাজুয়েটদের জুট ফাইবার নিয়ে ব্যবসা শুরু করার পরিকল্পনা করা উচিত।

প্রশ্ন: পাট নিয়ে আপনার গবেষণার অগ্রগতি কেমন?

উ: আমি পাটের বহুমুখী গবেষণা করছিলাম। পাট থেকে যে ফাইবার পাওয়া যায় সেটার স্থায়িত্ব কীভাবে বাড়ানো যায়, কীভাবে স্টেপল ফাইবার করা যায় এবং কীভাবে পাটের ফাইবারকে আরো নরম বা আরামদায়ক করা যায় সেটি দেখছি। সর্বশেষ আমি একশো শতাংশ পাটের সুতা দিয়ে একটি সোয়েটার তৈরি করেছি। আর পাটের ফাইবারের উপরিভাগ তেমন মসৃণ নয় বিধায় এটি সরাসরি গায়ের জামা তৈরির জন্য উপযুক্ত নয়। সেই দিক বিবেচনায় আমি পাটের তৈরি জামা না বানিয়ে সোয়েটার বানিয়েছি। কারণ সোয়েটার সরাসরি গায়ের উপর পরা হয় না। এটি মূলত জামার উপর পরা হয়। পাশাপাশি দড়ি, ব্যাগ, বস্তা, ছালা, বেল্ট প্রভৃতি অনায়াসে তৈরি করা যেতে পারে। তাই ফাইবারের প্রকৃতি বা ধর্ম অনুযায়ী এটি দ্বারা যা যা তৈরি করা সমীচীন সেগুলোর দিকেই অগ্রসর হওয়া উচিত।

প্রশ্ন: বর্তমান দেশের প্রেক্ষাপট পাট শিল্প নিয়ে খুব একটা আগ্রহী নয়। তারপরও পাট নিয়ে গবেষণা করতে আপনি আগ্রহী হলেন কেন?

উ: পাটের ফাইবার নিয়ে গবেষণার কাজ করা খুব ভালো উদ্যোগ এবং এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা তাদের লাভ অনুযায়ী বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সত্য ঘটনা সবার সামনে নিয়ে আসতে হবে। কৃত্রিম ফাইবারের দীর্ঘমেয়াদি খারাপ দিকগুলো তুলে ধরে বিকল্প হিসেবে পাটের ফাইবারকে দাঁড় করাতে হবে। পৃথিবীর প্রয়োজনে পাটের ব্যবহার ফিরিয়ে আনতে হবে। সেজন্য টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আমাদেরকে এই কথাগুলো বলতে হবে। পৃথিবীর প্রয়োজনে পাটের মতো পরিবেশবান্ধব শিল্পের প্রসার ঘটাতে হবে।

প্রশ্ন: পাটের ফাইবার মসৃণ না হওয়ার কারণে ইন্ডাস্ট্রিতে এটি দিয়ে একশো শতাংশ অ্যাপারেল তৈরি করা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে পাটের ফাইবারকে অন্য কীভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে? ব্লেন্ডেড ফেব্রিক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে কিনা?

উ: পাটের ফাইবার দিয়ে সরাসরি বডি-কন্টাক্ট অ্যাপারেল তৈরি করা যাবে না। এই ফাইবার দিয়ে ব্লেজার বা সোয়েটার বানানো যেতে পারে। অ্যাপারেল ইন্ডাস্ট্রিতে এর মধ্যেই ব্যবহার সীমাবদ্ধ রাখা যেতে পারে। মোটকথায় অ্যাপারেল ইন্ডাস্ট্রির বাইরে পাটের ব্যবহার বাড়াতে হবে। যেমন: সোফার কভার, গাড়ির কভার, ব্যাগসহ এই সংক্রান্ত বেশিরভাগ জিনিসই পাটের ফাইবার কেন্দ্রিক নিয়ে আসতে হবে।

প্রশ্ন: বুটেক্সে কী পাট নিয়ে একটি বিভাগ খোলা উচিত এবং বিভাগটি ইন্ডাস্ট্রিতে কি ধরণের ভূমিকা রাখতে পারবে?

উ: পাট নিয়ে নতুন বিভাগ খোলার জন্য আমি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করবো। বাংলাদেশে এখনো দুইশোর বেশি জুট মিল রয়েছে। তরুণ শিক্ষিত জনগণের সেদিকে যাওয়া উচিত। তবে শিক্ষার্থীরা শুধু জুট মিলে চাকরি করুক সেটা চাইব না বরং জুট বিভাগে যতজন শিক্ষার্থী আসবে তারা উদ্যোক্তাও হতে পারে। আর এজন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

লেখক: হোসনে আরা বেগম
অধ্যাপক, ইয়ার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ,  বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় 


কেকে/ এমএস
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে চাটখিলে বৃক্ষ রোপণ
গুরুদাসপুরে ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
চার বিভাগে অতি ভারী বৃষ্টির আভাস, পাহাড়ধসের শঙ্কা
মুন্সীগঞ্জে ধাক্কায় ট্রলার ডুবে মাঝি নিখোঁজ, বাল্কহেডসহ আটক ৪
চীন গেলেন সেনাপ্রধান

সর্বাধিক পঠিত

স্যুটার মান্নান হত্যা মামলার আসামি জুয়েল আটক
গতি বাড়াতে সমন্বয় টিমের মাধ্যমে কাজ করতে চাই: সমাজকল্যাণ সচিব
নীলসাগর গ্রুপের ‘ডোর টু ডোর’ প্রকল্পের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত
১০ হাজার ইয়াবাসহ পুলিশ সদস্য আটক
নওগাঁয় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যুব দিবস পালন

খোলা মত ও সম্পাদকীয়- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close