মহারাজ বললেন, ‘শীতের রাতে কেউ কি সারা রাত এই পুকুরে গলাজলে ডুবে থাকতে পারবে? যদি কেউ পারে, আমি তাকে অনেক টাকা-পয়সা, ধনরত্ন উপহার দেব।’
এক ছিল গরিব দুঃখী মানুষ। সে বলল, ‘আমি পারব।’
সে মাঘ মাসের তীব্র শীতে সারা রাত পুকুরের জলে গলা ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। ভোর বেলা সে উঠল জল থেকে।
রাজার কাছে গিয়ে বলল, ‘আমি সারা রাত পুকুরের জলে ছিলাম। আপনার সান্ত্রী-সেপাই সাক্ষী। এবার আমার উপহার দিন।’
রাজা বললেন, ‘সেকি, তুমি কেমন করে এটা পারলে!’
গরিব লোকটা জবাব দিল, ‘আমি জলে সারা রাত দাঁড়িয়ে রইলাম। দূরে, অনেক দূরে এক গৃহস্থবাড়িতে আলো জ্বলছিল। আমি সেই দিকে তাকিয়ে রইলাম। সারা রাত কেটে গেল আমার।’
দুষ্টু মন্ত্রী বলল, ‘পাওয়া গেছে। এই যে দূরের প্রদীপের আলোর দিকে ও তাকিয়ে ছিল, ওই প্রদীপ থেকে তাপ এসে তার গায়ে লেগেছে। তাই তার পক্ষে সম্ভব হয়েছে এই শীতেও ওই পুকুরে গলা পর্যন্ত শরীর ডুবিয়ে রেখে দাঁড়িয়ে থাকা।’
রাজা বললেন, ‘তাই তো! তাহলে তো তুমি আর উপহার পাবে না। যাও। বিদায় হও।’
গরিব লোকটা কাঁদতে কাঁদতে গোপাল ভাঁড়ের কাছে এসে অনুযোগ জানাল। সব শুনে গোপাল ভাঁড় বলল, ‘ঠিক আছে, তুমি ন্যায়বিচার পাবে।’
গোপাল একদিন তার বাড়িতে নিমন্ত্রণ করল রাজাকে। দুপুরে খাওয়াবে। রাজা এলেন গোপাল ভাঁড়ের বাড়ি। গোপাল বলল, ‘আসুন আসুন মহারাজ, আর সামান্যই আছে রান্নার বাকি। কী রাঁধছি দেখবেন, চলুন।’ গোপাল রাজাকে নিয়ে গেলেন বাড়ির পেছনে। সেখানে একটা তালগাছের ওপর একটা হাঁড়ি বাঁধা আর নিচে আগুন জ্বলছে।
গোপাল বলল, ‘ওই যে হাঁড়ি, ওটাতে জল, চাল, ডাল, নুন সব দেয়া আছে। এই তো খিচুড়ি হয়ে এল বলে। শিগগিরই আপনাদের গরম গরম খিচুড়ি খাওয়াব।’
রাজা বললেন, ‘তোমার বাড়িতে নিমন্ত্রণ খাব বলে সকাল থেকে তেমন কিছু খাইনি। খিদেয় পেট চোঁ চোঁ করছে। তুমি কী সব রসিকতা শুরু করলে গোপাল!’
‘রসিকতা বলছেন কেন, রান্না এই হয়ে এল বলে।’ জবাব দিল গোপাল।
রাজা বললেন, ‘তোমার ওই খিচুড়ি জীবনেও হবে না, আমার আর খাওয়াও হবে না। চলো মন্ত্রী, ফিরে যাই।’
গোপাল এবার বলল, ‘মহারাজ, কেন খিচুড়ি হবে না। দূরে গৃহস্থবাড়িতে জ্বালানো প্রদীপের আলো যদি পুকুরের জলে ডুবে থাকা গরিব প্রজার গায়ে তাপ দিতে পারে, এই প্রদীপ তো হাঁড়ির অনেক কাছে। নিশ্চয়ই খিচুড়ি হবে।’
রাজা তার ভুল বুঝতে পারলেন। বললেন, ‘আচ্ছা পাঠিয়ে দিয়ো তোমার ওই গরিব প্রজাকে। ওর প্রতি আসলেই অন্যায় করা হয়েছে। ওকে দ্বিগুণ উপহার দেব।’
‘সে তো আপনি দেবেনই। আমি জানতাম। আসুন, ঘরে আসুন। দুপুরের খাবার প্রস্তুত।’
রাজা এরপর সত্যি সত্যি গরিব প্রজাকে দ্বিগুণ উপহার দিলেন।
কেকে/এমএ