বনের রাজা সিংহ অনেক দিন ধরে চিন্তা করে যাচ্ছে বনের মাঝে মাঝে মধ্যে আনন্দ উৎসব পালন করবে। নিয়ম করে প্রতিদিন শিকার ধরা, গর্জন করা, নিজের শক্তি ধরে রাখার চেষ্টা চালানো- এসব এখন তার ভালো লাগে না, কেন জানি একঘেয়েমি হয়ে গেছে। তাই সে চিন্তা করল বনের সবার সঙ্গে গান-বাজনা, কৌতুক করে একটু আমোদ-ফুর্তি করবে। একঘেয়েমি হয়ে থাকলে সবাই ভাববে বনের রাজা ফুরিয়ে গেছে, শক্তি হারা হয়ে গেছে। কিন্তু সে এই কথাটা এখনো কারো কাছে প্রকাশ করেনি।
একটু সন্ধ্যা হলেই সিংহ ভাবতে বসে, দুচোখ দিয়ে সে কেবল কল্পনা এঁকে যায়। একটা বিশাল উঠোনে গানের আসর, গাছে গাছে বানরের ঝাঁক, সারিবদ্ধ হয়ে খেঁকশিয়ালের দল, বাঘ এসে দাঁড়িয়ে আছে ঝাউগাছের তলে আর ভয়ে ভয়ে হরিণ সব থমকে আছে। সিংহের ভয়ে সবাই অনুষ্ঠান দেখতে থাকে, কেউ সাহস করে অন্য কিছু করার সাহস পায় না। সিংহ খুশিতে অট্টহাসি দিয়ে সবাইকে বলে, আজ তোমরা মিলেমিশে গানই উপভোগ কর।
এটা ভাবতে ভাবতে কখন যে সকাল হয়ে আসে, টেরই পায় না। ইদানীং পেটে ক্ষুধা জমে গেছে, ঠিকমতো শিকারও করা হচ্ছে না। শিকার করতে গেলে মায়া ভেসে ওঠে। রাতে যে কল্পনা দিয়েছিল, সে কল্পনায় এ প্রাণীটি গান শুনে নাচতেছে, হাসতেছে। তাই সিংহ আর শিকার করে না।
সিংহের এ অবস্থা দেখে খেঁকশিয়াল জিজ্ঞেস করল, আপনার কি হয়েছে রাজা? এভাবে মন খারাপ করে কতদিন ধরে বসে আছেন!! সিংহ একটু স্বস্তি পেয়ে খেঁকশিয়ালকে মনের সব কথা খুলে বলল। তখন শিয়াল বলল তাহলে তো আনন্দ করার জন্য কিছু আয়োজন করা যায়। সিংহ শিয়ালকে আদেশ করল বনের সবাইকে দাওয়াত দিতে। যাতে করে সবাই এসে মন খুলে আনন্দ করে। শিয়ালও তাই করল।
সবার কাছে দাওয়াত পৌঁছিয়ে দিল, বাঘ থেকে শুরু করে বনের ছোট খরগোশ পর্যন্ত সবার কাছে।
আনন্দ উৎসব করার জন্য সিংহের কথামতো সবার কাছে দাওয়াত দিয়েছে ঠিকই, মতলব করে গৃহস্থের মুরগিদেরও দাওয়া দিয়ে এসেছে।
আয়োজন মতো সবাই একে একে হাজির হতে থাকল, ধীরে ধীরে অনুষ্ঠানও শুরু হলো। সবার আনাগোনায় জমে উঠলো বন। এদিকে গান-বাজনা রেখে শিয়াল তাকিয়ে আছে গৃহস্থের মুরগিদের দিকে, কখন তারা আসবে সে উদ্দেশ্যে। কিছুক্ষণ পর গৃহস্থের মুরগিরাও চলে এলো। সিংহ গৃহস্থের মুরগিদের দেখে শিয়ালকে জিজ্ঞেস করল, গৃহস্থের মুরগিকে দাওয়াত দিতে কে বলছে? এখন যদি একটা কিছু হয়ে যায় তাহলে আমি অপরাধী হয়ে যাব না? তখন শিয়াল বলে ওঠলো- আপনি আমাকে ভুল বুঝবেন না রাজামশায়। আমি তো মুরগিদের পক্ষে থাকব, দরকার হলে ওদের হয়ে লড়বো। আমি সবসময় মুরগির পক্ষে কাজ করি রাজামশায়। আমাকে বিশ্বাস করুন।
সিংহ আবারো গানের দিকে মনোযোগী হলেন, দেখতে লাগলো সবার উৎসব উদযাপন। অনুষ্ঠান শেষে সিংহ সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় দিলেন। সবাই হাসিমুখে ফিরতে লাগলো। কিন্তু সিংহ শিয়ালের দিকে লক্ষ্য রেখেছে, কখন সে কি করে সেই দিকে। যেই ভাবা সেই কাজ! কিছুক্ষণ পর শিয়াল মুরগির ওপর আক্রমণ চালাল। তখন সিংহ শিয়ালকে ধরে ফেলেছে, আর বলল- শিয়াল কখনো মুরগির আপন বন্ধু হতে পারে না। এটা আজকে আবারো প্রমাণ হলো।
কেকে/এমএ