খুকু গ্রামের এক ছোট্ট মেয়ে, খুব কল্পনাপ্রিয়। অন্য বাচ্চারা মাঠে দৌড়ায়, খেলাধুলা করে, আর খেলনা দিয়ে রান্নাবান্না খেলে। খুকু তার পুতুলদের অন্যরকম বানাত। সে তাদের গল্প, চরিত্র এবং জীবন দেয়। তার প্রিয় দুটি পুতুল ছিল ছেলেটি বোধন, মেয়েটি রেশমী। একদিন খুকু ঠিক করল, আজ এই দুই পুতুলের বিয়ে হবে। তবে এটি হবে শুধু খেলা নয়, বরং একটি শিক্ষণীয় বিয়ে।
খুকু বলল, তোমরা একে অপরকে সাহায্য করবে, সত্য বলবে এবং সবসময় ভালো কাজ করবে। পুতুলগুলো কথা বলতে পারে না, কিন্তু খুকু তাদের রাজি করালো মাথা নাড়া দিয়ে। খুকু বিয়ের জন্য প্রস্তুতি শুরু করল। সে কলাপাতার বড় পাতা দিয়ে বানাল মঞ্চ, হলুদ ফুল দিয়ে বানাল মালা, আর পুরোনো নীল ফিতে দিয়ে দুজনের গলায় বেঁধে দিল শফা। বাঁশি না থাকায় সে একটি পাতাকে ঠোঁটে ধরিয়ে ‘ফুঁই-ফুঁই’ শব্দ করে বাদ্য তৈরি করল।
খুকুর ছোট ভাই পল্টু এসে বলল, আমি বরযাত্রী হতে চাই! খুকু বলল, ঠিক আছে, তবে আগে একটি ভালো কাজ করবে। পল্টু দৌড়ে বাড়ির পাশে থাকা শুকনো প্লাস্টিকের মোড়কগুলো কুড়িয়ে মাটির ডাস্টবিনে ফেলল। খুকু হাসতে হাসতে বলল, দেখলে, এখন তুমি বরযাত্রী। সূর্যের নরম আলো উঠোনে পড়ে, সবকিছু উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। খুকু দুই পুতুলকে মঞ্চে বসিয়ে বলল, এখন বিয়ে শুরু। সে বলল, বোধন! তুমি কি রেশমীকে সত্য, ভালো কাজ এবং সাহায্যের বন্ধনে গ্রহণ করবে? খুকু পুতুল নাড়িয়ে দিল। রেশমীও মাথা নাড়লো।
তারপর তারা একে অপরকে ফুলের মালা পরালো। বাতাস হালকা দুলল, যেন প্রকৃতিও আনন্দ ভাগ করছে। পল্টু হাততালি দিল, আর খুকুর বুকটা আনন্দে ভরে উঠল। খুকু বলল, দেখ রেশমী, বিয়ে মানে শুধু
সাজসজ্জা নয়। যারা একসঙ্গে থাকে, তারা একে অপরকে সাহায্য করে, সত্য বলবে এবং ভালো কাজ শিখবে। মাটির পুতুল তো কথা বলতে পারে না, কিন্তু খুকু জানত আজকের খেলা শুধু খেলা নয়; এটি হলো বন্ধুত্ব, সততা এবং ভালো কাজের উৎসব। খুকু বুঝল, জীবনের সম্পর্কগুলো টিকে থাকে ভালো আচরণ, সততা এবং একে অপরকে সাহায্য করার ওপর।
এভাবেই খুকুর মাটির পুতুলের বিয়ে আনন্দময়, শিক্ষণীয় এবং স্মরণীয় হলো।
কেকে/এমএ