একটি ছোট সবুজ শ্যামল গ্রামে বাস করত দশ বছরের একটি ছেলে রিফাত। ছোট্ট নিষ্পাপ মায়াভরা মুখ, চোখে মায়ার দৃষ্টি আর মনে ভরা অনেক স্বপ্ন। কিন্তু রিফাতের জীবনটা ছিল খুব কষ্টের। রিফাতের বাবা মারা গেছেন রিফাতের বয়স যখন এক বছর। মা আছেন তিনি মানুষের বাড়িতে কাজ করে কোনো রকমে সংসার চালান। খাবার জোটে না প্রতিদিন পেট ভরে। পেট ভরে খাওয়া যেন রিফাতের কাছে মহা আনন্দের বিষয়।
রিফাতের ঘরে ছিল একটি পুরোনো ফাটা আয়না। সেটি তার বাবার রেখে যাওয়া একমাত্র স্মৃতি। যতই পুরোনো হোক, রিফাতের কাছে ওটাই ছিল সবচেয়ে প্রিয় জিনিস। যখনই তার খুব ক্ষুধা লাগত, আর ঘরে খাবার কিছুই থাকত না, তখন সে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াত। নিজের মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের সঙ্গেই কথা বলত, আজ যদি একটু ভাত আর ডাল পেতাম, কত ভালো হতো। সেই কথা শুনে রিফাতের মা বলতেন, একদিন সব ঠিক হবে বাবা, আল্লাহ আছেন।
একদিন বিকালে প্রচণ্ড ক্ষুধায় রিফাতের মাথা ঘুরছিল। রিফাতের মা তখনও ফিরেনি কাজ থেকে। রিফাত চুপচাপ আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। কিন্তু এবার সে কিছু বলার আগেই আয়নাটা ঝিকমিক করতে শুরু করল। প্রথমে সে ভয় পেয়ে গেল, কিন্তু পরে দেখল আয়নার ভেতর থেকে যেন কারো মিষ্টি গলার স্বর ভেসে আসছে- রিফাত, তোমার অনেক ধৈর্য, তুমি একজন নিষ্পাপ ছেলে। আমি জাদুর আয়না। আমি তোমার সাহায্য করব। কারণ যারা বিপদে ধৈর্য ধরে মনোবল হারায় না এবং মানুষকে ভালোবাসে লোভ করে না আমি তাদের সাহায্য করি। রিফাত অবাক হয়ে বলল, তুমি কি আমাকে একটু খাবার দেবে?
আয়না ঝিকমিক করে উঠল, আর হঠাৎ টেবিলের ওপর দেখা গেল এক প্লেট গরম ভাত, ডাল আর একটু গোস্ত রিফাত খুশিতে চিৎকার করে উঠল। খাবার দেখেই ক্ষুধা মিটে গেল তার, আর চোখে জল এসে গেল আনন্দে। সেদিন থেকে যখনই মা খুব ক্লান্ত হয়ে ফিরতেন বা ঘরে খাবার কম থাকত, তখন রিফাত জাদুর আয়নার সামনে যেত কথা বলতে আর জাদুর আয়না তাদের সাহায্য করত। কখনো খাবার, কখনো কিছু টাকা, কখনো আবার নতুন জামা এনে দিত।
অনেক বছর কেটে গেল। রিফাত পড়াশোনা শেষ করে মস্ত বড় চাকরি করে। সে গ্রামের দরিদ্র শিশুদের জন্য একটি স্কুল খুলল। আর সেই পুরোনো আয়নাটা এখনো তার ঘরে টাঙানো, সে এখন আর জাদুর আয়নার সাহায্য নেয় না। এখন সে নিজে উপার্জন করে আর দরিদ্র মানুষকে সাহায্য করে আর মনে মনে ভাবে সত্যিকারের জাদু হচ্ছে দয়া, আর মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা।
কেকে/এমএ