ঢাকার মিরপুর অঞ্চলের রাজনৈতিক কোন্দল, চাঁদাবাজি, মাদকসহ আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্ব থেকে যুবদল নেতা গোলাম কিবরিয়াকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছে র্যাব। পল্লবী থানা যুবদলের সদস্যসচিব গোলাম কিবরিয়া হত্যা মামলার এজাহারে নাম থাকা দুজনকে গ্রেফতারের পর র্যাবের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। গতকার বুধবার ঢাকার কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৪ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট মাহবুব আলম বলেন, গোলাম কিবরিয়া পল্লবী থানা যুবদলের সদস্যসচিব হওয়ার কারণে এ অঞ্চলের রাজনীতিতে অনেক বেশি সক্রিয় ছিলেন। এ অঞ্চলে রাজনৈতিক মেরুকরণের পর কিবরিয়ার আগে যাদের সঙ্গে সখ্য ছিল, তাদের বিরুদ্ধে কাজ করছিলেন তিনি। এ কারণে এই হত্যাকাণ্ড হতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা।
শীর্ষ সন্ত্রাসী মফিজুর রহমান ওরফে মামুনের সঙ্গে গোলাম কিবরিয়ার (৪৭) সখ্য ছিল বলে জানিয়েছে র্যাব। তবে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মামুনের সম্পর্ক আছে কি না, সেটি তদন্ত করা হচ্ছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান র্যাব কর্মকর্তা মাহবুব আলম। তিনি জানান, গ্রেফতার দুজন হলেন মনির হোসেন ওরফে পাতা সোহেল (৩০) ও মো. সুজন ওরফে বুক পোড়া সুজন (৩৫)। গতকাল রাতে মনির হোসেনকে সাভার থেকে এবং সুজনকে গাজীপুরের টঙ্গী এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পাতা সোহেলের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতিসহ ৮টি মামলা রয়েছে। আর সুজনের বিরুদ্ধে ১৮টি মামলা রয়েছে।
গত সোমবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে মুখোশধারী তিন সন্ত্রাসী মিরপুর ১২ নম্বরের বি-ব্লকে ‘বিক্রমপুর হার্ডওয়্যার অ্যান্ড স্যানিটারি’ নামের একটি দোকানে ঢুকে খুব কাছ থেকে গুলি করে গোলাম কিবরিয়াকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনার পর দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যাওয়ার সময় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় ওঠে এবং দ্রুত না চালানোয় চালক আরিফ হোসেনের (১৮) কোমরে গুলি করে তাকে আহত করে। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দারা জনি ভূঁইয়া (২৫) নামের একজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। পুলিশ বলেছে, কিবরিয়াকে হত্যা করতে জনি ভূঁইয়াসহ কয়েকজনকে ভাড়া করা হয়েছিল। হত্যায় সরাসরি অংশ নেওয়া অপর দুজনকেও শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
গ্রেফতার মনির হোসেন ও সুজন মিরপুর অঞ্চলে সক্রিয় ‘ফোর স্টার’ গ্রুপের সদস্য বলে জানিয়েছে র্যাব। তবে কথিত ফোর স্টার গ্রুপ সম্পর্কে জানতে চাইলে র্যাব কর্মকর্তা মাহবুব আলম বলেছেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে মিরপুর অঞ্চলে সন্ত্রাসী কার্যক্রমগুলো হচ্ছে চারজন শীর্ষ সন্ত্রাসীর নামে। মিরপুর অঞ্চলে এই চারজন শীর্ষ সন্ত্রাসীর নির্দেশে নানা অপকর্ম হচ্ছে। এই চারজন শীর্ষ সন্ত্রাসীর গ্রুপকে একত্রে বোঝাতে ‘ফোর স্টার’ বলা হচ্ছে। যে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছেন, তারা ফোর স্টার গ্রুপের সদস্য।
অপর দিকে র্যাব যে দুজনকে গ্রেফতার করেছে, তারা আদতে ‘ফোর স্টার’-এর সদস্য নন, মামুন বাহিনীর সদস্য বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশের ভাষ্য, ঢাকার মিরপুরের পল্লবীতে যুবদল নেতা গোলাম কিবরিয়াকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় বিদেশে অবস্থানকারী শীর্ষ সন্ত্রাসী মফিজুর রহমান ওরফে মামুন নামের পলাতক ওই আসামি এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও লেনদেন নিয়ে দ্বন্দ্ব থেকে কিবরিয়াকে হত্যা করিয়েছেন। ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের দিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।
তবে র্যাব সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে, হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী গ্রেফতার মনির হোসেন ওরফে পাতা সোহেল। রাজনৈতিক কোন্দল ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ হত্যাকাণ্ডে বড় অঙ্কের অর্থের লেনদেন হয়। মনির হোসেন এই অর্থ কোথা থেকে পেয়েছেন, সেটি পরিষ্কার নয়।
কেকে/ আরআই