নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে দেশকে অস্থিতিশীল করতে ততই মরিয়া হয়ে উঠেছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে কথিত কর্মসূচি ঘোষণা করেছে পতিত শক্তিটি। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকাকে ঘিরে নাশকতার প্ল্যান সাজাচ্ছে তারা। আগামী ১৩ নভেম্বর ঢাকা লকডাউনের আহ্বান জানানো হয়েছে।
এদিকে ফ্যাসিস্ট শক্তির নাশকতার কর্মসূচির মধ্যেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নসহ ৫ দফা দাবি আদায়ে কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ ৮ দল। দাবি মানা না হলে, ১১ নভেম্বর মহাসমাবেশ করবে তারা। ওইদিন ‘ঢাকার চিত্র ভিন্ন’ হবে বলে হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, নভেম্বর-ডিসেম্বর ঘিরে দীর্ঘদিন ধরেই নাশকতার পরিকল্পনা করছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের তারিখ কাছাকাছি আসতেই আঁটঘাট বাঁধে পতিত শক্তি।
রাজধানীতে এরই মধ্যে দলটির বহু নেতাকর্মী ছদ্মবেশে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছে। ঝটিকা মিছিল করে মাঝেমধ্যেই নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে তারা। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক জেলা-উপজেলারজুড়ে বিক্ষোভ ও ১৩ নভেম্বর ঢাকা লকডাউনের জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগের এ কর্মসূচি আসলে দেশকে অস্থিতিশীল করে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নভেম্বরের প্রথমার্ধটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফ্যাসিস্টের ষড়যন্ত্র ঠেকাতে এ মুহূর্তে রাজনৈতিক ঐক্য খুবই জরুরি। কারণ অনৈক্যের ফাঁক গলেই আওয়ামী লীগ তার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের সুযোগ খুঁজে নেবে। দেশ বড় ধরনের নিরাপত্তা শঙ্কা পড়তে পারে। তাই এ সময় রাজনৈতিক দলগুলোকে আরো দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানান তারা। বিশ্লেষকরা আরো বলছেন, এসনিতেই দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক। তাই ফ্যাসিস্ট শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবেই মোকাবিলা করতে হবে। না হলে বড় অঘটনের শঙ্কা রয়েছে।
জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের গণভোট ও জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারির দাবি জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘সোজা আঙুলে যদি ঘি না ওঠে আঙুল বাঁকা করব, ঘি আমাদের লাগবেই, নো হাঙ্কি পাঙ্কি।’ তিনি প্রয়োজনে আবারও রাজপথে রক্ত ও জীবন দেওয়ার ঘোষণা দেন এবং ‘ষড়যন্ত্রকারীদের’ পরাজয় হবে বলে সতর্কতা দেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নসহ পাঁচ দফা দাবিতে জামায়াতসহ আটটি সমমনা রাজনৈতিক দলের স্মারকলিপি প্রদানের পূর্বে এক সমাবেশে তাহের এসব কথা বলেন।
জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, আমরা রাজপথে এসেছি, প্রয়োজনে আবার রক্ত দেব, প্রয়োজনে আবার জীবন দেব। আমাদের জুলাইয়ের অর্জনকে ব্যর্থ হতে দেব না। জুলাইয়ের সনদ বাংলার মাটিতে দেশের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে। জামায়াতের এই শীর্ষ নেতা সরকারের বিরুদ্ধে সময়ক্ষেপণের চালাকি করার অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, ‘এই চালাকি সরকারকে বিপদে ফেলবে এবং আমার দল (জামায়াত) দাবি আদায়ের নতুন পন্থা আবিষ্কার করবে।’
দাবি না মানলে ১১ নভেম্বর ঢাকার চিত্র ভিন্ন হবে : গোলাম পরওয়ার
জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি দল যে পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করছে, ১১ নভেম্বরের আগে অন্তর্বর্তী সরকারকে সেসব দাবি মেনে নিতে বলেছেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, ১১ নভেম্বর আটটি রাজনৈতিক দলের উদ্যোগে রাজধানীতে মহাসমাবেশ হবে। ঢাকার মহাসমাবেশ লাখ লাখ জনতার পদভারে মুখর হওয়ার আগে সরকার যেন পাঁচ দফা দাবি মেনে নিয়ে জুলাই সনদের গণ-আকাঙ্ক্ষার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে। তা না হলে ১১ নভেম্বর ঢাকার চিত্র ভিন্ন হবে।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগের পলতাক নেতা ও দলটির সংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানকের একটি বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে। যেখানে তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ঢাকা লকডাউনে ঘোষণা দেন। তিনি আহ্বান জানান, আগামী ১৩ নভেম্বর ঢাকাকে লকডাউন করতে হবে। এদিন যানবাহন চলবে না, দোকানপাট-অফিস আদালত খুলবে না। এমন নির্দেশনা দিচ্ছেন নেতাকর্মীদের। এর আগে ১০ থেকে ১২ নভেম্বর সারা দেশে বিক্ষোভেরও আহ্বান জানান তিনি।
কেকে/এজে