শুক্রবার, ৭ নভেম্বর ২০২৫,
২৩ কার্তিক ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

শুক্রবার, ৭ নভেম্বর ২০২৫
শিরোনাম: দেশে বড় অঘটনের শঙ্কা      নানা হিসাব-নিকাশে মনোনয়নবঞ্চিতরা      বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় গৃহীত যত সিদ্ধান্ত      বিএনপি না আসলে এ দেশ ভুটান-কম্বোডিয়ার মতো হতো : প্রকৌশলী তুহিন      মানুষের গণতন্ত্রের নিশ্চয়তা ও সংকট থেকে মুক্ত করেছেন জিয়াউর রহমান : রিজভী      বৃহস্পতিবারের আলোচিত সংবাদ      ৬৬ দেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থাকে চূড়ান্ত নিবন্ধন দিল ইসি      
খোলাকাগজ স্পেশাল
দেড়শ কোটি টাকার প্রকল্পে সুফল পাচ্ছে না কক্সবাজারবাসী
মো. নেজাম উদ্দিন, কক্সবাজার
প্রকাশ: বুধবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৫, ১০:৩৯ এএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

কক্সবাজারে পৌরসভার লাইনে পানি আসছে না। কিন্তু বিল ঠিকই আসছে। গত ৪ বছর ধরে পানি সংকট তীব্র হচ্ছে। পৌর এলাকার টেকপাড়া, দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়া, তারাবনিয়ারছড়া, চাল বাজার, নুরপাড়া, কৃষি অফিস রোড় এলাকা থেকে শুরু করে পেশকারপাড়াসহ ৩ ও ৪নং ওয়ার্ডের বেশকিছু এলাকার বাসিন্দা তীব্র পানি সংকটে পড়েছে। তবে ঠিকই পৌরসভার পানির বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। পানি না পেয়ে চরম অসুবিধায় পড়েছে পৌরসভার ১০২৫ জন গ্রাহক। আজ-কাল করে লাইন ঠিক করার কথা বললেও পানির দুর্ভোগ কমছে না কিছুতেই।

জানা গেছে, কক্সবাজার পৌরসভা থেকে পানি সরবরাহ নেয় ১০২৫ পরিবার। তাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি শুধু পৌরসভার লাইনের পানির উপর নির্ভরশীল। সর্বশেষ ২০১৫ সালের পরে কক্সবাজার পৌর এলাকাতে নতুন করে উৎপাদক নলকূপ আর স্থাপন করা হয়নি। তখন দায়িত্বশীল মেয়র সরওয়ার কামাল পৌর এলাকাজুড়ে ৬টি গভীর উৎপাদক নলকূপ স্থাপন করিয়েছিলেন। এরপর পৌরসভার জনসংখ্যা কয়েকগুন বাড়লেও বাড়েনি উৎপাদন নলকূপের সংখ্যা। বরং ১০টি নলকূপের মধ্যে ২টি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে দীর্ঘদিন। বাকি ৮টি উৎপাদক নলকূপ থেকে পানি উঠলেও তা পরিমাণে কমে আসছে।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পৌরসভার এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, পৌরসভায় সাবেক মেয়র ও বর্তমান সময়ে পানি শাখায় দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা নামে-বেনামে বিল বানিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন, কাজের কাজ কিছুই করেনি। পানির  মোটরগুলো মেরামতের নামে দামি যন্ত্রাংশ কাগজে-কলমে কিনলেও বাস্তবে তা ছিল খুবই নিম্নমানের। কিন্তু বিল করে ঠিকই সব টাকা ভাগাভাগি করেছেন। বর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী রুমেল বড়ুয়া শুধু বিল-ভাউচার করে কি পরিমাণ টাকা মেরে দিয়েছেন তার তথ্য-প্রমাণ থাকলেও কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বরং তাকে পুরস্কৃত করা হচ্ছে।

কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র সরওয়ার কামাল বলেন, পৌর এলাকাজুড়ে পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। নাগরিকরা কষ্ট পাচ্ছে, অথচ বর্তমান পৌর কর্তৃপক্ষ সেসব বিষয়ে নজর দিচ্ছে না। যেসব পানির পাম্প চালু আছে সেগুলোতে পানির উৎপাদন বাড়ানো দরকার। শুনেছি প্রতিটি কাজে অনিয়ম-দুর্নীতি হচ্ছে সেগুলো তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। আর ঝিলংজা চান্দেরপাড়া এলাকায় যে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট চালু করার কথা সেটা কেন বন্ধ হয়ে আছে জানি না। দ্রুত সেই প্রকল্প থেকে পানি সরবরাহ করার উদ্যোগ নেওয়া দরকার।

এদিকে কক্সবাজারের দেড়শ কোটি টাকা ব্যয়ে পানি শোধনাগার নিয়ে বিগত দিনে নয়ছয় হলেও গত জানুয়ারি মাসে আশার বাণী শুনিয়েছিলেন প্রকল্প পরিচালক গোলাম মুক্তাদির। গত জুন মাসের মধ্যে পানির লাইন ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার কথা থাকলেও এখনো কোনো কাজের অগ্রগতি নেই। প্রথমে হোটেল-মোটেল জোনকে প্রাধান্য দিয়ে তাদের পানির লাইন ক্লিয়ার করে কক্সবাজার পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে কাজ শেষ করার কথা বলেছিলেন। কিন্তু এখনো কাজ শেষ করতে পারেননি। সবমিলিয়ে গত জুনের মধ্যে সুপেয় পানির লাইন কক্সবাজারের প্রতিটি ঘরে পৌঁছে যাবে বলে জানিয়েছিল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। 

পানির দামও নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ঘরের জন্য এক হাজার লিটারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ টাকা। হোটেল-মোটেল জোনে বাণিজ্যিকভাবে যারা ব্যবহার করবে তাদের জন্য প্রতি এক হাজার লিটারের মূল্য ৪০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এদিকে শুরুতে এই প্রকল্প নিয়ে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে বেশ তুলকালামকাণ্ড হলেও বর্তমানে আলোর মুখ দেখলেও প্রকল্পটি শেষ করতে পারছে না সংশ্লিষ্ট দপ্তর। গত জুন মাসের মধ্যে এই প্রকল্পের সুবিধা পাবে পর্যটন নগরীর হাজারো মানুষ এমনটা কথা ছিল কিন্তু এখনো কাজ শেষ করতে পারেনি।  

সুপেয় পানি সংকট দূর করতে কক্সবাজার শহরে ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনাগার প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) এবং বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে প্রায় দেড়শ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। সদর উপজেলার ঝিলংজা মৌজায় ২.১৭৫০ একর জমি অধিগ্রহণ করে ২০২৪ সালে শোধনাগার নির্মাণ শেষ করার কথা ছিল। শহরের গোলদীঘিপাড় এলাকায় পাহাড়ে একটি মাদার ট্যাঙ্কসহ বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়ামসংলগ্ন এলাকা, দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়া, সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট এবং বাস টার্মিনাল এলাকায় তৈরি করা হয়েছে পাঁচটি ওভার ট্যাঙ্ক বা উচ্চ জলাধার। এখনো বসতবাড়ির সরবরাহ লাইনের কাজ শুরু করা হয়নি তবে জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। 

২০২৩ সালের জুনে প্রকল্পের পূর্ণ মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। তারপরও সরবরাহ লাইনের কাজ শেষ না হওয়ায় দ্বিতীয় বারের মতো ২০২৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত বাড়ানো হয় মেয়াদ। কিন্তু এখনো শেষ করতে পারেনি শেষ করতে। 

প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতি ঘণ্টায় ১০ লাখ লিটার (এক হাজার মিটার কিউব) পানি পরিশোধন করা হবে শোধনাগারে। সেখান থেকে পৌরসভার ১ লাখ ২০ হাজার মানুষকে পানি সরবরাহ করা হবে। সরবরাহ লাইন না বসানোয় এখনো শোধনাগারটি চালু করা যায়নি।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী ইবনে মায়াজ প্রামাণিক জানান, পানি শোধনাগার প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ। শুরুতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেরি হওয়ায় সরবরাহ লাইনের কাজ শুরু করতে একটু দেরি হয়েছে। এই বছরের জুন পর্যন্ত সময় থাকলেও সময় বাড়িয়ে আশা করছি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হবে এবং ঘরে ঘরে পানি সরবরাহ করতে পারব।

প্রকল্প পরিচালক গোলাম মুক্তাদির জানান, আমরা যখন প্রকল্পটি হাতে নিই। তখন হাউসহোল্ড কানেকশন ধরাই ছিল না। কারণ হাউসহোল্ড কানেকশনটা পৌরসভা দেওয়ার কথা ছিল। পরে পৌরসভা অপারগতা প্রকাশ করলে কাজটা পিছিয়ে যায়। এখন এ প্যাকেজটি নতুন করে প্রকল্পের ভেতরে আনা হয়েছে। যদিও দেরি হয়েছে, তারপরও প্রকল্পটি রিভিশন করে হাউস কানেকশন ইনক্লুড করে মন্ত্রণালয় থেকে পাস করিয়ে পরিকল্পনা কমিশনে গেছে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কক্সবাজার শহরে অপরিকল্পিত গভীর নলকূপে পানি উত্তোলন বাড়ছে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পর ভূগর্ভস্থ অতিরিক্ত পানি উত্তোলনও বেড়েছে। এতে কক্সবাজারে দিন দিন পানির স্তর নিচে নামছে। সুপেয় পানি সংকটের পাশাপাশি পানিতে বাড়ছে লবণাক্ততার মাত্রাও।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কক্সবাজার শহরে প্রায় তিন হাজার গভীর নলকূপ ও ৩০ হাজার অগভীর নলকূপ দিয়ে দৈনিক তিন কোটি লিটার পানি তোলা হচ্ছে। শহরের দুই লাখ বাসিন্দা ছাড়াও প্রায় এক লাখ পর্যটকের চাহিদা মেটায় এ নলকূপগুলো। নলকূপগুলোতে বর্ষাকালে অর্থাৎ মে মাসের শেষ দিক থেকে নভেম্বরের প্রথমার্ধ পর্যন্ত স্বাভাবিক পানি থাকলেও বাকি সময় বিপত্তি ঘটে। এ সময় নলকূপ থেকে উচ্চমাত্রায় লবণাক্ত পানি উঠে আসে অথবা নলকূপ বিকল হয়ে যায়।

এদিকে কক্সবাজার শহর ছাড়াও টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন রোহিঙ্গারা জনপ্রতি ১০ লিটার করে পানি পাচ্ছেন। মেডিসিন্স স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স (এমএসএফ) বা সীমান্তবিহীন চিকিৎসক দল বলেছে, পানি সংকটের কারণে রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা হুমকির মুখে পড়েছে। এমএ-সএফ জরুরি ভিত্তিতে সংকট নিরসনে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

কক্সবাজার পৌরসভা ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের তথ্য মতে, কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য অগভীর নলকূপ অকেজো হয়ে পড়েছে। কক্সবাজারে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতি বছর ১০-১১ ফুট হারে নিচে নামছে। ফলে অকেজো হয়েছে সাগরপাড়ের তিন শতাধিক আবাসিক হোটেলের অসংখ্য পানির পাম্প। ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে এমন অবস্থা বলে মনে করছে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তর।

কেকে/এআর
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

দেশে বড় অঘটনের শঙ্কা
নানা হিসাব-নিকাশে মনোনয়নবঞ্চিতরা
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় গৃহীত যত সিদ্ধান্ত
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস শুধু বিএনপি নয়, পুরো জাতির কল্যাণ বয়ে আনে : প্রকৌশলী আহসান হাবীব
বিএনপি না আসলে এ দেশ ভুটান-কম্বোডিয়ার মতো হতো : প্রকৌশলী তুহিন

সর্বাধিক পঠিত

জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি
জয়পুরহাট রেলস্টেশনে যাত্রী লাঞ্ছিতের অভিযোগ
নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে
পরিচ্ছন্ন পরিবেশই একটি গন্তব্যকে পর্যটনবান্ধব করে তোলে : নুজহাত ইয়াসমিন
এনসিপি নেতার আঙ্গুল কেটে নিল সন্ত্রাসীরা!
সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close