আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জোট গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। যে রাজনৈতিক দল দেশের সার্বিক সংস্কার ও নাগরিক অধিকার বাস্তবায়নে আন্তরিক তাদের সঙ্গে জোট করতে আগ্রহী নতুন নিবন্ধন পাওয়া এ দলটি। একই লক্ষ্যে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে আলোচনা চলমান রয়েছে তাদের। তবে ২৩৭ আসনে বিএনপির আকর্ষিক প্রার্থী ঘোষণায় হোঁচট খেয়েছে এনসিপি।
এনসিপির অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা যায়, বিএনপির সঙ্গে জোট গঠনের আলোচনা চলছে এনসিপির। তবে বিড়ম্বনা বেঁধেছে বিএনপির ২৩৭ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণার পর। দলটি এমন সব আসনেও প্রার্থী দিয়েছে যেখানে এনসিপির শীর্ষ নেতারা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছেন।
বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঢাকা-১১ আসনে বিএনপির প্রার্থী করা হচ্ছে এম এ কাইয়ুমকে। এ আসনে নির্বাচন করতে পারেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। রংপুর-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ এনামুল হক ভরসা। এখানে নির্বাচন করতে পারেন এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন। পঞ্চগড়-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন মোহাম্মদ নওশাদ জমির। এ আসনে আগে থেকে নির্বাচনি প্রচার চালাচ্ছেন এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।
কুমিল্লা-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থিতা পেয়েছেন মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী। এ আসনে নির্বাচন করতে পারেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। চাঁদপুর-৫ আসনে বিএনপি প্রার্থী দিচ্ছে মো. মমিনুল হককে। এ আসনে নির্বাচন করতে পারেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। নোয়াখালী-৬ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন মোহাম্মদ মাহবুবের রহমান শাম্মী। এখানে এনসিপির আব্দুল হান্নান মাসউদ আগে থেকে প্রচার-জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে- বিএনপির সঙ্গে এনসিপির জোট হলে বিএনপি কি এসব আসন ছেড়ে দেবে? ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সমীকরণ হয়তো নির্ধারণ করবে সেই সিদ্ধান্ত।
এ বিষয়ে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব হুমায়রা নূর বলেন, ‘এখনো জোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। কারণ কিছু বিষয়ে যে অস্পষ্টতা আছে এটা নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা বারবার একটা কথা বলে আসছি, অভ্যুত্থানকে যারা সেম স্পিরিটে (একই চেতনায়) ধারণ করবে, সেম অভিপ্রায় যাদের থাকবে, তাদের সঙ্গে আমরা জোট করতে পারবো। এখন যদি কোনো দল অভ্যুত্থানের স্পিরিট ধারণ না করে, শুধু নির্বাচন নিয়ে পড়ে থাকে, তাদের সঙ্গে আমাদের জোট করাটা কঠিন হয়ে যাবে। এ ধরনের বিষয়গুলো এখনো মীমাংসিত নয়। জামায়াতের সঙ্গে আমরা কিছুতেই যাচ্ছি না, এটা মোটামুটি স্পষ্ট। বিএনপি বা অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমরা জোটের রাজনীতি করতে পারতাম কি না তা নিয়েও আলোচনা চলছে।’
এনসিপির এ নেত্রী বলেন, ‘তারেক রহমান বলেছেন যে তারা আমাদের চায়। তার থেকে আমরা একটি ইতিবাচক মনোভাব পেয়েছি। তারপরও এখন পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না। জোটের সঙ্গে যদি সমন্বয় করার সুযোগ থাকে সেক্ষেত্রে আলাদা আলাদা আসনে আমরাও প্রার্থী দেব। আমরা ৩০০ আসনের প্রার্থী নিয়ে গুছিয়ে উঠছি।’
বিএনপির সঙ্গে জোট হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখনো উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে এখন তাদের কতটুকু ইতিবাচক মনোভাব আছে সেটি দেখতে হবে। আমাদের প্রধান লক্ষ্য জুলাই সনদ বাস্তবায়ন। এটি যদি কেউ করতে চায় আমরা একসঙ্গে কাজ করব।’
এ বিষয়ে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘সংস্কার বাস্তবায়নে যারা কাজ করবে, আমরা তাদের সঙ্গে কাজ করব।’ নির্বাচনি প্রচারে এনসিপি পিছিয়ে আছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে নাসীরুদ্দীন বলেন, ‘বিচার এবং সংস্কারের বাস্তবায়ন নিয়ে আমরা ব্যস্ত ছিলাম। সরকার যদি দ্রুত আদেশ (জুলাই সনদ বাস্তবায়ন) জারি করে দেয়...নৈতিকভাবে আমরা আদেশের আগে নির্বাচনি প্রচারণায় যেতে পারি না। পুরোনো বাংলাদেশে আমি নির্বাচনি কাজ করে কী করব?’
এ ছাড়া এনসিপির একাধিক নেতা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, দেশে বিদ্যমান চিরায়ত বিরোধ আর প্রতিহিংসার রাজনীতিকে নয়, বরং জনগণের প্রত্যাশিত সংস্কার বাস্তবায়নকে অগ্রাধিকার দিতে চায় এনসিপি। যে দলগুলো এ লক্ষ্যে কাজ করতে প্রস্তুত, তাদের সঙ্গে তারা হাত মেলাতে তৈরি।
দলীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এরই মধ্যে এনসিপি কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। আগামী ৭ নভেম্বর দলের সাধারণ সভায় নির্বাচনি মনোনয়ন এবং জোট গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা হবে। আলোচনা সফল হলে আগামী সপ্তাহেই আনুষ্ঠানিকভাবে জোটের ঘোষণা আসতে পারে। তবে কোন কোন দলের সঙ্গে জোট হবে সেটি এখনো স্পষ্ট নয়।
দল গঠনের পর অনেকেই মনে করেছিল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোটে যেতে পারে এনসিপি। তবে সে সম্ভাবনা এখন ফিকে হয়ে গেছে। ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে জোট গঠনের পরিকল্পনা করছে জামায়াত। অন্যদিকে, জামায়াত নিয়ে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের ফেসবুক পোস্টের পর দুদলের রাজনৈতিক দূরত্ব এমন পর্যায়ে গেছে যে জোট গঠনের সম্ভাবনা আর তেমন নেই।
কেকে/এআর