রোববার, ২ নভেম্বর ২০২৫,
১৮ কার্তিক ১৪৩২
বাংলা English
ই-পেপার

রোববার, ২ নভেম্বর ২০২৫
শিরোনাম: সরকারের টাকায় নিজস্ব বাহিনী গড়ছেন আসিফ      আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম      আজকের আলোচিত ছয় সংবাদ      গাজা থেকে ফেরত পাওয়া তিন মরদেহ জিম্মিদের নয় : ইসরায়েল      জুলাই সনদে স্বাক্ষর নিয়ে বিএনপি আমাদের বিরোধিতা করেছিল      প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনী প্রধানের সাক্ষাৎ      জুলাই সনদের প্রয়োজন নেই : মেজর হাফিজ      
খোলা মত ও সম্পাদকীয়
কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় কৃষিবান্ধব নীতির প্রয়োজন
রিয়াদ হোসেন
প্রকাশ: শনিবার, ১ নভেম্বর, ২০২৫, ১০:০৬ এএম
ছবি : খোলা কাগজ

ছবি : খোলা কাগজ

বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। কৃষির ওপর নির্ভর করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে এদেশের অধিকাংশ মানুষ। এই বিশাল জনগোষ্ঠী ফসল উৎপাদন, পশুপালন, মৎস্য চাষসহ নানাভাবে কৃষির সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে। আদিমকাল থেকে বাংলার মানুষের জীবনযাত্রা ও সভ্যতার সঙ্গে কৃষি এবং কৃষক ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত। অধিক জনসংখ্যার এই দেশে কৃষকরা মাটির সঙ্গে সখ্য গড়ে ফসল উৎপাদন করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে এসেছে। এ দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির পিছনে তাদের অবদান সিংহভাগ। 

কিন্তু দিনের পর দিন, যুগের পর যুগ তারা নানাভাবে বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে। তারা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অভাব-অনটনের সংসারে দিন চালাতে না পেরে এদেশের বহু কৃষক আত্মহত্যা করেছে- এ খবর নতুন কিছু নয়। কিন্তু কথা হলো, এভাবে আর কতকাল কৃষক বঞ্চনার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে? সমাজ আর রাষ্ট্রের যাঁতাকলে পিষ্ট হতে থাকবে? আমরা দেখেছি, এদেশের শিক্ষকরা তাদের অধিকার খর্ব হলে কিংবা বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবি নিয়ে বারবার রাস্তায় নেমে আসে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে দাবি আদায়ের আন্দোলন চালিয়ে যায়। যতদিন তাদের দাবিদাওয়া মেনে না নেওয়া হয় ততদিন তারা ঘরে ফিরে যায় না। তেমনিভাবে আমাদের ডাক্তার সমাজও বিভিন্ন দাবি তুলে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা বন্ধ রাখে। দিনের পর দিন রোগীরা ভোগান্তির শিকার হয়। এভাবে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ তাদের কর্মস্থলে সেবা না দিয়ে দাবি আদায়ের নামে সমাবেশ, মহাসমাবেশ ডেকে রাস্তাঘাট বন্ধ করে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যায়। 

কিন্তু আমাদের অন্নের জোগানদাতারা দিনের পর দিন এ সমাজে অবহেলিত এবং অধিকার বঞ্চিত জনগোষ্ঠী হয়ে জীবন-যাপন করে আসছে। তারা বছরের পর বছর উৎপাদিত ফসলের সঠিক মূল্য পায় না। অতিরিক্ত বৃষ্টি, খরা বা বন্যায় তাদের ফসল নষ্ট হয়ে যায়। ফসল উৎপাদন করতে গিয়ে সার, বীজ, কীটনাশক ও সেচের খরচ বেড়ে যাওয়ায় তারা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এতকিছুর পরও তারা আন্দোলনের ডাক দেয় না, রাস্তায় নেমে সড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ করে না। এজন্য আমাদের কৃষকদের প্রতি সরকারের আরো নজর দেওয়া প্রয়োজন। তারা যেন তাদের উৎপাদিত পণ্যের যথাযথ মূল্য পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখা জরুরি। 

আমরা কি কখনো ভেবেছি, শিক্ষকদের মতো স্কুল বন্ধ করে, ডাক্তারদের মতো হাসপাতাল বন্ধ করে, কৃষকরাও যদি ফসল উৎপাদন বন্ধ করে দেয় তাহলে আমাদের কি অবস্থা হতে পারে? এ কাজ যদি কোনদিন কৃষকরা এক হয়ে করে তাহলে, দেশে চরম খাদ্য সংকট দেখা দেবে। 

দীর্ঘদিন ধরে তারা যদি সব ধরনের কৃষি পণ্য উৎপাদন থেকে বিরত থাকে তাহলে নির্দ্বিধায় বলা যায়, দেশে দুর্ভিক্ষের মতো মহামারি দেখা দিবে। বর্তমান বাজারে, আলুর দাম অনেকটা কম। দাম কমতে কমতে প্রতি কেজি আলু এখন ২০ টাকার নিচে নেমে এসেছে। কিন্তু কথা হলো, এই দামে যদি আলু বিক্রি করা হয় তাহলে কৃষক কতটা লাভবান হবে? পরবর্তী বছরে তারা আলু লাগাতে কতটা উৎসাহিত হবে? কারণ দেখা গেছে, আলু উৎপাদন করতে গিয়ে জমি, শ্রমিক, সার বা সেচ খরচ দিয়ে যা দাঁড়াল তার থেকে কম দামে তাদের আলু বিক্রি করা লাগছে। এজন্য এসব ক্ষতির হাত থেকে কৃষকদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তা না হলে আমাদের অর্থনীতির জন্য আরো খারাপ সময় অপেক্ষা করছে। 

এমনিভাবে ধানের কাক্সিক্ষত দাম না পেয়ে হতাশ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকরা। কারণ চাষের জন্য প্রয়োজনীয় সব কৃষি উপকরণ ও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে তাদের ধান উৎপাদন করতে খরচ বেশি হচ্ছে। ফলে বর্তমান বাজারে যে দামে ধান বিক্রি করছে তাতে তাদের উৎপাদন খরচই অনেক সময় উঠছে না। আবার দেখা গেছে, ধানের দাম কমে গেলেও বাজারে চালের দামে আগুন। মধ্যস্বত্ব ভোগীদের সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে বাজারে এমন অবস্থা বারবার তৈরি হয়। কিন্তু এ থেকে উত্তরণের পথ আমরা এখনো খুঁজে বের করতে পারিনি। যার ফলে ফসল উৎপাদনের কাজে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে থাকা কৃষকরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এজন্য তাদের জীবনমানের উন্নয়নে সরকারের আরো পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। তাদের দিকে সুনজর দেওয়া দরকার। 

বর্তমান বাজারে তাকালে দেখা যায়, প্রতি বছর সার এবং কীটনাশকের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। নানা অব্যবস্থাপনার কারণে কৃষকদের অতিরিক্ত দামে সার এবং কীটনাশক ক্রয় করা লাগছে। এছাড়া বর্তমান সময়ে তুলনামূলক বেশি মাত্রায় পোকামাকড় ফসলে আক্রমণ করছে। যার কারণে ফসল রক্ষা করতে গিয়ে উৎপাদন খরচ আরো বেড়ে যাচ্ছে। আবার দেখা যায়, ডিলার এবং স্থানীয় সিন্ডিকেট অনেক সময় কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বেশি দামে সার বিক্রি করে থাকে। যা কৃষকের জন্য খুব খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। যেহেতু এদেশের স্বল্পশিক্ষিত মানুষ বা একেবারে লেখাপড়া না জানা মানুষগুলো কৃষির সঙ্গে জড়িত সেহেতু তারা তাদের অধিকার বা এসব সংকট নিয়ে কথা বলতে পারে না। 

তারা আন্দোলন সংগ্রাম করতে পারে না। এজন্য তারা যেন ফসল উৎপাদনে নিরুৎসাহিত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রয়োজনে সার, কীটনাশকসহ ফসল উৎপাদনে ব্যবহারিত প্রয়োজনীয় সব উপকরণের দাম কমিয়ে আনতে ভর্তুকির পরিমাণ বাড়াতে হবে। প্রতি বছর আমাদের বার্ষিক বাজেটে কৃষি খাতের জন্য আরো বরাদ্দ রাখতে হবে। উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা সহনশীল জাতের আবাদ বাড়ানোর দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কৃষকদের সহজ শর্তে এবং কম সুদে ঋণ প্রদান করতে হবে; যাতে তারা ফসল উৎপাদন করতে গিয়ে মহাজনি বা বেশি সুদে ঋণ নিয়ে দিশেহারা হয়ে না পড়ে। উচ্চ ফলনশীল বীজ এবং কৃষি খাতে গবেষণা বাড়াতে হবে; যাতে জলবায়ু-সহনশীল ও রোগ প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবন করে ফসল উৎপাদন বাড়ানো যায়। আশা রাখি, কৃষিপণ্য গুদামজাতকরণ ও রপ্তানির জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তুলতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর আরো আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করবে। পাশাপাশি কৃষকদের সমস্যা বা সংকটের কথাগুলো যাতে মাঠ পর্যায় থেকে উঠে আসে তার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। 

লেখক : তরুণ কলাম লেখক

কেকে/এআর
মতামত লিখুন:

সর্বশেষ সংবাদ

সরকারের টাকায় নিজস্ব বাহিনী গড়ছেন আসিফ
আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম
চোর সন্দেহে মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা
একাত্তরে এই দেশের মানুষ জামায়াতকে দেখেছে : আমিনুল হক
আজকের আলোচিত ছয় সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

বাঞ্ছারামপুরে বেড়েছে ছিঁচকে চোরের উৎপাত, আতঙ্কে শহরবাসী
আঁওড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে স্বামী-স্ত্রীসহ তিনজনের নিয়োগ জালিয়াতি ফাঁস
যারা রাজনীতিতে ধর্মকে ব্যবহার করতে চায় তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে
ফটিকছড়িতে বন্দুক উদ্ধার করে প্রশংসায় ভাসছেন গ্রাম পুলিশ
কমলগঞ্জ প্রেসক্লাবের নেতৃত্বে শাওন-আলম

খোলা মত ও সম্পাদকীয়- এর আরো খবর

সম্পাদক ও প্রকাশক : আহসান হাবীব
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : বসতি হরাইজন, ১৭-বি, বাড়ি-২১ সড়ক-১৭, বনানী, ঢাকা-১২১৩
ফোন : বার্তা-০২২২২২৭৬০৩৭, মফস্বল-০২২২২২৭৬০৩৬, বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন-০২২২২২৭৬০২৯, ০১৭৮৭৬৯৭৮২৩, ০১৮৫৩৩২৮৫১০ (বিকাশ)
ই-মেইল: [email protected], [email protected]

© 2025 Kholakagoj
🔝
close