গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে গরু চোর সন্দেহে মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করেছে স্থানীয়রা।
শনিবার (১ নভেম্বর) সকালে উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের নবাবগঞ্জ গ্রামের তিস্তার চরে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, নিহতের নাম মো. আব্দুস সালাম। তিনি একই ইউনিয়নের রামডাকুয়া গ্রামের মো. ওমেদ আলীর ছেলে। এ ঘটনায় জড়িত দুলালী বেগম নামে এক নারীকে আটক করেছে পুলিশ। তিনি বেলকা নবাবগঞ্জ গ্রামের আব্দুল গণি মিয়ার স্ত্রী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাত আড়াইটার দিকে আব্দুস সালাম স্থানীয় এক ব্যক্তির গোয়াল ঘরে প্রবেশ করলে গৃহবধূ দুলালী বেগম তাকে ধরে ফেলে স্বামী ও প্রতিবেশীদের খবর দেন। পরে তারা সালামকে বেঁধে বেধড়ক মারধর করে। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে পুকুরে বেঁধে রাখা হয় এবং পরে আবারও নির্যাতন চালানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
খবর পেয়ে সুন্দরগঞ্জ থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায় এবং অভিযুক্ত দুলালী বেগমকে আটক করে।
অভিযুক্ত আব্দুল গণি মিয়া জানান, কয়েকদিন আগে আমার একটি শ্যালো মেশিন হারিয়েছে। রাতে যখন গোয়ালে গিয়ে সালামকে দেখতে পাই, তখন প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনকে খবর দিই। পরে তারা এসে মারধর করেছে।
অভিযুক্ত দুলালী বেগম বলেন, ‘একসপ্তাহ আগে মেশিন হারাইছে। হামার দুইটা মানুষের খাওয়া-দাওয়া, ঘুম নাই। রাইতে গোয়াল ঘরে শব্দ শুনি স্বামীক ওঠে পাঠে দেই, তাই যায়া দেখে চোর গরুর ধরি খুলছে। পরে মুই বাড়ির আশপাশের লোকজন আর ভাগিশরিকদের খবর দেই। ওমরাগুলে আসিয়ে কিল-ঘুষি দেয়। যাই আসছে তাই একটা করি মাইরছে। লোকটা সকালে ঠাণ্ডাত কাপতে কাপতে মরি গেইছে। এখন মরছে কাই কি করবে হামার! হামার যখন মেশিন হারাইছে তখন তোমরাগুলো আসছিলেন।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক প্রত্যক্ষদর্শী নারী জানান, ‘রাতে দুলালী বেগম এসে আমাদের ডাকাডাকি করছিল। আমরা তার ডাক না শোনায় তিনি লাঠি দিয়ে আমাদের জানালায় আঘাত করেন। তখন আমি উঠে গিয়ে দেখি, সালাম নামের ওই লোকটাকে বেঁধে রাখা হয়েছে। দুলালী বেগম তার স্বামীর হাতে বেকি (ধারালো অস্ত্র) তুলে দিয়ে মারতে বলছিলেন। এরপর গণির ভাগিশরিকরা এসে লোকটাকে বেধড়ক পিটাতে থাকে।’
স্থানীয়রা জানান, নিহত সালাম দীর্ঘদিন ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। তিনি মানুষের বাড়িতে কাজ করে খেতেন এবং কখনও চুরির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তারা অভিযোগ করেন, সালামকে পরিকল্পিতভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। নিহতের ছোট ছোট তিনটি ছেলে সন্তান রয়েছে, বাবাকে হারিয়ে তারা এখন নিঃস্ব ও অসহায় হয়ে পড়েছে।
এদিকে, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন গাইবান্ধা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ-সার্কেল) বিদ্রোহ কুমার কুন্ডু, সুন্দরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল হাকিম আজাদ এবং বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিলুল্যাহ।
সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাকিম আজাদ বলেন, “ঘটনার তদন্ত চলছে। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কেকে/ আরআই